রোযা ঢাল, এই ঢালকে অক্ষুন্ন রাখুন

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক


হাদীস শরীফে এসেছে- الصِّيَامُ جُنَّةٌ অর্থাৎ রোযা হল ঢাল। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৯৪) রোযা গুনাহ থেকে রক্ষাকারী ঢাল। রোযার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া পয়দা হয়। ঈমানী লজ্জা জাগ্রত হয়, যা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার অনেক বড় উপায়। রোযা কবরে, হাশরে এবং আখিরাতের সকল মনযিলে বান্দার জন্য ঢাল। সবশেষে জাহান্নামের আগুন থেকেও রক্ষাকারী ঢাল।

তবে এগুলো তখনই হবে যখন রোযা শুধু আইনী রোযা না হয়ে প্রকৃত রোযা হবে। আইনী রোযা বলতে উদ্দেশ্য হল সঠিক নিয়তের সঙ্গে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রীমিলন এবং ওইসব কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা যা ফিকহ ও ফতোয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে রোযাকে বিনষ্ট করে। কোনো সন্দেহ নেই যে, এটুকুদ্বারা রোযার অপরিহার্যতা থেকে দায়মুক্ত হওয়া যায়, কিন্তু এটুকুদ্বারা রোযা ‘ঢাল’ হয় না। রোযা তখনই ঢাল হয় যখন ঈমান ও ইহতেসাবের সঙ্গে তা আদায় করা হয় এবং রোযার সকল আদব রক্ষা করা হয়।

রোযার আদবগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে এভাবে বলা যায় যে, রোযার হালতে রোযাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ওইসব কাজ পরিত্যাগ করে যা তার জন্য অন্য মাসগুলোতে হালাল ছিল এবং রমযানের রাতেও যা তার জন্য হালাল। এ বিষয়গুলো শুধু এজন্য পরিত্যাগ করে যে, রোযার হালতে এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকার আদেশ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। তাহলে যে সব মন্দ কাজ সব সময়ের জন্য আল্লাহ তাআলা হারাম ও নিষিদ্ধ করেছেন যথা গীবত, শেকায়েত, মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, জুয়া, খিয়ানত, আত্মসাৎ, ঝগড়া-বিবাদ, হারাম পানাহার, নামায না পড়া, সিনেমা, টিভি, ভিসিআর দেখা ইত্যাদি পরিহার করা কি অপরিহার্য নয়? মোটকথা রোযার আদব এটাই যে, হারাম কাজ ও হারাম বিষয়াদি থেকে বিরত থাকবে এবং শুধু দুই অঙ্গ নয়, শরীরের সকল অঙ্গের রোযা রাখবে। মুখ, কান, চোখ এবং হাত-পা সকল অঙ্গকে গুনাহ থেকে পবিত্র রাখবে। যাতে ওই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত না হতে হয় যা ওই দুই মহিলা সম্পর্কে বলা হয়েছে, যারা রোযার হালতে অন্যের গীবত করেছিল। হাদীসটি এই-

إِنَّ هَاتَيْنِ صَامَتَا عَمَّا أَحَلَّ اللهُ لَهُمَا وَأَفْطَرَتَا عَلى مَا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمَا

‘এরা দু’জন ওই কাজগুলো থেকে তো বিরত থেকেছে যা আল্লাহ তাআলা (অন্য সময়) তাদের জন্য হালাল করেছেন, কিন্তু ওইসব কাজ থেকে বিরত থাকেনি যা আল্লাহ তাআলা (সবসময়ের জন্য) হারাম করেছেন।’ -মুসনাদে আহমদ ৫/৪৩১

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই ইরশাদ রোযাদারের সর্বদা স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, ‘যে মিথ্যা, মূর্খতাসুলভ আচরণ ও গুনাহ পরিত্যাগ করে না তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ -সহীহ বুখারী হাদীস ১৯০৩; ইবনে মাজাহ হাদীস ১৬৮৯১; সুনানে কুবরা, নাসায়ী হাদীস ৩২৪৫-৩২৪৮

তদ্রূপ এই ইরশাদও- ‘রোযা শুধু পানাহার ত্যাগের নাম নয়; বরং অশ্লীল ও অর্থহীন কাজ থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি। অতএব কেউ যদি রোযাদারের সঙ্গে ঝগড়া করতে থাকে কিংবা মূর্খসুলভ আচরণ করতে থাকে তখন এ কথা ভেবে নিজেকে নিবৃত্ত রাখবে যে, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার।’ -সহীহ ইবনে খুযায়মা হাদীস ১৯৯৬; সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৩৪৭০

হাদীস শরীফের মূল আরবী পাঠ এই-

لَيْسَ الصِّيَامُ مِنَ الأَكْلِ وَالشُّرْبِ، إِنَّمَا الصِّيَامُ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ، فَإِنْ سَابَّكَ أَحَدٌ أَوْ جَهَّلَكَ عَلَيْكَ فَقُلْ إِنِّيْ صَائِمٌ إِنِّيْ صَائِمٌ

মনে রাখা উচিত যে, রোযা দুনিয়া ও আখিরাতে ঢাল তখনই হবে যখন তাকে অক্ষুণ্ণ রাখা হবে। যদি একে বিদীর্ণ করে ফেলা হয় তবে তো এর মাধ্যমে আত্মরক্ষার সুফল পাওয়া যাবে না। হাদীস শরীফে এসেছে-

الصِّيَامٌ جُنَّةٌ مَا لَمْ يَخْرِقْهَا

‘রোযা ঢাল, যে পর্যন্ত না তাকে বিদীর্ণ করা হয়।’ -সুনানে নাসায়ী হাদীস .. সহীহ ইবনে খুযায়মা হাদীস ১৮৯২

জিজ্ঞাসা করা হল, কীভাবে রোযা বিদীর্ণ হয়ে যায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- بِكَذِبٍ أَوْ غِيْبَةٍ ‘মিথ্যা বললে কিংবা গীবত করলে।’ -তবরানী, আওসাত, হাদীস ৭৮১০

One thought on “রোযা ঢাল, এই ঢালকে অক্ষুন্ন রাখুন

  1. আল্লামা মাওলানা মুফতী শায়েখ সাইয়্যিদ ফখরুদ্দীন আল রাজী ওয়াল হানাফী says:

    আব্দুল মালেকের মত ব্যক্তিরা অহরহ ছবি তুলে কেন তা আমার বুঝে আসে না। আর মাসিক আদর্শ নারীতে আমি অনেক বার পরেছি যে অপ্রয়োজনে যে কোন প্রানীর ছবি তোলা হারাম। আমার আসলে বুঝে আসে না যে ভুলটা আসলে কার। আপনাদের ইসলামী জীবন বিদঘুটে কেন মনে হয়?????? দোষ আসলে কাদের???

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *