মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। যিনি কুরআনের মাধ্যমে মানুষকে সম্মানিত করেছেন, মাহে রমজানকে কুরআন নাজিলের মাস হিসেবে নির্ধারিত করেছেন এবং এ রমজানকে মানুষের মুক্তির জন্য বিশেষায়িত করেছেন।
রমজান ইবাদতের মাস। নেকি অর্জনের সর্বোত্তম সময় ও ভাগ্যে জান্নাত লিখিয়ে নেয়ার মাধ্যম। কেননা হাদিস শরিফে রমজানে ইবাদতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে, রমজানে মানুষের নেকির পরিমাণ পাঁচশো গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। সুতরাং একটি বিনিময়ে পাঁচশো নেকি পাওয়া যাবে। আর পাঁচশো নেকির বিনিময়ে আড়াই লক্ষ নেকি তার আমলনামায় দেয়া হবে।
এ হাদিস ছাড়াও বিভিন্ন রেওয়াতে কম বেশি নেকির কথা উল্লেখ রয়েছে। যেসব হাদিস রমজানের ফজিলত বুঝাতে দলিল হিসেবে চিহ্নিত।
আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সমাজে মানুষ নেকি অর্জনের চেষ্টা করে থাকে। শ্রম, টাকা, প্রচেষ্টা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ নেকি অর্জনের চেষ্টা করলেও কখনো কখনো এ দান, সদকা তার পরিপূর্ণ উপকারে আসে না। কারণ মানুষ নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচাতে পারেনি। কিছু কিছু গুনাহ এমন- যা আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। নেকির ভাণ্ডারে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর সেই নেকি তার কোনই কাজে আসে না।
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও পুণ্য অর্জন করা- এ দু’টির আলাদা আলাদা ফজিলত থাকলেও নিঃসন্দেহে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা বা পরহেজগারিতা আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। এ সম্বন্ধে একটি শ্লোক- কুওয়াতে নেকি নাদারি বদ মকুন। অর্থাৎ যদি নেকি অর্জনের সক্ষমতা বা সুযোগ না থাকে, তাহলে অন্তত গুনাহের কাজ করো না।
এ রমজানে মানুষের ভেতর নেকির প্রতিযোগিতা দেখা গেলেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা সেভাবে লক্ষ্য করা যায় না। অথচ এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
আমাকে যদি রমজানে ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, আমি বলবো সর্বপ্রথম গুনাহ থেকে বাঁচুন। বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়ুন, তারাবি ও রোজা নিয়মমাফিক আদায় করুন। আর যেহেতু এটা কুরআন নাজিলের মাস, তাই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করুন। হাদিস শরিফে এসেছে, সর্বোত্তম ইবাদত হলো তেলাওয়াতে কুরআন। সুতরাং যত বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা যায়, তত বেশি লাভ।
মুক্তি পাওয়ার জন্য খুব বেশি আমল সবসময় কাজে আসে না। মুক্তি পাওয়ার জন্য অহংকারমুক্ত সামান্য আমলই যথেষ্ট। তাই বন্ধুদের প্রতি বিশেষ আহ্বান থাকবে, গুনাহমুক্ত রমজান অতিবাহিত করুন। সফলতা এতেই নিহিত।
আরেকটি বিষয় হলো, রমজানে আমাদের সমাজে ধোঁকা ও প্রতারণা বৃদ্ধি পায়। বারো মাস যতটুকু স্বচ্ছতা থাকে, রমজানে তার পরিমাণ আরো কমে যায়।
খাদ্যে ভেজাল, পরিমাণ-পরিমাপে হেরফের এগুলো এখন রমজানের প্রতিদিনকার চিত্র হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীদের টার্গেট এখন রমজান। এগারো মাসের লোকসান রমজানে আদায় করা হয়। যেই পণ্যটির দাম রমজানের বাইরে ১০০ টাকা, সেটাই রমজানে ক্রয় করতে হয় ১৫০ টাকা দিয়ে। কখনো কখনো তারচেয়েও বেশি।
এতে বিত্তবানদের খুব অসুবিধা না হলেও দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর জুলুম হয়। আধুনিক বিশ্বের মুসলিম কান্ট্রিগুলোতে রমজানে মূল্য হ্রাসের প্রতিযোগিতা হয়। কে কতো বেশি ছাড় দিতে পারে- এনিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়। অথচ আমাদের দেশে সারাবছরের দিগুণ দাম হয়ে যায় এ রমজানে।
আমাদের একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, দেশের সবার ক্রয়ক্ষমতা সমান নয়। উপার্জনের নানা শ্রেণি রয়েছে। সবার দিকে লক্ষ্য রেখে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। ইসলাম সকলের বিষয় বিবেচনা করে বিধান আরোপ করে।
আমি সকল মুহিব্বিনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাবো, রমজানে পণ্যের দাম দরিদ্র মানুষের ক্রয় সীমানার ভেতরে রাখুন। এতে সমাজে শান্তি আসবে। কেউ না খেয়ে থাকবে না। একটি সোনার সমাজে পরিণত হবে আমাদের সমাজ।
শ্রুতিলিখন, সুফিয়ান ফারাবী