ইসলামের বাণী প্রচারের পূর্বে মাতৃভাষায় পারদর্শীতা আবশ্যক : আল্লামা বাবুনগরী

ভাষা আল্লাহ প্রদত্ত একটি বিশেষ নেয়ামত৷ ভাব প্রকাশের জন্য ভাষার উদ্ভব হয়েছে৷ মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনির সমষ্টিকে ভাষা বলে৷বাংলা আমাদের মাতৃভাষা; মাতৃভাষা বাংলা চর্চা ও পারদর্শিতা অর্জনের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার করতে হবে৷

২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বার্তায় এসব কথা বলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

তিনি আরো বলেন,পবিত্র কুরআনের সুরা রূমের ২২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্যতা মহান আল্লাহ তায়ালার নিদের্শন৷মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নবী রাসুলগণকে স্ব-জাতীর ভাষায় পারদর্শী করে প্রেরণ করেছেন৷
নবী-রাসুলগণ সুন্দর-সাবলীল ও মর্মস্পর্শী ভাষার মাধ্যমে নিজ উম্মতদেরকে দ্বীনের পথে আহ্বান করতেন৷

প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আরবদের মধ্যে সবচে’ বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষী।’ রাসূলের এ বাণী থেকে প্রমাণিত হয়; বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল মাতৃভাষায় কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করা রাসূল (সা.)-এর আদর্শ।

দাওয়াতের ক্ষেত্রে ভাষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষায় ইসলামের দাওয়াত পেশ করলে অনেকেই সহজে তা গ্রহণ করে। হযরত মুসা আলাইহিস সালামের জবান মোবারকে সামান্য অস্পষ্টতা ছিলো তাই তিনি আল্লাহ তায়া’লার নিকট আর্জি করে আপন ভাই হযরত হারুন আলাইহিস সালামকে দাওয়াতের কাজে নিজের সহযোগী বানিয়ে ছিলেন।

মহান আল্লাহ তা’আলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতৃভাষার প্রতি অপরিসীম গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এবং মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য ও শ্রদ্ধাবোধ শিক্ষা দিয়েছেন।

মাতৃভাষায় পারদর্শীতা ও পাণ্ডিত্য অর্জনের জন্য আমাদের পূর্বসূরিরা গুরুত্বারোপ করেছেন। মাতৃভাষা মানুষের জীবনে কত যে গুরুত্বপূর্ণ! তা অনুধাবন করে পূর্ববর্তী মনীষীরা মূল্যবান উক্তি করেছেন।শায়খুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী র. বলেছেন, “যতক্ষণ না তোমরা আপন ভাষা ও সাহিত্যের অঙ্গনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে, ততক্ষণ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না।”

আল্লামা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী র. বলেছেন,“কোনো দেশে দ্বীনী খেদমত করতে আগ্রহী ব্যক্তিকে সে দেশের মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি বোধ পূর্ণ মাত্রায় অর্জন করতে হবে।”

১২০৫ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলা দেশে মুসলিম রাজত্ব কায়েমের ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নবজন্ম ঘটে। মুসলমান শাসক হুসেন শাহ, গৌড়ের শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ এবং অপরাপর মুসলমান সম্রাটেরা বাংলাদেশে বাংলা ভাষাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে আমাদের সাহিত্যে এক নতুন যুগ সৃষ্টি করেছিলেন।

বাংলা ভাষায় যারা অসামান্য অবদান রেখেছেন, তন্মধ্যে মুসলিম মনীষাদের নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আমাদের পূর্বসূরিগণ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনেক অবদান রেখেছেন যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে৷ সুতরাং বাংলা ভাষা চর্চায় আমাদের আরো এগিয়ে আসতে হবে৷ বিশুদ্ধ বাংলায় কুরআন-হাদীসের সুমহান বাণী প্রচার করতে হবে৷বাংলা ভাষা চর্চার পাশাপাশি সাহিত্যও চর্চা করতে হবে৷ গদ্য ও পদ্যে ইসলামের সৌন্দর্যতা ফুটিয়ে তুলতে হবে৷

বর্তমান যুগের চাহিদা পূরণে আমাদের আরো সচেষ্ট হতে হবে৷ বাংলায় পারদর্শিতা অর্জন করে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ইসলামী সাংবাদিকতায় আমাদের দখল বাড়াতে পত্র-পত্রিকায় ইসলামী কলাম লিখতে হবে৷

বর্তমান সময়ের প্রায় সকল মিডিয়া বামপন্থীদের দখলে। বাম পন্থীরা মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের উপর আঘাত করে৷ ইসলামের উপর নানা অবান্তর প্রশ্ন উত্থাপন করে৷ ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যখন যা ইচ্ছে তাই লিখে৷ সুতরাং আমাদেরকে ইসলামী সাংবাদিকতার মাধ্যমে ইসলামী মিডিয়ার বিপ্লব ঘটাতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *