ঈসা (আ.) কিয়ামতের পূর্বে অবতরণ করবেন

শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতী মনসূরুল হক


 

 

ঈসা (আ.) কিয়ামতের পূর্বে অবতরণ করবেন 2মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন–

إِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَىٰ إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ۖ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ

“স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি আপনাকে ওফাত দিবো, আপনাকে আমার কাছে তুলে নিবো এবং আপনাকে কাফিরদের হাত থেকে মুক্ত করবো, আর যারা আপনার অনুসরণ করেছেÑতাদেরকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের ওপর সমুন্নত রাখবো। অতঃপর আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিবো যে ব্যাপারে তোমরা মতভেদ করতে।”

(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ৫৫)

 

তাফসীর :

 

হযরত ঈসা (আ.)কে অস্বীকারকারী কাফির-ইয়াহুদীরা যখন হযরত ঈসা (আ.)কে শূলে চড়িয়ে হত্যা করতে তাঁর ঘর ঘেরাও করে ফেলে, তখন আল্লাহ তা‘আলা হযরত ঈসা (আ.)কে সান্ত¦নার বাণী শুনিয়ে ৫টি প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। উপরোক্ত আয়াতে সেই ৫টি প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।

 

উক্ত প্রতিশ্রুতির বিষয়সমূহ হচ্ছে–

১. হযরত ঈসা (আ.) কাফিরদের শূলে বিদ্ধ হয়ে নিহত হবেন না, কিয়ামতের পূর্বে তাঁকে দুনিয়ায় প্রেরণ করে স্বাভাবিক মৃত্যু দান করা হবে।

২. এখন তাঁকে কাফিরদের থেকে রক্ষা করে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হবে।

৩. তাঁকে কাফিরদের অপবাদ থেকে মুক্ত করা হবে।

৪. যারা তাঁকে অনুসরণ করবে, তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের ওপর বিজয়ী করে রাখা হবে।

৫. তাঁর ব্যাপারে মতভেদকারীদের মধ্যে কিয়ামতের দিন ফয়সালা করা হবে এবং নাফরমানদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।

বর্ণিত ৫টি বিষয়ের প্রথমটি হচ্ছেÑহযরত ঈসা (আ.)-এর আসমান থেকে কিয়ামতের পূর্বে দুনিয়ায় অবতরণ এবং নির্দিষ্ট কাল দুনিয়ায় জীবন যাপন করে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ।

এ প্রসঙ্গে উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে–إِنِّي مُتَوَفِّيكَ “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে স্বাভাবিক ওফাত দান করবো।” এর ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর তাফসীর হচ্ছে–“হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন–এখানে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন যে, আপনাকে আসমানে উঠিয়ে নিবো এবং আখিরী যমানায় (কিয়ামতের পূর্বে) ওফাত দান করবো।”

(দুররে মানসূর, ২য় খণ্ড, ৩৬ পৃষ্ঠা)

উক্ত আয়াতের এ অংশের দ্বারা হযরত ঈসা (আ.)-এর কিয়ামতের পূর্বে দুনিয়ায় অবতরণ সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে। তিনি কিয়ামতের পূর্বে উম্মতে মুহাম্মদীর মাঝে অবস্থান করে তাদের নেতৃত্ব দান করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ সম্পর্কে বহু মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছেÑযা এ ব্যাপারে অকাট্য বর্ণনা প্রদান করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেন–“এ ব্যাপারে হাদীসসমূহ রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে মুতাওয়াতিরভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কিয়ামতের পূর্বে হযরত ঈসা (আ.)-এর ন্যায়পরায়ণ নেতারূপে অবতরণের সংবাদ দিয়েছেন।”

(তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন, ২য় খণ্ড, ৬৪ পৃষ্ঠা)

 

কিয়ামতের পূর্বে হযরত ঈসা (আ.)-এর আসমান থেকে অবতরণ এবং তাঁর তখনকার যাবতীয় অবস্থা প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কিত বিবরণ হাদীসের আলোকে পেশ করা হলো–

 

ঈসা (আ.)-এর অবতরণের প্রেক্ষিত

—————————-

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমার ও ঈসা (আ.)-এর মাঝে কোন নবী আগমন করেননি। অবশ্যই তিনি দুনিয়ায় পুনরায় অবতরণ করবেন। তোমরা যখন তাঁকে দেখবে, তখন অনায়াসেই তোমরা তাঁকে চিনতে পারবে। তিনি মধ্যম গড়নের, গায়ের রং উজ্জ্বল, হালকা হলুদ রং-এর জোড়া পরিহিত থাকবেন। মনে হবেÑতার চুল থেকে পানি ঝরছে (গোসল করে বের হলে যেমন হয়)। অথচ তাকে পানি স্পর্শ করেনি। তিনি ইসলামের পক্ষে কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করবেন। এ পর্যায়ে তিনি খৃস্টানদের ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন এবং শূকর হত্যা করবেন। তিনি জিযিয়া-কর উঠিয়ে দিবেন। তাঁর সময়ে আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম ব্যতীত সব ধর্ম বিলীন করে দিবেন। আর ঈসা (আ.) দাজ্জালকে ধ্বংস করবেন। অতঃপর তার স্বাভাবিক ওফাত হবে। মুসলমানরা তার জানাযার নামায সম্পন্ন করে রাসূলুল্লাহর (সা.) রওজার পার্শ্বে তাঁকে দাফন করবেন।

(সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, ৪৩৭ পৃষ্ঠা/ ইবনে জারীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৬ পৃষ্ঠা/ দুররে মানসুর, ২য় খণ্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা/ ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা)

হযরত আমর বিন সুফিয়ান সাকাফী (র.) বলেন, আমাকে একজন আনসারী একজন সাহাবীর সূত্রে জানিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেনÑ“অতঃপর মুসলমানরা এমন অন্ধকারে পতিত হবে যে, কোন ব্যক্তি (যদি সে অন্ধকারে হাত প্রসারিত করে তাহলে সে) নিজে নিজের হাত দেখতে পাবে না। ঠিক তখনই হযরত ঈসা ইবনে মারয়াম (আ.) অবতরণ করবেন। লোকদের সামনে তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন। তারা তাদের সামনে এমন একজন ব্যক্তিকে দেখতে পাবেÑযার পরণে থাকবে লৌহবর্ম এবং হাতে থাকবে (বর্শা বা বল্লম ধরনের) যুদ্ধাস্ত্র। তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করবে, “আপনি কে?” জবাবে তিনি বলবেন, “আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং (তাঁর প্রেরিত) রূহ ও কালেমা ঈসা ইবনে মারয়াম।”

(দুররে মানসুর, ২য় খণ্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা/ তারীখে দিমাশক, ১ম খণ্ড, ৬১৫ পৃষ্ঠা)

 

ঈসা (আ.)-এর অবতরণের প্রকৃতি

—————————-

হযরত নাওয়াস ইবনে সাম‘আন (রা.) বলেন, ঈসা (আ.) দামেশকের পূর্বদিকে সাদা মিনারের নিকট অবতরণ করবেন। তিনি হালকা হলুদ রঙের জোড়া পরিহিত অবস্থায় দু’জন ফেরেশতার কাঁধে ভর করে নামবেন। যখন তিনি মাথা নীচু করবেন, তখন মাথা থেকে পানির ফোঁটা টপকে পড়বে এবং মাথা উঁচু করলেও পানির ফোঁটা পড়বে। যে পানির ফোঁটা মুক্তার ন্যায় রৌপ্যের টুকরার মতো স্বচ্ছ হবে। তাঁর নিঃশ্বাসের বাতাস যে কাফিরকে ছুঁবে, সে-ই মারা যাবে। তাঁর নিঃশ্বাসের বাতাস তাঁর দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে। তিনি দাজ্জালকে বাবে লুদ্দ-এর নিকটে পাবেন এবং সেখানেই তাকে হত্যা করবেন।

(মুসলিম শরীফ, ২য় খণ্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা/ সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা/ জামি‘ তিরমিযী, ৯ম খণ্ড, ৯২ পৃষ্ঠা/ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ১৩৫৬/ মুসনাদে আহমাদ, ৪র্থ খণ্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা)

 

ঈসা (আ.)-এর অবতরণকালীন অবস্থা

——————————-

হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, “হযরত ঈসা (আ.) ফজরের নামাযের সময় অবতরণ করবেন। তখন মুসলমানদের আমীর (ইমাম মাহদী) তাঁর নিকট আবেদন জানাবেন, হে আল্লাহর রূহ! আপনি নামায পড়ান। তিনি বলবেন, এ উম্মত একে অন্যের উপর আমীর। তখন আমীর (ইমাম মাহদী) অগ্রসর হয়ে নামায পড়াবেন।”

(মুসনাদে আহমদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা/ দুররে মানসুর, ২য় খণ্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা/ মুসতাদরাকে হাকিম, ৪র্থ খণ্ড, ৪৭৮ পৃষ্ঠা)

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেনÑ“ঈসা ইবনে মারয়াম অবতরণ করবেন জমিনের শ্রেষ্ঠ ও নেক লোকদের নিকট। আর তাদের সংখ্যা হবে ৮০০ পুরুষ ও ৪০০ মহিলা।

(কানযুল উম্মাল, ৭ম খণ্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “যখন মুসলমানরা কুসতুনতুনিয়া থেকে সিরিয়ার কুদসে প্রবেশ করবে, তখন দাজ্জালের প্রাদুর্ভাব হবে। তখন তার ও তার দলবলের মুকাবিলার জন্য মুসলমানরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে কাতার সোজা করবে। ইতোমধ্যে ইকামত হয়ে যাবে। ঠিক তখনই ঈসা ইবনে মারয়াম অবতরণ করবেন। তিনি মুসলমানদের আমীরকে (ইমাম মাহদীকে) নামাযের আদেশ করবেন। যখন আল্লাহর দুশমন দাজ্জাল ঈসা (আ.)কে দেখবে, তখন এমনভাবে গলে যাবে, যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। আল্লাহ তা‘আলা দাজ্জালকে ঈসা (আ.)-এর হাতে ধ্বংস করবেন। ঈসা (আ.) তাকে হত্যা করে তার রক্তমাখা অস্ত্র মুসলমানদেরকে দেখাবেন।”

(মুসলিম শরীফ, ২য় খণ্ড, ৪০৩ পৃষ্ঠা)

মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতের ৫ম খ-ে ১৯৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, এক রিওয়ায়াতে আছে, ঈসা (আ.) বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণ করবেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি জর্দানে অবতরণ করবেন। অপর এক বর্ণনা মতে, তিনি মুসলমানদের সেনা সদরে অবতরণ করবেন। মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণ করার হাদীস ইবনে মাজাহ (রহ.) বর্ণনা করেছেন। সেটাই আমার নিকট অধিক গ্রহণযোগ্য। যদিও আজ বাইতুল মুকাদ্দাসে কোন মিনার নেই, তবুও তাঁর অবতরণের পূর্বে সেখানে মিনার নির্মিত হবে বলা যায়।

 

অবতরণের পর ঈসা (আ.)-এর জীবন যাপন

————————————

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “ঈসা (আ.) পৃথিবীতে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন।

(সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে আহমদ, ২য় খণ্ড, ৪৩৭ পৃষ্ঠা)

কিন্তু সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে, “অতঃপর লোকেরা ৭ বছর অবস্থান করবে।” শাইখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দা (রহ.) বলেন, আমার দেখা সহীহ মুসলিমের সমস্ত নোসখায় এমন পেয়েছি। তেমনিভাবে মুসনাদে আহমদ, দুররে মানসুর ও মুসতাদরাকে এরূপই বর্ণিত হয়েছে। আর এটা সহীহ বর্ণনা। আমার মতে, এর অর্থ হলোÑলোকজন দীর্ঘ অনেক বছর বসবাস করবে। আর এই দীর্ঘ বছরের বিশ্লেষণ হলো চল্লিশ বছর।

সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমদ-এর বর্ণনায় এর সমর্থন পাওয়া যায়। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ঈসা (আ.) পৃথিবীতে দীর্ঘদিন বসবাস করবেন এমন অবস্থায় যে, তাদের মাঝে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না, থাকবে শুধু ভ্রাতৃত্ব।

সুতরাং বুঝা গেলোÑপূর্বোক্ত হাদীসে সাত বলে অধিকসংখ্যক বুঝানোই উদ্দেশ্য। যেমন, পবিত্র কুরআনের এক স্থানে বলা হয়েছে “যদি সাতসমুদ্রের পানি কালি হয় (এবং তা নিঃশেষ হয়ে যায়), তারপর আরো সাত সমুদ্র তার পরে যোগ করা হয়, তবুও আল্লাহর গুণগান শেষ হবে না।” আল্লামা আলূসী (রহ.) এর ব্যাখ্যায় বলে” এখানে সাত সমুদ্র দ্বারা উদ্দেশ্য অধিক সংখ্যক সমুদ্র, যা হাজার ও লাখ সংখ্যাকেও শামিল করে। এখানে নির্দিষ্ট সাত উদ্দেশ্য নয়।”

এ জন্য আল্লামা ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, “ঈসা (আ.)-এর পুরো অবস্থান অবতরণের পর চল্লিশ বছর হবে।” আর তিনি সাত বছরের বর্ণনা উল্লেখ করার পর সহীহ রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন, যাতে চল্লিশ বছরের কথা আছে এবং রিওয়ায়াতগুলো উল্লেখ করার পর তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

(আত-তাসরীহ বিমা তাওয়াতারা ফি নুযূলিল মাসীহ, ১২৮ পৃষ্ঠা)

অবশ্য মিশকাত শরীফের এক হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, তিনি আসমান থেকে অবতরণের পর ৪৫ বছর জীবিত থাকবেন।

 

অবতরণের পর ঈসা (আ.)-এর বিবাহ ও দাম্পত্য

—————————————

রাসূলুল্লাহ (সা.) জুযাম গোত্রের প্রতিনিধি দলকে সম্বোধন করে বলেছেন, মারহাবা শু‘আইব (আ.)-এর সম্প্রদায় এবং মুসা (আ.)-এর শ্বশুরালয়। কিয়ামত সংঘটিত হবে না–যতক্ষণ না তোমাদের মাঝে হযরত ঈসা (আ.) অবতরণ করেন এবং তাঁর সন্তান হবে।

মাকরীজী (র.) খুতুবাতে উল্লেখ করেছেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেনÑ“নিশ্চয়ই ঈসা (আ.) জমিনে এসে বিবাহ করবেন এবং তাঁর সন্তান হবে। তিনি (বিয়ের পর) ঊনিশ বছর অবস্থান করবেন।”

(ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা)

 

পৃথিবীতে অবতরণের পর ঈসা (আ.) কী করবেন

—————————————

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “কিয়ামত সংঘটিত হবে নাÑযতক্ষণ না ঈসা ইবনে মারয়াম ন্যায়পরায়ণ বিচারক ও ইনসাফগার নেতা হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি ক্রুশ ধ্বংশ করবেন এবং শূকর হত্যা করবেন। তিনি জিযিয়ার বিধান উঠিয়ে দিবেন। তিনি এত প্রচুর মাল দান করবেন যে, তা গ্রহণ করার মতো লোক থাকবে না।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ১৩৬৩/ মুসনাদে আহমদ, ২য় খণ্ড, ৪৯৪ পৃষ্ঠা)

ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করা সম্পর্কে হযরত আবু উমামা বাহেলী (রহ.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “ফজরের নামায শেষে ঈসা (আ.) বলবেনÑ(মসজিদের) দরজা খোলো। তখন দরজা খোলা হবে। সে সময় দরজার পিছনে থাকবে দাজ্জাল ও তার সঙ্গী ৭০ হাজার ইয়াহুদীÑযারা সবাই চাদর পরিহিত এবং তলোয়ার হাতে ও অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত থাকবে। যখন দাজ্জাল ঈসা (আ.)-এর দিকে তাকাবে, তখন এমনভাবে গলে যাবেÑযেমন পানিতে লবণ গলে যায়। অতঃপর সে পলায়ন করতে চাইবে। তখন ঈসা (আ.) বলবেন, আমি তোমাকে হত্যা করবো, তুমি আমার হাত থেকে রেহাই পাবে না। অতঃপর তার পিছনে ধাওয়া করে ঈসা (আ.) তাকে বাবে লুদ্দ-এর নিকট পাবেন এবং সেখানে তাকে হত্যা করবেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদীদেরকে পরাস্ত করবেন। এমনকি যে বস্তুর পিছনে কোন ইয়াহুদী লুকিয়ে থাকবে, আল্লাহ সে বস্তুকে কথা বলার ক্ষমতা দান করবেন, পাথর, গাছ, দেয়াল এবং প্রত্যেক বস্তুকে বাকশক্তি দান করবেন। তবে গরকাদ তথা ঝাউ গাছকে বাকশক্তি দান করবেন না। কেননা, এটা ইয়াহুদীদের বপনকৃত গাছ, তাই এ গাছ কথা বলবে না। এটা ছাড়া অন্য প্রত্যেক বস্তু এভাবে বলবে, হে আল্লাহর বান্দা মুসলমান! এইতো এক ইয়াহুদী আমার পিছনে! এসো, তাকে হত্যা কর। তখন প্রত্যেকে এগিয়ে আসবে এবং বুকের উপর তলোয়ার দ্বারা আঘাত করে ইয়াহুদীকে হত্যা করবে।

(সহীহ বুখারী শরীফ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৭৫ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে আহমদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা/ দুররে মানসুর, ২য় খণ্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা)

ঈসা (আ.) ইসলাম ছাড়া সব ধর্মকে বাতিল করে দিবেন মর্মে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আ.)-এর যামানার সব ধর্মকে নিঃশেষ করে দিবেন। শুধু ইসলাম বাকি থাকবে।”

(ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা)

তেমনি হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “ঈসা (আ.) ‘রাওহা’ নামক স্থানে অবতরণ করবেন। সেখান থেকে হজ্বের ইহরাম বাঁধবেন।” এরপর আবু হুরাইরা (রা.) নিম্নের আয়াতখানা তিলাওয়াত করেন– وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا (অর্থ : আহলে কিতাবদের যারাই থাকবে, তারা তাঁর মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই ঈমান আনবে।)

দুররে মানসুরের বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “ঈসা (আ.) আমার কবরের নিকট তাশরীফ আনবেন এবং আমাকে সালাম দিবেন। আমি তাঁর সালামের জবাব দিবো।”

(সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে আহমদ, ২য় খণ্ড, ২৯০ পৃষ্ঠা/ দুররে মানসুর, ২য় খণ্ড, ২৪৫ পৃষ্ঠা)

অপর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “হযরত ঈসা (আ.) কিতাবুল্লাহ এবং আমার সুন্নাতের ওপর আমল করবেন। যখন তাঁর ইন্তিকালের সময় হবে, তখন তাঁর হুকুমে বনী তামীরের এক ব্যক্তিকে খলীফা নিযুক্ত করা হবে। তার নাম হবে মুক‘আদ।

ঈসা (আ.) যখন মারা যাবেন, তখন মানুষ তিনবছর সময় সেভাবে অতিবাহিত করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা লোকদের সীনা হতে কুরআন ও মাসহাফ উঠিয়ে নিবেন।

(ইশা‘আত, ২৪০ পৃষ্ঠা, হাবী, ২৮৯ পৃষ্ঠা)

 

ঈসা (আ.)-এর আবির্ভাবকালীন বরকত

——————————–

হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “ঈসা (আ.)-এর সময় জমিনকে বলা হবে, তোমার সব ফল উৎপন্ন কর এবং বরকত ফিরিয়ে দাও। তখন একটা ডালিম একদল লোক খেয়ে শেষ করতে পারবে না এবং তার খোসার ছায়ায় অনেকে ছায়া গ্রহণ করতে পারবে।

আর দোহনকৃত দুধে এমন বরকত দান করা হবে যে, একটা দুগ্ধদানকারিণী উষ্ট্রীর দুধ একটা বড় জামা‘আতের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটা গাভীর দুধ একটা গোত্রের লোকদের তৃপ্ত করে দিবে। আর একটা বকরীর দুধ একটা পরিবারের পরিতৃপ্তির জন্য যথেষ্ট হবে।”

(সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেনÑ“লোকেরা দীর্ঘ অনেক বছর এমনভাবে বসবাস করবে যে, তাদের মাঝে শত্রুতা এবং হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না।”

(মুসনাদে আহমদ, ২য় খণ্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)

 

ইয়াজুজ ও মাজুজের আবির্ভাব এবং ঈসা (আ.)-এর তুর পর্বতে অবস্থান

———————————————————

হযরত নাওয়াস ইবনে সাম‘আন (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “অতঃপর (যুদ্ধ শেষে) ঈসা (আ.)-এর নিকট এক বাহিনী আসবে, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাজত করবেন। ঈসা (আ.) তাদের চেহারা থেকে যুদ্ধ সফরের ধূলি-বালি মুছে দিবেন এবং জান্নাতে তাদের মর্যাদার বিষয়ে বয়ান করবেন।

এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা হযরত ঈসা (আ.)-এর নিকট ওহী পাঠাবেন যে, এখন আমি আমার এমন বিশেষ বান্দাদেরকে দুনিয়াতে বিচরণের সুযোগ দেবো, যাদের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা ও সাহস কারো নেই। সুতরাং আপনি আমার নেক বান্দাদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে আশ্রয় নিন। তখন আল্লাহ তা‘আলা ইয়াজুজ ও মাজুজকে ছেড়ে দিবেন। (তারা এত ক্ষিপ্রতার সাথে হামলা চালাবে যে, মনে হবে) যেন তারা উঁচু ভূমি থেকে নেমে আসছে। তাদের সম্মুখবর্তীরা বুহাইরা তাবারিয়া সমুদ্র অতিক্রমকালে তার মধ্যে অবস্থিত সব পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষ গামীরা সমুদ্র অতিক্রমকালে বলবে, এখানে মনে হয় এক সময় পানি ছিল।

হযরত ঈসা (আ.) ও তার সাথীরা তখন পাহাড়ে অবরুদ্ধ থাকবেন। সে সময় তাদের নিকট পাহাড়ের চূড়া দামী হবে যেমন তোমাদের নিকট আজ একশ’ দীনার দামী।

অতঃপর আল্লাহর নবী হযরত ঈসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর নিকট কায়মনোবাক্যে দু‘আ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ কবুল করবেন। ফলে আল্লাহ পাক ইয়াজুজ ও মাজুজের ঘাড়ে এক প্রকার কীট সৃষ্টি করে দিবেন। যার ফলে অল্প সময়ে খুব সহজে তারা মৃত্যুবরণ করবে, যেমন একজন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। অতঃপর ঈসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীগণ জমিনে নেমে আসবেন। তখন তারা জমিনের এক বিঘত জায়গাও ফাঁকা পাবেন না, পুরো জমিনে ইয়াজুজ ও মাজুজের লাশে পূর্ণ থাকবে এবং লাশের দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে যাবে।

পুনরায় ঈসা (আ.) ও তার সাথী মুমিনগণ আল্লাহর দরবারে দু‘আ করবেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা লম্বা গর্দান বিশিষ্ট একপ্রকার পাখি পাঠাবেন। পাখিগুলো সেসব লাশ বহন করে নিয়ে এমন স্থানে ফেলবে, যেখানে ফেলা আল্লাহর হুকুম হবে।

(মুসনাদে আহমদ, ৪র্থ খণ্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা)

 

ঈসা (আ.)-এর পুনরায় আগমনের হিকমত

———————————-

আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ কিছু হিকমতের কারণে কিয়ামতের পূর্বে হযরত ঈসা (আ.)কে আসমান থেকে দুনিয়ায় পাঠাবেন। সেই হিকমতগুলো নিম্নরূপ–

১। ইয়াহুদীদের ভ্রান্ত ধারণাকে রদ করার জন্য হযরত ঈসা (আ.) পুনরায় দুনিয়াতে আগমন করবেন। ইয়াহুদীদের ধারণা যে, তারা ঈসা (আ.)কে হত্যা করেছে। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে তাদের এ ধারণার অসারতা বর্ণনা করেছেন। ঈসা (আ.) এসে সেই ধারণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবেন এবং নিজে ইয়াহুদীদের মুকাবিলা করে তাদেরকে হত্যা করবেন এবং তাদের গুরু দাজ্জালকে হত্যা করবেন।

২। হযরত ঈসা (আ.)-এর ইন্তিকালের সময় ঘনিয়ে আসলে তিনি পৃথিবীতে অবতরণ করবেন, যেন জমিনে তাঁকে দাফন দেয়া যায়। কেননা, মাটির সৃষ্টি মানুষের জন্য মাটিই মানানশীল।

৩। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গুণাবলীতে এ উম্মতের ফজীলত দেখে হযরত ঈসা (আ.) এ উম্মতের সাথে শামিল হওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে দু‘আ করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দু‘আ কবুল করেছেন এবং কিয়ামতের পূর্বে তাঁকে এ উম্মতের মাঝে প্রেরণ করবেন। তবে তাঁর নবুওয়াত তখনও বহাল থাকবে, তাঁর নবুওয়াতকে রহিত করা হবে না। কিন্তু তাঁর নবুওয়াতের ওপর আমল হবে না, তখনও সবাই এবং তিনি নিজে আমল করবেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনীত দ্বীন তথা পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ এবং ইসলামের ওপর। এভাবে তখন তাঁর উদাহরণ হবে নির্দিষ্ট প্রদেশের সেই প্রশাসকের মতোÑযিনি কোন প্রয়োজনে অপর প্রশাসকের প্রদেশে গিয়েছেন। এক্ষেত্রেও তিনি নিজ প্রদেশের প্রশাসকরূপেই বহাল থাকেন, তাঁর প্রশাসকের পদ বাতিল হয়ে যায় না।

৪। খৃস্টানরা ভ্রান্ত আকীদা পোষণ করে যে, তাদের পাপ মোচনের জন্য ঈসা (আ.) শূলীবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। এ জন্য তারা ক্রুশ ব্যবহার করে। তাদের এ মিথ্যা দাবী খ-ন করার জন্য হযরত ঈসা (আ.) দুনিয়াতে পুনরায় আগমন করবেন এবং ক্রুশ ধ্বংস করবেন।

(আত-তাসরীহ, ৯৪ পৃষ্ঠা/ কাসাসুল আম্বিয়া, ৬৭৪-৬৭৫ পৃষ্ঠা)

 

ঈসা (আ.)-এর ইন্তিকাল এবং রাসূলুল্লাহর (সা.) রওজার পাশে তাঁর দাফন

————————————————————-

হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! আমার মনে হয়, আপনার পরে জীবনযাপন করতে পারবো। আপনি কি আমাকে আপনার নিকট সমাহিত হওয়ার অনুমতি দিবেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সেই জায়গা তুমি কি করে পাবে, সেখানে আমার আবু বকর, উমর এবং ঈসা ইবনে মারয়ামের (আ.) কবরের জায়গা ছাড়া কোন অতিরিক্ত জায়গা নেই?”

(কানজুল উম্মাল, ৭ম খণ্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, ঈসা ইবনে মারয়াম (আ.) রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর পাশে দাফনকৃত দু’সাহাবীর পাশে দাফন হবেন। সেখানে তাঁর কবর হবে চতুর্থ।

(দুররে মানসূর, ২য় খণ্ড, ২৪৫ পৃষ্ঠা)

এ সকল বর্ণনা দ্বারা কিয়ামতের পূর্বে হযরত ঈসা (আ.)-এর আসমান থেকে অবতরণের বিস্তারিত বিবরণ জানা গেলো। মুতাওয়াতির রিওয়ায়াতের কারণে এসব বিষয় ইয়াকীনের মর্যাদায় পৌঁছে। তাই এ ব্যাপারে প্রত্যেক মুসলমানের ঈমান রাখা কর্তব্য।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *