টঙ্গী-ট্রাজেডি : মেধা ও শ্রম কোন্ পথে ব্যয় হচ্ছে? দ্বীনের নামে পাপাচার আর কত?

মুফতি আবুল হাসান আব্দুল্লাহ
—————————–

আমাদের চারপাশে যেসকল ঘটনা ঘটে তাতে থাকে চিন্তা-ভাবনা ও শিক্ষা গ্রহণের অনেক কিছু। থাকে কুরআন-সুন্নাহর বাণী ও বক্তব্যের বাস্তব ও প্রায়োগিক পন্থা উপলব্ধি করার অনেক অনুষঙ্গ। আর তাই চিন্তাশীল ব্যক্তিরা যখন কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানের আলোতে ঘটনাবলির স্বরূপ বোঝার চেষ্টা করেন তখন তা শুধু তাঁদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞাই বৃদ্ধি করে না, বাড়িয়ে দেয় সঠিক পথে চলার প্রেরণাও।

এখন ডিসেম্বর মাস। গত ১ ডিসেম্বর ২০১৮ টঙ্গীর ময়দানে যে ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছিল তা সচেতন দ্বীনদরদী মানুষকে বেদনার্ত করে রেখেছে। দ্বীনদার মানুষের বেদনার্ত হওয়ার অনেক কারণ এখানে রয়েছে। একশ্রেণীর লেবাসধারীর হাতে আলিম-তালিবে ইলম ও তাবলীগের সাথীদের এভাবে হতাহত হওয়ার ঘটনা এদেশের দ্বীনী মেহনতের অঙ্গনে একেবারেই বিরল। আর এই ভয়াবহ ঘটনাটিও ঘটেছে তাবলীগের মতো একটি নিরীহ মেহনতের সাথে যুক্ত হওয়া একশ্রেণীর লোকের মাধ্যমে। এটি এতই ভয়াবহ একটি ঘটনা যে, কারো হিংস্রতা ও দ্বীনী মেযাজহীনতার পক্ষে শুধু এই ভয়াবহ ঘটনাই যথেষ্ট। আর বাস্তবেও এ ঘটনা দেশ-বিদেশের তাবলীগের মেহনতের সাথে জড়িত বা জড়িত নয় এমন অনেক চিন্তাশীল মানুষেরই চোখ খুলে দিয়েছে। এই শ্রেণিটির মূল বিচ্যুতির গভীরে না গিয়েও শুধু এই এক কর্মের দ্বারাই এদের নীতি ও কর্মের মূল্যায়ন সম্ভব। তাহলে খুব সহজেই অনুমান করা যায়, এই ভয়াবহ ও ন্যক্কারজনক ঘটনা যে আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তাগত বিপথগামিতার ফল তা আরো কত ভয়াবহ।

টঙ্গীর ঘটনা থেকে যেমন অনেকের কাছে এদের পরিচয় পরিষ্কার হয়েছে তেমনি যারা এদের বিপথগামিতার বিষয়টি জানেন ও বোঝেন তারা আরো আগে এবং আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে, এদের মাধ্যমে -আল্লাহ হেফাযত করুন- হয়ত উদ্ভব ঘটে যেতে পারে বর্তমান যুগের এক ভয়াবহ ফিতনার। আমাদের প্রাজ্ঞ মনীষীদের সেই আশঙ্কা বাস্তবতার কত কাছাকাছি ছিল তারই এক লক্ষণ টঙ্গী ময়দান ট্রাজেডি। আর তাই দুটো বিষয়ের কোনোটিকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই, বিশেষত দ্বীনদার, দ্বীনপ্রিয় কিংবা দ্বীনের সাথে সম্বন্ধযুক্ত কারো জন্যে তো নেই-ই।

ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এই যে, দ্বীনের কাজ তখনই দ্বীনের কাজ হয় যখন তা সঠিক আকীদার সাথে সুন্নাহসম্মত পন্থায় হয়। অন্যথায় তা আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও বিভিন্ন উপায়ে তার ভক্তি ও শ্রম খরচ করতে পারে, কিন্তু আল্লাহর দরবারে তা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য উপরের দুই শর্ত অপরিহার্য। যে কোনো মুসলিমের কাছেই ইসলামের এই নীতি স্পষ্ট ও স্বীকৃত।

কে না বুঝবেন যে, মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে বড় পার্থক্য হচ্ছে আকীদা। মুসলিম ইসলামের সকল আকীদা স্বীকার করেন এবং ইসলামের সকল বিধান মেনে নেন, পক্ষান্তরে অমুসলিম ইসলামের সকল আকীদা স্বীকার করে না এবং ইসলামের বিধি-বিধানগুলো মেনে নেয় না। এটা হচ্ছে মুসলিম-অমুসলিমের মৌলিক পার্থক্য। অন্যথায় বহু অমুসলিম এমন আছে, যারা বহু ভালো কাজ করে। এমনকি প্রত্যেক ধর্মেই এমন লোকও প্রচুর, যারা স্ব স্ব ধর্মের প্রতি গভীর ভক্তি পোষণ করে এবং স্ব স্ব ধর্মের নিয়ম অনুসারে স্রষ্টার উপাসনায়, বৈরাগ্য-সাধনায়, আত্মপীড়নে প্রচণ্ড- পরিশ্রম করে। কিন্তু এর পরও কেন তাদের প্রেম, ভক্তি ও উপাসনা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না? এজন্যই হয় না যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে যে আকীদা ও আহকাম এসেছে, তা তারা গ্রহণ করেনি; তারা অনুসরণ করছে তাদের বা তাদের পণ্ডিত-পুরোহিতদের বানানো বিশ্বাস ও কর্মপন্থার। কুরআন মাজীদের কত আয়াতে কতভাবে এই বিচ্যুতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। হাদীস শরীফে কতভাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে উম্মতকে সচেতন করেছেন। কুরআন-সুন্নাহর এই শিক্ষার ফলে সাহাবায়ে কেরামও বিষয়টি কত গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন! ইসলাম ও গায়রে ইসলামের মধ্যকার এই পার্থক্যরেখা তাদের চিন্তা-চেতনায় কত স্পষ্ট ছিল! তাদের আবেগ-অনুভূতির কত গভীরে প্রোথিত ছিল! সূরায়ে গাশিয়ায় একশ্রেণীর লোকের পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে-

عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ تَصْلٰی نَارًا حَامِیَةً

ক্লিষ্ট, ক্লান্ত; প্রবেশ করবে উত্তপ্ত আগুনে। [সূরা গাশিয়াহ (৮৮) : ৩-৪]

ইমাম বুখারী রাহ. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, এরা হচ্ছে নাসারা। (কিতাবুত তাফসীর) অর্থাৎ পৃথিবীতে উপাসনা ও বৈরাগ্য-সাধনায় প্রচণ্ড- শ্রম স্বীকার করে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হওয়ার পরও এরা আখিরাতে তীব্র-অগ্নিতে প্রবেশ করবে…। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন।

হযরত ওমর রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, একদিন তিনি এক রাহিবের উপাসনালয়ের কাছ দিয়ে যাবার সময় ডাকলেন, ‘ইয়া রাহিব!’ হে বৈরাগী! রাহিব উপর থেকে উঁকি দিলে হযরত ওমর রা. তার দিকে তাকিয়ে রইলেন এবং তাঁর দুই চোখ অশ্রুতে ভরে গেল। সঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করলেন, আমীরুল মুমিনীন! আপনার চোখে পানি কেন? তিনি বললেন, লোকটিকে দেখে আমার কুরআন মাজীদের এই আয়াত মনে পড়েছে-

عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ تَصْلٰی نَارًا حَامِیَةً

(ক্লিষ্ট, ক্লান্ত; প্রবেশ করবে উত্তপ্ত আগুনে…)

এখানে বিশেষ একটি ধর্মের কথা এসেছে উদাহরণ হিসেবে, নতুবা ইসলামের আকীদা ও আহকাম কবুল না করে মনগড়া আকীদা-বিশ্বাস ও মনগড়া পদ্ধতিতে সাধনা-উপাসনা ও তার কুফলের ক্ষেত্রে অন্যান্য ধর্মও কিছুমাত্র আলাদা নয়।

ইসলামের এই মৌলিক শিক্ষা কোনো মুসলিমের কাছেই অস্পষ্ট নয়। এরই সাথে ইসলামের স্পষ্ট বিধান, ইসলাম কবুলের বিষয়ে কারো উপর জোর জবরদস্তি করা যাবে না এবং কোনো অমুসলিমের উপর শুধু অমুসলিম হওয়ার কারণে কোনো প্রকারের জুলুমও করা যাবে না। কারণ দুনিয়ার জীবন হচ্ছে পরীক্ষার জীবন- কে স্বেচ্ছায় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসা দ্বীনকে স্বীকার করে আর কে তা করে না।

তো মূলকথা হচ্ছে, মুসলিম-অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্যরেখা শুধু ভক্তি ও উপাসনা কিংবা শ্রম ও সাধনার দ্বারা নয়; বরং ইসলামের সঠিক আকীদায় বিশ্বাস ও সঠিক পন্থায় কর্ম ও উপাসনার দ্বারা। কাজেই বলা যায়, মুসলিমের অন্যতম পরিচয়-চিহ্নই হচ্ছে বিশ্বাস ও কর্মের শুদ্ধাশুদ্ধির বিষয়ে সতর্কতা ও সচেতনতা।

এটা তো হচ্ছে মুসলিম-অমুসলিমের পার্থক্য। মুসলিমদের বিভিন্ন দল-উপদলের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কোথায়?

দ্বীন ইসলামের রুচি ও প্রকৃতি সম্পর্কে সাধারণ প্রজ্ঞা যার আছে, তিনিও বোঝেন যে, ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ আর ‘আহলুল বিদআহ ওয়াল ফুরকাহ্’র মধ্যেও মৌলিক পার্থক্য সহীহ আকীদা ও সহীহ আমল। অধিক ভক্তি বা অধিক পরিশ্রম নয়। আকীদা যদি সহীহ হয় তাহলে তা যত দৃঢ় হবে ঈমানের পথে ব্যক্তি তত অগ্রসর হবে। পক্ষান্তরে ভুল আকীদা যত দৃঢ় হবে ততই সে সঠিক পথ থেকে দূরে সরতে থাকবে। তেমনি সঠিক পন্থায় কাজ যত বেশি হবে লাভও তত বেশি হবে; পক্ষান্তরে ভুল পন্থায় কাজ যত বেশি হবে ক্ষতি তত বাড়বে। তাই আধিক্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শুদ্ধতা। তবে হাঁ, শুদ্ধতার সাথে যদি আধিক্যও হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা।

সূরা মুলকের বিখ্যাত আয়াত-

تَبٰرَكَ الَّذِیْ بِیَدِهِ الْمُلْكُ وَ هُوَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرُ، الَّذِیْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَ الْحَیٰوةَ لِیَبْلُوَكُمْ اَیُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا، وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْغَفُوْرُ.

মহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর হাতে। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। -সূরা মুলক (৬৭) : ১-২

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মনীষী হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়ায রাহ.-এর কণ্ঠে যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে তা কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষার সারনির্যাস। তিনি اَحْسَنُ عَمَلًا (কে কর্মে উত্তম)-কথাটির ব্যাখ্যায় বলেছেন- أَخْلَصُهُ وَأَصْوَبُهُ অর্থাৎ ‘কার কর্ম বেশি খাঁটি ও বেশি সঠিক’। তিনি বলেন-

الْعَمَلُ لَا يُقْبَلُ حتى يكون خالصا صوابا فالخالص إذا كان لله وَالصّوَابُ إِذَا كَانَ عَلَى السّنّةِ.

আমল (কর্ম) ঐ পর্যন্ত কবুল হয় না, যে পর্যন্ত না তা হয় ‘খাঁটি’ ও ‘সঠিক’। আমল খাঁটি হয় যখন তা আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য হয় আর ‘সঠিক’ হয় যখন তা সুন্নাহ মোতাবেক হয়। (তাফসীরে বাগাভী ৫/১২৫ সূরা মুলকের প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

মুমিনের কর্তব্য, জীবনের সকল কর্ম সম্পর্কে, বিশেষত ইবাদত-বন্দেগী ও দ্বীনী কাজের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা, যেন তা সঠিকভাবে হয়, শরীয়তসম্মত পন্থায় হয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এর জন্য সঠিক দ্বীনী ইলমের বিকল্প নেই। মুসলমানের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার এক বড় কারণ সঠিক দ্বীনী ইলমের অভাব। আকীদা-আমল সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দ্বীনী ইলমের অভাবে। দ্বীনী ইলমের অভাবজনিত বিচ্যুতির এক ভয়াবহ প্রকার হচ্ছে ‘বিদআহ’ অর্থাৎ যা দ্বীন নয় তাকে দ্বীন মনে করা। মুসলিম জাতির ইতিহাসে বিদআহ ও বিদআহ-পন্থীর ইতিহাস খুবই বেদনাদায়ক একটি অধ্যায়। বিষয়টির ভয়াবহতা উপলব্ধি করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীসই যথেষ্ট। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে এমন এক কওম বের হবে, যাদের সালাতের সামনে তোমরা নিজেদের সালাতকে তুচ্ছ মনে করবে, যাদের সিয়ামের সামনে তুচ্ছ মনে করবে নিজেদের সিয়ামকে আর যাদের আমলের সামনে তুচ্ছ মনে করবে নিজেদের আমলকে। ওরা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। ওরা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেভাবে তীর শিকারকে ভেদ করে বের হয়ে যায়। এরপর তীরের ফলার দিকে তাকাও তাতে (রক্তের) চিহ্নমাত্র নেই। দ-দণ্ডের দিকে তাকাও তাতেও কিছু নেই, পালকের দিকে তাকাও তাতেও কিছু নেই। শেষ মাথার দিকে তাকাও এতে কি কিছু লেগে আছে? -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৫৪

সালাত-সিয়াম কত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আমলের পাবন্দিরও কত গুরুত্ব, কিন্তু এর চেয়েও বেশি গুরুত্ব আকীদা-বিশ্বাসের দুরস্তি ও কুরআন-সুন্নাহর সঠিক বুঝের। নতুবা, দৃশ্যত আমলে পাবন্দী করনেওয়ালা অনেক মানুষও আকীদা-বিশ্বাসের ভ্রান্তির কারণে এবং কুরআন-সুন্নাহ ভুলভাবে বোঝার কারণে সিরাতে মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে পারে। হাদীসের মনোযোগী পাঠকদের জানা আছে যে, উপরোক্ত হাদীসটিতে একটি বিচ্যুত ফেরকা সম্পর্কেই জানানো হয়েছে।

এই হাদীসের অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি হচ্ছে, আকীদা-বিশ্বাসের দুরস্তি এবং কুরআন-সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিষয়ে সতর্ক সচেতন থাকা।

প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য, নিজের চিন্তা-চেতনা ও দ্বীনী বোধ-বিশ্বাসকে সমকালীন আহলে ইলম ও কুরআন-সুন্নাহর প্রাজ্ঞ-অনুসারীদের বোধ-বিশ্বাসের সাথে মিলিয়ে নেয়া। দ্বীনী কাজে শ্রম ও নিমগ্নতার পাশাপাশি সেই কাজটি ও কাজের পন্থা-পদ্ধতির বিশুদ্ধতার বিষয়ে সতর্ক হওয়া। শ্রম ও নিমগ্নতার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শ্রম ও নিমগ্নতার ক্ষেত্র ও পন্থাটি নির্ভুল হওয়া। তা সঠিক হলে যত শ্রম দেয়া হবে তা ব্যক্তির উন্নতির উপায় হবে। পক্ষান্তরে ক্ষেত্র ও পন্থা যদি ভুল হয় তাহলে, বলাই বাহুল্য, যত শ্রম দেয়া হবে ততই ক্ষতির পাল্লা ভারি হবে।

পার্থিব ক্ষেত্রে সঠিক-বেঠিক, যোগ্য-অযোগ্য, খাঁটি-ভেজাল নির্ণয়ে আমরা যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে থাকি, দ্বীনের ক্ষেত্রে তার চেয়েও অনেক বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়া কাম্য। পার্থিব ক্ষেত্রে যিনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ সে বিষয়ে তার শরণাপন্ন হওয়াকে আমরা যতটা জরুরি মনে করি দ্বীনী ক্ষেত্রে প্রাজ্ঞ উলামায়ে কেরামের শরণাপন্ন হওয়া তার চেয়েও বেশি জরুরি।

ডিসেম্বরের টঙ্গী-ট্রাজেডি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, দ্বীনের সঠিক আকীদা ও চিন্তা-চেতনার অভাব দ্বীনী লেবাসধারীদেরকেও কীভাবে মারাত্মক সব কবীরা গুনাহে লিপ্ত করে দিতে পারে। ‘দ্বীনী কাজ’-এর শিরোনামে কীভাবে সংঘটিত হয় পাপাচার ও অনাচার। তাই আসুন, শুধু কাজের জন্য কাজ নয়, আল্লাহর জন্য কাজ করি এবং সঠিক নিয়মে কাজ করি

2 thoughts on “টঙ্গী-ট্রাজেডি : মেধা ও শ্রম কোন্ পথে ব্যয় হচ্ছে? দ্বীনের নামে পাপাচার আর কত?

  1. ইসলাম এর অনুসারীদের এত গ্রুপিঙ্গের কারণেই আজ সারা বিশ্বে মুসলিমরা নির্যাতিত। মুসলিম সমাজের এই বিভাজন কোনভাবেই কাম্য নয়। মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের কথা মাথায় রেখে যত দ্রুত সম্ভব, এই বিরোধ মিটিয়ে ফেলা। অন্যথায় গোমরাহী, হানাহানী বড়তেই থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.