ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামের আগমন ও পবিত্র কোরআনের প্রচার-প্রসারের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউউ)১০ মিলিয়ন ইউরো বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ গবেষণা কাজ সম্পাদনের জন্য স্প্যানিশ গবেষক এবং ইতিহাসবিদ মার্সিডিজ গার্সিয়া ইরিনালকে নির্বাচন করেছে। ‘ইউরোপে কোরআন’ শিরোনামে চলমান গবেষণাটি সম্পন্ন করতে ছয় বছরের মতো সময় লাগবে। গবেষণায় কয়েকজন ইতিহাসবিদ, প্রত্নতত্ববিদ ও ভাষাবিদ একযোগে কাজ করবেন।
মার্সিডিজ গার্সিয়া ইরিনাল এ বিষয়ে বলেন, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- কীভাবে কোরআন যা বিদেশি জাতির প্রতীক, ইউরোপীয় দেশসমূহের চিন্তা ও সংস্কৃতিতে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, ইউরোপের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিশদভাবে এ অঞ্চলে ইসলাম ও কোরআনের আগমন ঘটে। তবে এর আগে থেকেই এসব এলাকায় মুসলমানদের অস্তিত্ব ছিল।
স্পেনের এই ইতিহাসবিদ আরও বলেছেন, ল্যাটিন ভাষায় সর্বপ্রথম ১২ শতাব্দীতে কোরআন অনুবাদ করা হয়। খ্রিস্টানের ফ্রান্সিসকান ও ডোমিনিক সম্প্রদায় তখন পবিত্র কোরআনের অনুদিত এই পাণ্ডুলিপিটিকে ইসলামের বিরুদ্ধে বিপ্লবের জন্য ব্যবহার করেছিল। এর মাধ্যমে তারা বোঝাতে চেয়েছে, পবিত্র কোরআনের বার্তাসমূহ মিথ্যা এবং অসঙ্গতিপূর্ণ। যা সম্পূর্ণ ভুল। আদতে কোরআনের অলৌকিকত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা শুধু এ এলাকায় কোরআন প্রচারের শেকড়টা খুঁজে বের করতে চাই।
বিষয়টি ইসলামি স্কলাররা সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পবিত্র কোরআনের সূরা আন নিসার ৮২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তবে কি তারা কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে আসত, তাহলে তাতে অবশ্যই তারা অনেক অসংগতি (দেখতে) পেতো।’
বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা মানুষকে মহাগ্রন্থ কোরআনে কারিম নিয়ে চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনের সন্দেহাতীত রহস্যাবলি, সুবিন্যস্ত ও সুসংহত বিষয়বস্তু আর আলংকারিক বর্ণনা শৈলীর সৌন্দর্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে তিনি নিষেধ করেছেন।
ইসলামের সত্যতা নিরূপণে এবং ঈমানের পরিপক্বতা অর্জনে কোরআনে কারিম নিয়ে অব্যাহত চিন্তাভাবনা ও গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। আয়াতে আল্লাহতায়ালা কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার জন্য মানবজাতিকে আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তবে কি তারা কোরআন সম্পর্কে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ হয়ে আছে?’ – সূরা মুহাম্মদ: ২৪
কোরআন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা ও গবেষণা-পর্যালোচনার অধিকার সবার রয়েছে। চিন্তাভাবনা ও গবেষণা-পর্যালোচনার স্তরভেদ রয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্যক জ্ঞানের পাশাপাশি কোরআন-হাদিস সম্পর্কে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িনের ব্যাখ্যা-মতামত জানা, আরবি ভাষার শব্দ, বাক্য, ব্যাকরণ, ছন্দ ও অলংকারশাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন জরুরি। এ ছাড়া পূর্ববর্তী কোরআন ব্যাখ্যাদাতাদের পদাঙ্ক অনুসরণ, উম্মাহের মীমাংসিত বিষয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা। এ সব বিষযে কোনো জ্ঞান না থাকলে কিংবা স্বল্প পরিমাণ থাকলে তার কোরআন নিয়ে গবেষণা গ্রহণযোগ্য নয়।