শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে নতুন নির্দেশনা : মাদরাসা নিয়ে কী ভাবছেন আলেমরা?

নুরুদ্দীন তাসলিম

বার্ষিক পরীক্ষা শেষে দেশের অধিকাংশ কওমি মাদরাসা ছুটি ঘোষণা করছে। রমজান ও ঈদুল ফিতর মিলিয়ে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকবে মাদরাসাগুলোর কিতাব বিভাগ। লম্বা ছুটি পেলেও প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে প্রায় ২ সপ্তাহের ছুটি কাটিয়ে রমজানের আগে খুলে যায় নূরানী ও হেফজ বিভাগ। কোথাও কোথাও এর ব্যতিক্রম আছে। হালে চলমান আছে দেশের অধিকাংশ মকতব ও হিফজ বিভাগগুলো। এদিকে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সরকার ১৮টি নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথাও আছে। সরকারী নির্দেশনায় সরাসরি কওমি মাদরাসার কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে নূরানী ও হিফজ বিভাগের ছাত্রদের মাঝে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছেনি। বিষয়টি স্পষ্ট করতে কথা বলেছি তিনজন দায়িত্বশীল আলেমের সঙ্গে।

কথা হয়, আল হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য, তানজিমুল মাদারিসিল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা আরশাদ রাহমানীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, এর আগে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলে সেই ঘোষণায় কওমি মাদরাসার নূরানী ও হেফজ বিভাগও অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেই অভিজ্ঞতায় বলা যায় বর্তমানে সরকারের এই ঘোষণা অনুযায়ী দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর নূরানী-হেফজ খানাও বন্ধ থাকবে। তিনি বলেছেন, কওমি মাদরাসাগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় মাদরাসাগুলো এমনিতেও লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে।

তিনি বলেছেন, কিছুদিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে যে ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তার ১৬ নম্বর অর্থাৎ (ত) এর নির্দেশনা মেনে, (যেখানে বলা হয়েছে সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনো ধরণের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে) আগামীকাল থেকে মাদরাসাগুলোতে হাইয়াতুল উলইয়ার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এরপরে দাওরার ছাত্ররাও লম্বা ছুটি পাবেন, তাই মাদ্রাসা খোলা রাখার বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে না।

আর সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যে তারিখ দেওয়া হয়েছে সে তারিখ অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের পরে আমাদের মাদরাসাগুলো এমনিতেও খুলে যাবে।

তিনি বলেছেন, যেহেতু আপাতত পরীক্ষা শেষে অন্য সব বিভাগের মত নূরানী হেফজখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাই বন্ধের মুহূর্তে এটা নিয়ে আমরা অতিরিক্ত কিছু ভাবতে চাইনা। তবে বন্ধের সময়ে ও খোলার আগমুহূর্তে বোর্ডের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে বসে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং তা যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়ার হবে -বলছিলেন হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য ও তানযীমুল মাদারিসিল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা আরশাদ রহমানী

এদিকে এই বিষয়ে কথা বলতে হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য ও বেফাকুল মাদারিসিদ্দীনিয়ার মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও অনেকটা আরশাদ রহমানীর মতই মতামত ব্যক্ত করেন।

তার ভাষায়, এর আগে কওমি মাদরাসাগুলো খোলার আগে আমরা সরকারের সাথে কয়েক দফায় বসেছিলাম, সেখানে আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম হেফজখানা গুলোতে অধিকাংশ সময় কোরআন তেলাওয়াত হয়ে থাকে, তাই মহামারীর সময়ে মাদরাসার এই বিভাগগুলো খোলা থাকলে আল্লাহ তাআলার রহমত আসা সহজ হবে, এতে রোগবালাই কমার সম্ভাবনাও থাকে। আমাদের কাছ থেকে এমন আশ্বাস বাণীর ভিত্তিতে তখন সরকার মাদরাসা খোলার অনুমতি দিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা আবারো চেষ্টা করব সরকারের কাছে এই কথাগুলো তুলে ধরার। এর ভিত্তিতে আশাকরি কোন ফলাফল আসতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে মাদরাসার নুরানী ও হেফজ বিভাগ খোলার নির্দেশনা দেওয়া না হলে যথাসময়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে একই বিষয়ে মতামত জানতে হাইয়াতুল উলিয়া সদস্য ও আরজাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মতামতেও খুব একটা ভিন্নতা পাওয়া যায়নি।

তার মতে, আগামী ২২ মে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার এক রকম সিদ্ধান্ত দিয়ে রেখেছে সরকার, তাই সব ঠিক থাকলে এমনিতেও ঈদের পরে মাদরাসাগুলো খুলতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। তবে মাঝখানে রমজান ও ঈদুল ফিতর মিলিয়ে লম্বা এই সময়টিতে নূরানী ও হেফজ খানা বন্ধের বিষয়টি কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে। এ বিষয়ে বোর্ড যথাসময়ে বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *