মাসিক আদর্শ নারী : নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের দ্বীনী গাইডলাইন

মুহাম্মাদ আসাদুজ্জামান


মাসিক আদর্শ নারী একটি দ্বীনী সাহিত্যবিপ্লবের নাম। ঘরে বসে দ্বীন শেখার একটি অনবদ্য ম্যাগাজিন হচ্ছে মাসিক আদর্শ নারী। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর থেকে মাসিক আদর্শ নারীর যাত্রা শুরু। তত্কালীন সময়ে বর্তমানের মতো এত ব্যাপক পরিসরে মহিলা মাদ্রাসা ছিল না আমাদের দেশে। এখন যেমন আমরা পথে-ঘাটে চলতে ফিরতে হাত-পা মোজাসহ বোরখা পরা মেয়েদেরকে দেখি, সেটাও ছিল বিরল। আলামতারা পর্যন্ত শুদ্ধ করে পড়তে পারার মানুষ ছিলো তখন খুব নগণ্য। হাতে গোনা কিছু ছেলেদের মাদ্রাসা ছিল। সেই মাদ্রাসাসমূহে স্বল্পসংখ্যক ছেলে-পেলে পড়তেন।

আমাদের কৃষিনির্ভর সমাজ। গ্রাম্যজীবনে অধিকাংশ মানুষের আয়ের উৎস কৃষি। কিন্তু তখন ছিলনা কৃষি কাজের তেমন উল্লেখযোগ্য আধুনিক যন্ত্র। তাই লোক প্রয়োজন হতো বেশি, কিন্তু কাজ হতো কম। সর্বপরি সার-কিটনাশক, সেচ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ না থাকা এবং চাষাবাদের সনাতনী পদ্ধতির ফলে বর্তমানের তুলনায় কম ফসল উৎপন্ন হতো আমাদের দেশে। তাই খাদ্য অভাব লেগেই থাকতো। সেই সময়ে কেউ তার সন্তানকে পড়াবেন এটা খুব সাহসের ব্যাপার ছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামান্যকিছু পড়ে আর পড়া হতো না। তারা পেটের দায়ে পিতার সাথে মাঠে কাজ করতেন।

এদেশের মানুষের এমন দুর্দিনে মাসিক আদর্শ নারীর অভিযাত্রা। সে সময়ে যুগের চাহিদানুযায়ী সাধারণ মানুষের দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজন মেটাতে মাসিক আদর্শ নারী সফলভাবে অবদান রেখেছে। তখন দেশের বাংলাশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত মানুষের মাঝে কুসংস্কার, ভুল প্রথা ও শিরক-বিদ‘আত দূর করে সুনিপুনভাবে ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞান বিস্তার করেছে।

এ যুগচাহিদার দ্বীনী খোরাক কাগজের নামটি রাখা হয় মাসিক আর্দশ নারী। মূলতঃ এ নামটি একটি ইসলামী নারীশিক্ষা বিপ্লবের সূচনা। যা ইসলামী আদর্শের ছোঁয়াপ্রেমী নারীজাতিকে তীব্রভাবে নাড়া দিয়েছে। এই কাগজটি তখন আমাদের ভাগ্যবিড়ম্বিত নারীজাতিকে দ্বীনী প্রেরণা দিয়ে জাগিয়ে তুলেছে। ইসলামের দেয়া তাদের অধিকার সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করেছে। নারীর পণ্যায়নের বিরুদ্ধে তখন ব্যাপক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মাসিক আদর্শ নারী। ফলে এর দ্বারা দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্রিক ইসলামী পরিবার ও ইসলামী সমাজ তৈরির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

তাই আজকে আমরা দেখতে পাই, অনেক জেনারেল শিক্ষিত মানুষও ইসলাম শেখার এবং ইসলাম জানার সুযোগ পাচ্ছেন এবং ইসলামের আলোকে তার অধিকার তিনি বুঝে নিতে চাচ্ছেন। এটা নিঃসন্দেহে ভালো দিক। আজ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দ্বীনমনা নারীসমাজ বস্তুবাদী চিন্তা-চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এটা শুধুমাত্র সম্যকভাবে ইসলামকে জানার বা বুঝার কারণেই হয়েছে। তাই আমাদের নারীরা আজ দৃপ্তকণ্ঠে বলছেন, আমরা সমান অধিকার চাই না, আমরা ইসলামপ্রদত্ত ন্যায্য অধিকার চাই। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আল্লাহর দেওয়া ফেসিলিটি চাই।

সময়ের সাথে মাসিক আদর্শ নারী তাদের এই দ্বীনী কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে অনলাইনে কার্যক্রম শুরু করেছে। এ জন্য একটি বলিষ্ঠ ওয়েবসাইট খুলেছে। ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ইসলামের আবেদন সর্বত্র পৌঁছে দিচ্ছে। এভাবে অনলাইন ও অফলাইনে শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মাসিক আদর্শ নারী তার লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলেছে।

এ দেশের মেয়েদের মাঝে শুধু নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মহলে মাসিক আদর্শ নারী ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তাই আজ আমরা পত্রিকাটিকে প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জেও খুঁজে পাই। দেশের ইতিহাসে সম্ভবত এটাই প্রথম কোন মাসিক পত্রিকা–যার নিয়মিত গ্রাহক প্রায় প্রতিটি গ্রামেই পাওয়া যায়।

১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর থেকে অদ্যাবধি মাসিক আদর্শ নারী প্রকাশের মাধ্যমে এর সফল সম্পাদক মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী (দা. বা.) দ্বীনী সংস্কারের যে ডাক দিয়ে যাচ্ছেন, সে ডাকে আজ এদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় দ্বীনী জযবায় উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। এখন শুধু আমাদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে সম্যকভাবে ইসলামকে জানার ও বুঝার সুযোগ করে দেয়া। এ জন্য গ্রামে গ্রামে পাড়ায় মহল্লায় ব্যাপক উদ্যমে শরীয়তসম্মতভাবে তাদের জন্য দ্বীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা যদি এ গণমুখী ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারি, তাহলে এদেশ ইসলামের শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে উর্বর হবে। তখন এদেশে আশাব্যাঞ্জকভাবে রশিদ আহমদ গাঙ্গহী জন্ম নিবে, শামছুল হক ফরিদপুরী জন্ম নিবে, আশরাফ আলী থানবী জন্ম নিবে নিঃসন্দেহে ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *