ফেসবুক আপডেট ২০২১ : যেভাবে এগিয়ে নেবেন আপনার ব্যবসায়িক ফেসবুক পেজ

আরিফুল ইসলাম | ফেসবুক মার্কেটিং এক্সপার্ট


আধুনিক বিজনেসে সোশ্যাল মিডিয়া প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে, নতুন কাস্টোমার আনার ক্ষেত্রে এবং তাদের আবার ফেরত আনার ক্ষেত্রে যাকে আমরা রিটারগেটিং বলে থাকি।
বিজনেসম্যানদের জন্য দুঃখজনক হলেও সত্যি ফেসবুক বারবার তাদের নিউজফিড এলগোরিদম পরিবর্তন করেছে, এই পরিবর্তনে কিছু কন্টেন্ট অগ্রাধিকার পেয়েছে, যেখানে কিছু ছোট কোম্পানি যাদের কোন বিজনেস রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট প্রসেস নেই তারা পড়েছে সব থেকে কঠিন সময়ে।

কিছু জিনিস বের করার চেষ্টা করা হয়েছে যা বড় ছোট সব কোম্পানির জন্যই কাজে লাগবে আশা করা যায়।

প্রথমেই জানা লাগবে ফেসবুক এলগোরিদম কি

একদম সহজ ভাষায় বলতে হলে ফেসবুক এলগোরিদম হচ্ছে ফেসবুক ইউজার ফেসবুকে প্রবেশ করার পর যা দেখে থাকে সেটা কিভাবে দেখবে সেটার নিয়ম।

 

এটা সাধারণভাবে ৪টা ব্যাসিকের উপর কাজ করে থাকে

১। ইনভেন্টরি– ফেসবুকের সব কন্টেন্টকে রিপ্রেজেন্ট করে যা ফেসবুক ইউজারের নিউজফিডে দেখানো হয়ে
থাকে।

২। সিগনাল– এটা ফেসবুককে সিগন্যাল দেয় যে কোথায় কোন কন্টেন্ট দেখানো লাগবে, যেটার আবার কিছু নিয়ম
আছে এবং সব থেকে শক্তিশালী নিয়মগুলা হচ্ছে
– লাইক, কমেন্টস এবং শেয়ার হতে হবে ইউজারের পোস্টে
– পাবলিশার কন্টেন্টে এঙ্গেজমেন্ট থাকতে হবে বন্ধু এবং মেসেঞ্জার শেয়ারের মাধ্যমে।
– ভিডিওর কমেন্টের রিপ্লাই (যেটা ইউটিউবেও আছে)

৩।প্রিডিকশন্স– এখানে ফেসবুক সিদ্ধান্ত নেয় যে সে কার প্রোফাইল অনুযায়ী কাকে কি পোস্ট দেখাবে, সে যদি
ফ্যাশন সম্পর্কিত পোস্টে বেশি এঙ্গেজ থাকে তাহলে তাকে সেটাই দেখানো হবে বেশি।।

৪। স্কোর- ফেসবুকের প্রতিটা ব্যাপারে স্কোর আছে, ছবি অথবা ভিডিও কোয়ালিটিতে স্কোর, সেখানে কতটুকু
এঙ্গেজ হলো সেটার ভিত্তিতে স্কোর, কন্টেন্ট লেখার উপর স্কোর, অ্যাড পারফর্মেন্সের উপর স্কোর,
আপনার স্কোর যত ভালো হবে তত সম্ভাবনা থাকবে আপনার অ্যাড ভালো চলার।

কেন ফেসবুক সিদ্ধান্ত নিলো তারা মিনিংফুল কন্টেন্টকে বেশি অগ্রাধিকার দিবে

ফেসবুক এখন যেটা করতে চাইছে সেটা হচ্ছে তারা ফেসবুক ইউজারদের কে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রাধান্য
দিবে, অন্যভাবে বলতে গেলে তারা Quantity এর থেকে quality কে বেশি প্রাধান্য দিবে। এখানে যারা বিজনেস করছেন তাদেরকে নতুন করে চিন্তা করা লাগবে তারা কি করবে এখন, বড় করে অডিয়েন্স নির্বাচন হয়তো ঠিক আছে তবে নিছক এবং অপ্রয়োজনীয় পোস্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

অবশ্যই ফেসবুকের নতুন এলগোরিদম বিজনেসের জন্য কঠিন হয়ে গেছে, নিউজফিড পরিবর্তনের পর এটা
লক্ষ্য করা গেছে, ২০১৮ থেকেই পাবলিশাররা অরগানিক রিচ কিভাবে কমে গেছে সেটা দেখতেই পেয়েছে এবং পাচ্ছে।
এটা থেকে মুক্তি পেতে এবং ব্র্যান্ড পোস্টকে একটু কম প্রাধান্য দিয়ে কিছু পোস্ট জেনারেট করতে হবে যেটাতে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার বেশি হয়।

নিচে আরো কিছু টিপস দেয়া হলো

চমৎকার কন্টেন্ট বানান, এবং শেয়ার করেন

মার্কেটিং এর সবথেকে সেরা স্ট্র্যাটেজিই হচ্ছে চমৎকার কন্টেন্ট। আপনি কি মানুষকে আপনার ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে চান? তাহলে আপনার পেজকে এমনভাবে সাজান যেন আপনার ক্লায়েন্ট সেটাতে ভ্যালু খুঁজে পায়, উপকারী ব্লগ পোস্ট, বিভিন্ন রকম গাইড লাইন এবং ভালো মানের ভিডিও।
আপনি কি চাইছেন মানুষ আপনার অনলাইনে স্টোর থেকে প্রোডাক্ট কিনুক? তাদেরকে কিছু ফিচার প্রভাইড করেন যেটা তাদের জন্য সহজ হয় এবং মজাদার হয়, প্রোডাক্ট ভিডিও দেন,
আকর্ষণীয় ছবি দেন এবং বায়ারের রিভিউ শেয়ার করেন।

আপনার ক্রেতা কারা সেটা জানার চেষ্টা করুন

আপনার ক্রেতাকে নিয়ে গবেষণা করলে যেটা লাভ হবে আপনার সেটা হচ্ছে আপনি কি কন্টেন্ট বানাবেন সেটা বুঝতে পারবেন, সব বয়সীদের জন্য কন্টেন্ট একরকম হবে না এটাই স্বাভাবিক তাই আপনার ক্রেতা কারা এটা আগে বুঝুন এরপর তাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট পাবলিশ করুন, মনে রাখবেন কন্টেন্ট মানেই শুধু সেল পোস্ট না।

নিয়মিত পোস্ট করুন তবে অগণিত নয়

কিছু মিথ আছে যে আপনাকে প্রতিদিন দুইটা পোস্ট করা লাগবে অথবা সপ্তাহে একটা পোস্ট এগুলা ঠিক নয়।
কিছু গবেষণায় অবশ্য দেখা গেছে অনিয়মিত পোস্টে ক্লিক বেশি হয় তবে সেটাও নির্ভর করে আপনার পেজে কতজন ফলোয়ার আছে এবং তারা কেন এই পোস্টটি দেখবে সেটার উপর।

সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ

একটা সফল ফেসবুক পোস্টের আরেকটা পয়েন্ট হচ্ছে সময়, আপনি আপনার ফেসবুক ইনসাইট থেকে দেখে
নিতে পারেন কোন সময়ে আপনার পোস্ট বেশি এঙ্গেজ হয়। তবে আপনি যদি মধ্য দুপুরের অডিয়েন্স ধরতে
চান তাহলে লক্ষ্য রাখবেন সঠিক সময়ে পোস্ট করতে, একটু আগেও না, পরেও না, সে ক্ষেত্রে আপনি শিডিউল
পোস্ট ফিচার ব্যবহার করতে পারেন।

এঙ্গেজমেন্ট বেইট বাদ দিতে হবে

একটা ভালো সুযোগ থাকে যেখানে আপনাকে প্রচুর পরিমাণ পোস্টের সম্মুখীন হতে হয় যেগুলি সম্পর্কিত পোস্টের থেকে স্পামিং ই বেশি, এটার ফলে আপনার পেজ ফেসবুকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে। তাহলে কি করবেন?
কিছু টিপস পয়েন্ট আকারে দেয়া হলো-

১। হ্যাশট্যাগ কম ব্যবহার করুন, আসলে হ্যাশট্যাগ মূলত কাজে লাগে যখন কেউ সেই ট্যাগ লিখে সার্চ করে,
তবে ফেসবুকে এটা খুব জনপ্রিয় না যেটা ইন্সটাগ্রামের খুব জনপ্রিয় তবে আপনি যদি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার
করেন তাহলে কম এবং সম্পর্কিত হ্যাশট্যাগ ব্যাবহার করতে পারেন

২। এমন পোস্ট দিন যেটাতে মানুষ সংযুক্ত হতে পারে, ফেসবুক তাদের এলগোরিদমে বলেছে যে
“page posts that generate conversation between people will show higher in News Feed.”
বুঝতেই পারছেন যে পোস্টে মানুষ বেশি সংযুক্ত থাকবে সেটা নিউজফিডের উপরের দিকে থাকবে।

৩। তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করবেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে কেউ একজন আপনাকে একটা কমেন্ট
করলো অথবা ম্যাসেজ সেন্ড করলো সেটার উত্তর আপনি কতটা তাড়াতাড়ি দিতে পারলেন, কিভাবে এটা
গুরুত্বপূর্ণ।

ধরেন কেউ একজন আপনার একটা পোস্টে কমেন্ট করে কিছু জানতে চাইছে, প্রাথমিক ভাবে ফেসবুক বুঝে ফেলল যে এই পোস্ট টা এঙ্গেজ হচ্ছে, এরপর আপনি যদি তাড়াতাড়ি উত্তর দেন এবং যে কমেন্ট করেছে সেও আবার রিপ্লাই দেয় তাহলে ফেসবুক স্পষ্ট ভাবে সিগন্যাল পাবে যে এটা ভালো পোস্ট এটাকে প্রমোট করা যায়।

ফেসবুক অ্যাড নিয়ে কিছু কথা

কথাটা কঠিন শোনালেও সত্যি যে ফেসবুক অ্যাডের খরচ বেড়েই চলেছে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে এটা হচ্ছে ইউজারের ফেসবুকের সময় কাটানোর ব্যাপার নিয়ে, ইউজার যদি ফেসবুকে কম সময় কাটায় তাহলে
ইম্প্রেশন কমে যাবে এবং অ্যাডের খরচ বেড়ে যাবে।

এছাড়া আরো কারণ আছে অবশ্যই যেমন মৌসুম, আপনি যে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস নিয়ে কাজ করছেন সেটা, আপনার লোকেশন, তাই যেখানে ফেসবুক অ্যাডের খরচ বেড়ে যাচ্ছে সেখানে অরগানিক ভাবে কি করে এঙ্গেজমেন্ট আনা যায় সেদিকে চিন্তা করাই উচিৎ হবে, বাজেট বাড়াতে পারলে বাড়ান তবে সাথে অরগানিক মার্কেটিংটাও করা লাগবে।

এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই যে ফেসবুক এখন আমাদের জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে গেছে, এটার মাধ্যমে অনেকে উপকারিতা পাচ্ছে এটাও সত্যি কথা, তাই মার্কেটারের জন্য উচিৎ হবে ফেসবুকে কাজ করা ফেসবুকের মত করে, মানে হচ্ছে ফেসবুকের নিয়ম বুঝে এবং সুখবর হচ্ছে এই নিয়মগুলা মানা একদমই সহজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *