যে সব খাবার ও পানীয় হারাম


মূল : আহমদ বিন আব্দুর রহমান আর-রশীদ
অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজরি আহমদ


পবিত্র, স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারী সবধরনের খাবার গ্রহণে ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে। যেসব খাবার অপবিত্র ও অবৈধ তা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

‘হে নবী! আপনি বলে দিন, যত বিধান ওহির মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, (কিছু জিনিস ছাড়া) আহারকারীর জন্য তাতে আমি কোনো হারাম খাবার পাই না; (সেই হারামগুলি হল,) মৃত প্রাণী অথবা  প্রবাহমান রক্ত অথবা শুকরের মাংস—এসব অপবিত্র অথবা অবৈধ। (সুরা আন-আম, আয়াত:১৪৫)

 

সাধারণত যেসব খাবার আমরা গ্রহণ করে থাকি, তা দুই প্রকার-
পশু-পাখি এবং উদ্ভিদ বা শাকসবজি

 

পশু-পাখি :

পশু-পাখির ক্ষেত্রে কিছু নিদর্শন ও বিধি-বিধান লক্ষ করলে হালাল-হারাম নির্ণয় করা সহজ। যে প্রাণীতে হারামের কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে, তা খাওয়া জায়েজ নেই। যেমন;

দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু হারাম। যেমন- বাঘ-সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতা বাঘ, হাতি, কুকুর, শিয়াল, শূকর, বিড়াল, কুমির, কচ্ছপ, সজারু ও বানর ইত্যাদি।

পাঞ্জাধারী হিংস্র পাখি খাওয়া হারাম। যেমন, ঈগল, বাজ, শ্যেন, পেঁচা ইত্যাদি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) দাঁতবিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র জন্তু ও নখ দিয়ে শিকারকারী প্রত্যেক হিংস্র পাখি খেতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১৯৩৪)

নির্দিষ্টভাবে যেসব পশু খেতে নিষেধ করা হয়েছে, তা খাওয়া হারাম। যেমন, শূকর। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃতপ্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশত।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩)

তেমনিভাবে গৃহপালিত গাধাও হারাম।কারণ, জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) খায়বরের দিন গৃহপালিত গাধা খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৪২১৯, মুসলিম, হাদিস নং: ১৯৪১)

নোংরা ও নাপাক কিছু খাওয়া হারাম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের জন্য তিনি (রাসুল) পবিত্র বস্তু হালাল করেন আর অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

যেমন- মৃত জন্তু, পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ, প্রবাহিত রক্ত এবং সেসব খাবারে কোনো প্রকার উপকার নেই যেমন বিষ, মদ, খড়কুটা, মাদকদ্রব্য, তামাক ও অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য ইত্যাদি।

যেসব প্রাণী হত্যা করতে শরিয়ত নির্দেশ দিয়েছে বা যেসব প্রাণী হত্যা করতে নিষেধ করেছে, তা খাওয়া হারাম। যেমন- ইঁদুর, সাপ, টিকটিকি, বিচ্ছু, কাক, চিল ইত্যাদি। কারণ হাদিসে এগুলোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইসলামকর্তৃক নিষিদ্ধ প্রাণীও হারাম। যেমন- হুদহুদ, দোয়েল, ব্যাঙ, পিঁপড়া ও মৌমাছি ইত্যাদি।

আল্লাহ নাম নেওয়া ছাড়া জবাইকৃত হালাল পশু-পাখিও হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘আর তোমরা তা থেকে আহার করো না যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা সীমালঙ্ঘন।’ (সুরা আন-আম, আয়াত : ১২১)

হালাল প্রাণী জবাই শুদ্ধ না হলে, জবাইকৃত সে প্রাণীও হারাম। আবার জীবিত প্রাণী থেকে আলাদা করা গোশতও মৃত প্রাণীর মতো হারাম। জবাই করার কিছু ইসলামী নিয়ম-নীতি ও শর্ত রয়েছে। সেগুলো পূর্ণ না হলে, জবাইকৃত হালাল জন্তুও হারাম হয়ে যায়।

নাপাক বস্তু থেকে সৃষ্ট পোকা-মাকড় এবং যার শরীরে প্রবাহিত রক্ত নেই, সেগুলোও নাপাক। যেমন তেলাপোকা ইত্যাদি।

সব ধরনের মৃত প্রাণী এবং প্রবাহিত রক্ত হারাম। তবে দুই ধরনের মৃত প্রাণী ও রক্ত হালাল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাদের জন্য দু’প্রকার মৃত প্রাণী ও দু’প্রকার রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত প্রাণী হলো, মাছ ও পঙ্গপাল। আর রক্ত হলো, কলিজা ও প্লীহা।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং : ৫৭২৩, ইবনু মাজাহ, হাদিস নং: ৩২১৮)

যেসব পশু বা পাখির অধিকাংশ খাদ্যই নাপাক, সেগুলোর ওপর আরোহণ করা, সেগুলোর গোস্ত-ডিম খাওয়া এবং দুধ পান করা হারাম।

উদ্ভিদজাতীয় খাবার:

খাদ্য ও পানীয়ের মূল প্রকৃতি হচ্ছে বৈধ ও হালাল হওয়া। সে সূত্রে বিভিন্ন উদ্ভিদ, ফল, শস্য ইত্যাদি থেকে তৈরিকৃত পানীয় হালাল। তবে যত ধরনের খাবার ও পানীয় নেশা তৈরি করে, তা খাওয়া বা পান করা জায়েজ নেই। যেমন, গাঁজা, আফিম, ইয়াবা, বিয়ার, শ্যাম্পেইন, হেরোইনসহ এ জাতীয় অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য।

যা কিছু শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর, তাও জায়েজ নেই। যেমন, বিষ, সিগারেট ও এ জাতীয় অন্যান্য খাবার ও পানীয়। যেগুলোর ক্ষতি ও অপকারিতা সবার কাছে স্পষ্ট।

হারাম খাবার কখন খেতে পারবে?

কেউ যদি কঠিন খাদ্য সংকটে পড়ে এবং তার কাছে হালাল খাবারের মজুদ না থাকে। অবস্থা এমন যে হারাম জিনিস না খেলে সে মারা যাবে। এ অবস্থায় জীবিত থাকতে পারে সে পরিমাণ হারাম খাবার গ্রহণ বৈধ। তবে তা যদি বিষ হয় তবে তা নিষিদ্ধ আছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

‘অবশ্য যে লোক (হালাল কিছু না পেয়ে) অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য (হারাম জিনিস গ্রহণ করায়) কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।

(সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)

বাস্তবিকভাবে আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন, তা কেবল মানুষের উপকার ও কল্যাণার্থে। কিন্তু কিছু মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না।


সূত্র- আকসামুল আতইমা আল-মুহাররামা

2 thoughts on “যে সব খাবার ও পানীয় হারাম

  1. হারাম পশু পাখি খাওয়া হতে বিরত থাকা উচিত। কেননা যে জিনিষ হারাম সেটা হারাম। হালাল পশু খাওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.