বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানদের দেশ ইন্দোনেশিয়াতে আজান ছাড়া মসজিদের মাইকে অন্য কোনও শব্দ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে মানুষ যখন ঘুমাচ্ছে, বিশ্রাম নিচ্ছে অথবা নামাজ পড়ছেন। একই সঙ্গে নামাজের সময় মাইকের শব্দ না বাড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। মালয়েশীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার এ খবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার ধর্ম মন্ত্রণালয় আজান বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। এতে দেশটির মসজিদগুলোতে কিভাবে আজান দেওয়া হবে তা সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে।
আজানের উচ্চ শব্দ নিয়ে অভিযোগ করায় এক নারীকে কারাদণ্ড দেওয়ার সমালোচনার সময় ইন্দোনেশিয়ার ধর্ম মন্ত্রণালয় এসব নির্দেশনা জারি করলো। ২৪ আগস্ট এসব নির্দেশনা জারি করা হয়। ছয় দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-
১। মসজিদের মাইক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে পরিচালনা করতে হবে যাতে করে আজানের শব্দ মানুষের মনে মসজিদের প্রতি সম্ভাব্য বিদ্বেষ তৈরি না করে।
২। যারা আজান দেবেন তাদের অবশ্যই সমধুর ও ভালো কণ্ঠের অধিকারী হতে হবে।
৩। নামাজের সময় শব্দের মাত্রা বাড়ানো যাবে না।
৪। মানুষ যখন ঘুম, বিশ্রাম ও নামাজ আদায় করছে তখন আজান ছাড়া কোনও ধরনের শব্দ প্রচার করা যাবে না।
৫। আজানকে অবশ্যই মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে। হতে হবে সমধুর ও কানের জন্য শ্রুতিমধূর।
৬। অবশ্যই উপযুক্ত সময়ে আজান দিতে হবে। যেমন: ভোরে। কোরান তেলাওয়াতে মসজিদের ভেতরের স্পিকার ব্যবহার করতে হবে।
সম্প্রতি দেশটিতে আজানের উচ্চস্বর নিয়ে অভিযোগ করায় মেলিয়ানা নামের নারীকে ধর্ম অবমানায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে তার বাড়ির পাশের মসজিদে উচ্চস্বরের আজান নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু গুজব ছড়ায় মেলিয়ানা আজান নিষিদ্ধ করতে চাইছেন। অনেক মুসলিম তখন বৌদ্ধদের মন্দিরে হামলা চালায়। ১৯৯৮ সালে চীনবিরোধী সহিংসতার পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংঘাত।
মেলিয়ানার কারাদণ্ডের পর সিভিল সোসাইটি ও আইনজীবীরা রায়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংগঠন নাহদাতুল উলামা শুক্রবার ঘোষণা দিয়েছে, মাইকের আজানের উচ্চস্বর নিয়ে আপত্তি জানানো ধর্ম অবমাননার আওতায় পড়ে না। বরং এরকম আপত্তিকে গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবেই দেখা উচিত।
প্রায় চার কোটি সদস্যের সংগঠন নাহদাতুল উলামার আইন বিভাগের প্রধান রবিকিন এমহাস বলেছিলেন, মাইকে দেওয়া আজানের শব্দ অনেক বেশি, এমনটা বললে তাকে ধর্ম অবমাননা হিসেবে গণ্য করা যায় না। বরং ইন্দোনেশিয়ার মতো একটি বহুত্ববাদী সমাজে এমন অভিযোগকে মুসলমানদের গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবেই দেখা উচিত।