আবরার আবদুল্লাহ
চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া বাড়িগুলোর সাথেই লাগোয়া চুড়িহাট্টা জামে মসজিদ। এই মসজিদেই অবস্থিত চুড়িহাট্টা হাফেজিয়া মাদরাসা। আগুনে মসজিদের সামনে ডানে-বামে ও সামনের ভবনগুলো ভয়াবহ রকম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মসজিদের উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়নি এবং নিরাপদে সরে যেতে পেরেছেন চুড়িহাট্টার হাফেজিয়া মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা।
এভাবে মসজিদ-মাদরাসা ও মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রক্ষা পাওয়াকে আল্লাহর বিশেষ কুদরত বলেই মনে করেন চুড়িহাট্টা মসজিদের ইমাম হাফেজ মুফতি নাঈমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, একটা খালি জায়গার একদিকে মসজিদ এবং তিনদিকে বাড়ি। তিনদিকের তিনটি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও আল্লাহ তার ঘরকে রক্ষা করেছেন। আপনি আশ্চর্য হবেন, আগুনের তাপে মসজিদের সিলভারের গেট গলে গেছে কিন্তু আগুন লাগেনি। এটা আল্লাহর নিদর্শন না?
তিনি আরও জানান, চুড়িহাট্টা জামে মসজিদের উপর তলায় একটি হাফেজিয়া মাদরাসা রয়েছে। হিফজখানায় ৩০ জন শিক্ষার্থী ও ২ জন শিক্ষক রয়েছেন। আল্লাহর রহমতে তারা সবাই সুস্থ ও নিরাপত্তার সাথে মাদরাসা থেকে বের হতে পেরেছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের সময় মাদরাসায় কতোজন ছাত্র-শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন তিনি তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা মসজিদের ছাদ দিয়ে অন্য বাড়ির ছাদ হয়ে নিরাপদে নেমে যান। স্থানীয় মানুষ ও উদ্ধার কর্মীরা তাদের ছাদ পার হতে সহযোগিতা করেন।
মুফতি নাঈম বলেন, আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর আমরা কেউ ধারণা করিনি মসজিদ রক্ষা পাবে। অগ্নিকাণ্ডে তুলনামূলক দূরের বাড়ি পুড়লেও মসজিদটি রক্ষা পেয়ে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডে মসজিদের ক্ষতির মধ্যে হয়েছে, গেট গলে যাওয়া, আগুনের তাপে কয়েক টুকরা টাইলস উঠে যাওয়া এবং আশ্রয় প্রার্থীদের ছোটাছুটিতে মসজিদের কার্পেট ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তবে মসজিদের মৌলিক অবকাঠামোতে কোনো ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশে হাজী ওয়াহেদ মিয়ার বাড়িতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে আশপাশের আরও চারটি ভবনে ভয়াবহভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
আগুনের উৎসের কথা উল্লেখ করে পুলিশের আইজিপি বলেন, একদিকে তো সেখানে রাসায়নিক গুদাম, তার ওপর ওই ভবনের সামনে কয়েকটি গাড়ি ছিল, যেগুলো গ্যাসে চলে। এই আগুনের কারণে গাড়িগুলো বিস্ফোরিত হয়। আরেকটি গাড়ি ছিল, যার ভেতর ছিল অনেকগুলো সিলিন্ডার। ওই সিলিন্ডার হয়তো আশপাশের বাড়িতে ও হোটেলে গ্যাস সরবরাহের জন্য ছিল। ওই গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এ কারণে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যায়। আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট কাজ করছে। এ ছাড়া তিনটি হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর থেকে পানি দেওয়া হয়েছে আগুন নেভানোর জন্য।