চাঁদের তোয়াক্কা না করে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ পালন কবীরা গোনাহ ও জঘন্য হারাম

মুফতী-আবুল-হাসান-শামসাবাদী
মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী

২৪-মে ২০২০ রবিবার যারা বাংলাদেশে চাঁদ উদিত না হওয়া সত্ত্বেও ঈদুল ফিতরের নামায পড়েছেন এবং ঈদ উদযাপন করেছেন, তারা কবীরা গুনাহ ও হারাম কাজ করেছেন।

কারণ, তারা মাহে রামাজানের একটি রোযা ইচ্ছাপূর্বক নষ্ট করার কারণে কবীরা গুনাহে মারাত্মক গুনাহগার হয়েছেন। অধিকন্তু তাদের এ ঈদের নামায কিছুতেই সহীহ হবে না। কেননা, তা ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে নামায পড়ার মতো যেমন–ইশার সময় ফজরের নামায পড়ে নিলেন। যা কখনো সহীহ হবে না

তাই এদেশে চাঁদ উঠার পর পরদিন সোমবার তাদের জন্য আবার ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব হয়েছে। আর তখন ঈদের নামায না পড়লে তারা আবার ওয়াজিব তরকের কারণে গুনাহগার হবেন।

উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে তারা সৌদী আরবের সাথে ঈদ পালনের দাবী করেন। অথচ সেই দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবী। কারণ, আজ রবিবার এদেশে ঈদ গণ্য করতে হলে, গতকাল দিবাগত সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সাথে সাথে এদেশে ঈদের কার্যক্রম তথা ঈদরাত্রি শুরু হবে। অথচ তখন সৌদী আরবে তার পূর্বের দিন (তথা ঈদরাতের পূর্বের দিনের জোহরের ওয়াক্ত বিদ্যমান) এবং বার হিসেবে তা শনিবার। সুতরাং তাদের পূর্বে ঈদরাত শুরু করার দ্বারা কখনো তাদের অনুগামী হওয়া সাব্যস্ত হবে না। তদুপরি এদেশে যখন সকাল ৭টায় তারা ঈদের নামায পড়ছেন, তখন সৌদী আরবে রাত ৪টা বাজে। সুতরাং তাদের এ নামায সৌদী আরবের অনুগামী হতেই পারে না। বরং সৌদী আরবের সাথে সাথে অথবা তাদের পরে সেই কাজ করলে তাকে অনুগামী ধরা হবে, অন্যথায় নয়।

সে হিসেবে সৌদী আরবে চাঁদ উঠার পর তার সেদিনের মধ্যে বা তার ২৪ ঘন্টার ভিতরে আমাদের দেশে চাঁদ উঠা গণ্য করলে এবং সে ভিত্তিতে ঈদ উদযাপন করা হলে, তখনই কেবল সৌদী আরবের অনুগামী হওয়া সাব্যস্ত হবে। সেরূপে সৌদীতে চাঁদ উঠার পর আমাদের দেশের আজকের সন্ধ্যা তার অনুগামী হয়। তাই এদেশে সে নিয়মে পরদিন সোমবার ঈদ পালন করলে তা সৌদী আরবের সেই দিনের বা তার ২৪ ঘন্টার ভিতরে হয়ে এদেশের আমল সৌদী আরবের অনুগামী হবে। এভাবে শুধু সৌদী আরব নয়, বরং সারা বিশ্বে এভাবে পূর্ণ দিনের ২৪ ঘন্টা ভিতরে ঈদ পালন করার দ্বারা সারা পৃথিবীতে একদিনে ঈদ পালন করা হয়। পরন্তু এদেশে তখন চাঁদ দেখার কারণে শরয়ীভাবে (চাঁদ দেখে) ঈদ পালন করা বিধিমতো সঠিক হবে। সুতরাং এদেশের জন্য এটাই পালনীয় কর্তব্য।

এভাবে ২৪ ঘন্টার পূর্ণ একই দিনে সারাবিশ্বে রোযা ও ঈদ পালন করা হয়। কিন্তু একই সময়ে সারা পৃথিবীতে রোযা ও ঈদ পালন সম্ভব নয়। কারণ, সারা পৃথিবীতে যেমন একসাথে নামাযের সময় হয় না, তেমনি সারা পৃথিবীতে একসাথে রোযা ও ঈদের সময় হয় না। যেহেতু পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের চাঁদের উদয়স্থলে বিভিন্নতা রয়েছে। যেমন, যখন সৌদী আরবে সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলো, সেসময় দেখা যাবে–অন্য দেশে তখন সকাল ৭টা, আবার কোন দেশে তখন দুপুর ২টা প্রভৃতি৤ এমনি করে সারা পৃথিবীতে চাঁদের উদয়ের সময়ে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্নতা প্রদান করেছেন। পবিত্র কুরআনে সে বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন–

یَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِ  قُلْ هِیَ مَوَاقِیْتُ لِلنَّاسِ وَ الْحَجِّ

“মানুষ আপনাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, সেগুলো মানুষের জন্য (অর্থাৎ তাদের ইবাদত ও লেনদেনের জন্য, বিশেষ করে) হজ্বের জন্য সময়সমূহ নিরূপণের মাধ্যম।

(সূরাহ বাক্বারা, আয়াত নং ১৮৯)

এ আয়াতে চাঁদকে বহুবচনে ব্যবহার করা হয়েছে তার বিভিন্ন স্বরূপের কারণে। এরপর মানুষের নির্ঘন্টিত সময়কেও বহুবচনে ব্যবহার করা হয়েছে সময়ের বিভিন্নতার প্রতি ইঙ্গিত করে। যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ে রোযা বা ঈদ হওয়ার দিকেও ইঙ্গিত বুঝা যায়।

কিন্তু রোযা বা ঈদ শুরু হওয়ার সেই বিষয় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন টাইমে চাঁদ উঠা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে হলেও তা ২৪ ঘন্টার পূর্ণ একদিনের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। এ জন্য পৃথিবীর সকল মুসলমানকে একই সময়ে একসাথে রোযা রাখার নির্দেশ দানের পরিবর্তে পূর্ণ দিনের ২৪ ঘন্টায় সারা পৃথিবীতে যার যার দেশে যখন চাঁদ উঠবে, সেই ভিত্তিতে সেদেশের মানুষের রোযা পালন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন–

فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

ّতোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি (চাঁদ উদয়ের মাধ্যমে) এ মাসটি দেখবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে।”

(সূরাহ বাক্বারা, আয়াত নং ১৮৫)

এ আয়াতে সারা পৃথিবীর মানুষকে একই সময়ে একসাথে রোযা রাখতে বলা হয়নি, বরং যারা যখন সেই মাসের চাঁদ প্রত্যক্ষ করবেন, তাদের জন্য তখন রোযা রাখতে বলা হয়েছে।

তেমনি হাদীস শরীফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন–

إن الله تبارك و تعالى جعل الأهلة مواقيت للناس، فصوموا لرؤيته، وأفطروا لرؤيته، فإن غم عليكم فعدوا له ثلاثين يوما

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা নতুন চাঁদসমূহকে মানুষের জন্য মীকাত (সময় নিরূপণের মাধ্যম) বানিয়েছেন। সুতরাং তোমরা নতুন চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং নতুন চাঁদ দেখে রোযা ছাড়। কিন্তু যদি নতুন চাঁদ তোমাদের উপর (মেঘ-বাদল ইত্যাদির কারণে) অদৃশ্যমান করা হয়, তাহলে চাঁদের ত্রিশ দিন গণনা কর।

(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা : হাদীস নং ৭৩০৬; আস-সুনানুল কুবরা বাইহাকী, ৪র্থ খণ্ড, ২০৫ পৃষ্ঠা/ মুসতাদরাকে হাকিম, ১ম খণ্ড, ৪২২ পৃষ্ঠা : হাদীস নং ১৫৭৯/ সহীহ ইবনে খুযাইমা, ৩য় খণ্ড, ২০১ পৃষ্ঠা : হাদীস নং ১৯০৬)

সুতরাং আজ যারা এদেশে ঈদ উদযাপন করেছেন, তাদের প্রতি নিবেদন করছি–আপনারা তাওবা করে ইসলামের সঠিক পথে ফিরে আসুন। তারা ঈদের পর আজকের রোযার কাজা আদায় করে নিবেন। আর এদেশের হিসেবে আগামীকাল পুনঃ ঈদ উদযাপন করবেন এবং ঈদের নামায আদায় করবেন।

4 thoughts on “চাঁদের তোয়াক্কা না করে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ পালন কবীরা গোনাহ ও জঘন্য হারাম

  1. আজ শুক্র বার সৌদিতেও শুক্রবার ওরা জুমা পড়ে, আমরাও পড়ি, শুক্র বার ওরা ঈদ করলো আমরা কেন রবিবারে ঈদ করলাম?? চাঁদ কি ২ টা ??

  2. আপনি সম্পূর্ণ ভুল বুঝতেছেন।
    এতকিছু বলার সময় আসলে নাই। চাঁদ না দেখলে, যদি সাক্ষী থাকে(যেমন সৌদি) তাহলে আপনাদের ঈদ করা উচিত। আপনারা অনেক কিছু ভুল বুঝতেছন।যেমন নামাজের সময় কিন্তু চাঁদের সাথে না,না,না,। নামাজের ওয়াক্ত সূর্যের সাথে।প্রথমে নামাজের ওয়াক্তের বিবরণ সম্পর্কে জানুন। আবারও বলতেছি দিন/তারিখ হলো চন্দ্রের সাথে। আপনি আরো বেশি জানেন কিন্তু বুঝিতে ভুল করতেছেন। একটা নিয়মের আরো অন্যান্য নিয়ম গুলো কিন্তু বিবেচনায় আনতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *