মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
মানুষের নামায নষ্ট করার একি জাহালত !!
কেউ যদি গর্বভরে বলেন, “আমি ঈদের জামা‘আতের মুসল্লীদের নামায নষ্ট করেছি”, তা কত বড় ধৃষ্টতা, সে কথা ভাবা যায়? যে লোক এ কথা বলেন যে, আমি দুই জায়গায় ঈদের নামায পড়িয়েছি, ফাতওয়া অনুযায়ী তার সেই কথার অর্থ হলো–তিনি দ্বিতীয়বার যাদের ইমামতী করেছেন, তাদের নামায নষ্ট করে দিয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ)।
বস্তুত একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র একটি জামা‘আতেই ইমামতী করতে পারেন। এরপর আবার কোথাও ইমামতী করলে তার সেই দ্বিতীয় জামা‘আতের মুসল্লীদের নামায সহীহ হবে না। তাদের সকলের নামায বাতিল হয়ে যাবে। ফাতওয়ার কিতাবে এটাই বলা হয়েছে।
এর কারণ হলো–এক ইমাম যখন প্রথমে একটি ফরজ নামায কিংবা ঈদের ওয়াজিব নামাযের ইমামতী করলেন, এর মানে, তার যিম্মা থেকে সেই ফরজ বা ওয়াজিব নামায আদায় হয়ে গেছে। এরপর তিনি যদি আবার সেই নামায পড়তে বা পড়াতে যান, তাহলে সেটি হবে নফল। অথচ তার পিছনে যারা নামায আদায় করছেন, তারা ফরজ বা ওয়াজিব নামায আদায় করছেন। আর মাসআলা হলো–নফল আদায়কারীর পিছনে ফরজ বা ওয়াজিব আদায়কারীর নামায সহীহ হবে না।
হাদীস শরীফে এসেছে–
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ” إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَلاَ تَخْتَلِفُوا عَلَيْهِ،
হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “ইমাম নির্ধারণ করা হয় যেন তার ইকতিদা করা হয়। তাই তোমরা তার অন্যথা করবে না।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২২)
বলা বাহুল্য, ইমাম যখন নফল নামায পড়ছেন, আর মুসল্লীগণ তার পিছনে
ফরজ বা ওয়াজিব নামাযের নিয়তে দাঁড়াচ্ছেন, তাতে পরিস্কারভাবে তার অন্যথা করা হচ্ছে। সুতরাং এভাবে ইক্তিদা সহীহ হবে না।
এক্ষেত্রে তাদের কেউ কেউ একটি হাদীস পেশ করেন। সেটি হল, হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পিছনে সালাত আদায় করে আবার স্বীয় মহল্লায় গিয়ে সেই নামায পড়াতেন। কিন্তু সেই হাদীসটির হুকুম রহিত করা হয়েছে। এ জন্য মু‘আজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর সেই ঘটনা ছাড়া ইসলামের ইতিহাসে আর কোন সাহাবীর এমন আমল দেখা যায় না। সেই রহিতকরণের হাদীস হলো, মু‘আয (রা.)-এর সেই আমলের সংবাদ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট পৌঁছার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.)কে সেই দু’টি নামাযের কোন একটিকে বেছে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসে রয়েছে–
عَنْ مُعَاذِ بْنِ رِفَاعَةَ الزُّرَقِيُّ: أَنَّ رَجُلًا، مِنْ بَنِي سَلِمَةَ يُقَالُ لَهُ سَلِيمٌ أَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالَ: إِنَّا نَظَلُّ فِي أَعْمَالِنَا , فَنَأْتِي حِينَ نُمْسِي , فَنُصَلِّي فَيَأْتِي مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ , فَيُنَادَى بِالصَّلَاةِ , فَنَأْتِيهِ فَيُطَوِّلُ عَلَيْنَا. فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا مُعَاذُ لَا تَكُنْ فَتَّانًا إِمَّا أَنْ تُصَلِّيَ مَعِي وَإِمَّا أَنْ تُخَفِّفَ عَنْ قَوْمِكَ
হযরত মু‘আয বিন রিফাআহ যুরকী (রা.) থেকে বর্ণিত, বনী সালামার এক ব্যক্তি যার নাম ছিল সালীম তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আসলেন। অতঃপর বললেন, আমরা কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকি। সন্ধ্যায় ফিরে এসে নামায (মাগরিব) আদায় করি। তখন মু‘আয ইবনে জাবাল আসেন। অতঃপর নামাযের (ইশার) জন্য আহবান করেন। তখন আমরা নামায পড়তে আসি। সে সময় মু‘আয (বড় সূরাহ দিয়ে লম্বা কিরাআত পড়ার দ্বারা) আমাদের জন্য নামাযকে অনেক দীর্ঘায়িত করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে মু‘আয ! ফিতনা সৃষ্টিকারী হয়ো না। তুমি দু’টি বিষয়ের একটি বেছে নাও : হয়তো আমার সাথে নামায পড়ো অথবা তোমার কওমের সাথে সংক্ষেপে নামায পড়ো। (শরহু মা‘আনিল আছার (ত্বাহাবী শরীফ), হাদীস নং ২৩৬২, মু’জামে কাবীর-তাবরানী, হাদীস নং ৬৩৯১)
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মু‘আয (রা.)-এর পূর্বে কৃত কাজকে রহিত করে দিয়েছেন এবং সেই দুই নামাযের কোন একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আর মহল্লার নামাযকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে কিরাআতকে সহজ করার জন্য বলেছেন। সুতরাং হযরত মু‘আয (রা.)-এর পূর্বের সেই মানসূখকৃত ঘটনা দিয়ে এক ইমামের জন্য দু’জায়গায় ইমামতী করার পক্ষে দলীল দেয়া যাবে না।
.
ভিন্ন তব সম্পৃক্ত প্রসঙ্গ: কেউ যদি মসজিদে ইমামের পিছনে তারাবিহ নামায পড়ে এসে,বাসায় বাকি নামায ঘরের সদস্যদের নিয়ে ( হোম কোয়ারেন্টাইন ইস্যু) ইমামতি করে তারাবীহ পড়ায়,সেটা কি ভুল হবে তাহলে?
নফল বা তারাবীহ এর মত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামায জামাতের সহিত মুক্তাদি হিসেবে অাদায় করে,বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেই নামাযের ইমামমতি করে অাদায় করে,এর বিধান কি হবে? জানালে উপকৃত হতাম, মুহতারাম?
বাসায় পড়ুক বা মসজিদে, সব জায়গাতেই আদায় হবে ইনশাআল্লাহ তাআলা।
ভিন্ন তব সম্পৃক্ত প্রসঙ্গ: কেউ যদি মসজিদে ইমামের পিছনে তারাবিহ নামায পড়ে এসে,বাসায় বাকি নামায ঘরের সদস্যদের নিয়ে ( হোম কোয়ারেন্টাইন ইস্যু) ইমামতি করে তারাবীহ পড়ায়,সেটা কি ভুল হবে তাহলে?
নফল বা তারাবীহ এর মত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামায জামাতের সহিত মুক্তাদি হিসেবে অাদায় করে,বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেই নামাযের ইমামমতি করে অাদায় করে,এর বিধান কি হবে? জানালে উপকৃত হতাম, মুহতারাম?
জাযাকাল্লাহ মুফতি সাঈদ ভাই। লাস্ট একটা প্রশ্ন,এইরকম কেবল জায়েজ বা সম্ভব হবে কেবল সুন্নত/নফল এর ক্ষেত্রেই, তাই কি?
তারাবি নামায যেকোনো জায়গাতেই জামাতে পড়া যায় সমস্যা নেই,। জি, সুন্নাত ছাড়াও আপনি ফরজ নামায ঘরে পড়তে পারেন জামাতের সাথে সমস্যা নেই।