আমিন মুনশি
ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস সাহেব (বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ) বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ২১নভেম্বর ২০১৬। তার আগে মাওলানা আব্দুল জব্বার রহ. দীর্ঘদিন যাবত বেফাকের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অবহেলিত, জরাজীর্ণ একটি শিক্ষাবোর্ডকে মায়া-মমতায় আগলে রেখেছিলেন তিনি। নানা ঝড়-ঝাপ্টায় তিনিই ছিলেন বেফাকের একমাত্র অভিভাবক। খেয়ে-না খেয়ে শত প্রতিকূলতায় বেফাককে তিনি পরিচালিত করেছেন উন্নতির দিকে।
একটি পত্রিকার সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছিলেন, বেফাককে আঁকড়ে থাকার পেছনের রহস্য। মরহুম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (সদর সাহেব হুজুর) একবার স্বপ্নে তাঁকে আদেশ করেছিলেন বেফাকের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিতে। কোন অবস্থাতেই যেন বেফাককে ছেড়ে তিনি না যান- সে কথাটিও তাকে বলা হয়েছিল। প্রয়াত মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেব শুধু এই কারণেই জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত বেফাকের সাথে থেকেছেন। বেফাককে আপন সন্তানের মত যত্নে রেখেছিলেন বিনম্র ভালোবাসায়। কতজন তাকে কটু কথা বলেছে, তুচ্ছ করেছে, সমালোচনা করেছে, সরে দাঁড়াতে বলেছে তাদের পথ থেকে; কিন্তু তিনি হাসিমুখে সবার সাথে মিশেছেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। তবুও নিন্দুকরা তাকে সহ্য করতে পারেনি; বিভিন্নভাবে বেফাক থেকে তাকে সরিয়ে নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি দুষ্টদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেননি। মুনাফিকরাও তখন আর সফল হতে পারেনি।
ওনার ইন্তেকালের পর দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা দেখেছি- বেফাকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কীভাবে স্থবির হয়ে পড়েছিল! একটি জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের অফিস গেইটে তালা পর্যন্ত ঝুলেছিল দিনের পর দিন। স্বার্থবাজ গোষ্ঠী এখনো চাচ্ছেনা তাদের পথে কেউ কাঁটা হয়ে দাঁড়াক। তাই নতুন মহাসচিব নির্বাচনেও শুরু হয়েছে নানান হিসাব-কিতাব। কাকে রেখে কাকে মহাসচিবের পদে বসানো হবে- এই নিয়ে চলছে দলাদলি। মতের অমিল কেউ যাতে বেফাকে ঢুকতে না পারে সে জন্যেও চলছে প্রতারণামূলক কারসাজি।
মাওলানা আব্দুল জব্বার (রহ.) যতদিন বেফাকের মহাসচিব ছিলেন তিনি চেষ্টা করেছিলেন কোনভাবেই যাতে শিক্ষাবোর্ডটিতে রাজনীতির কোন লোকজন ঢুকতে না পারে। দলীয় কোন ব্যানার যাতে এটিকে গ্রাস করে না ফেলে। তিনি চেয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটিকে একটি সার্বজনীন রূপ দান করতে। শেষ পর্যন্ত তিনি কতটুকু সফল বা অসফল হয়েছেন সেটা সবার সামনেই স্পষ্ট। আমরা এখন সামনের দিকে এগুতে চাই। নতুন দিনের সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখতে চাই। দেখাতে চাই। কওমি সিলেবাসের সংস্কার এবং যুগোপযোগিকরণের দীর্ঘদিনের দাবিকে সামনে নিয়ে আসতে চাই। নানা কারণে যারা নতুন প্রজন্মকে সেকেলে রীতিতে আটকে ধরে রাখতে চান তাদের অপসারণ চাই। সময়ের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে মানসম্মত সিলেবাস গঠনে যিনি এগিয়ে আসবেন- বেফাকের নতুন মহাসচিব হিসেবে আমরা তাকেই দেখতে চাই। কওমি শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে যেসব জং ধরে আছে সেগুলোর মেরামত এবং সৌন্দর্য বর্ধন যিনি করতে পারবেন- তাকেই আমরা চাই। নিন্দুক আর দলান্ধ লোকদের যিনি দমিয়ে রাখতে পারবেন- স্বপ্নবান হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাকেই স্বাগত জানাবে।
সর্বশেষ গত ১১এপ্রিল’১৭ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যে স্বীকৃতি আমরা আদায় করে নিয়েছি, সেটির আইনি অবকাঠামোও দ্রুত আদায়ে যিনি চেষ্টা-তদবির করতে আগ্রহী তাকেই নতুন মহাসচিব হিসেবে কামনা করছে সংশ্লিষ্ট সবাই। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যিনি আজ নতুন মহাসচিবের পদ অংলকৃত করছেন তিনি আমাদের তথা কওমি সংশ্লিষ্টদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন!!