লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
————————-
আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ আজ ভূলুণ্ঠিত। স্বাতন্ত্রতা, স্বকীয়তা আজ আমাদের থেকে বিসর্জিত। বহু দূরে অবস্থান করছে আমাদের স্বকীয়তাবোধ। নিজস্বতা বিকিয়ে হয়ে গেছি পরগাছা।
আমাদের পাঠ্যসূচিতে একটি কিতাব ছিল “দুরুসুল বালাগাত” নামে। কিতাবটিতে একটি উপমা ছিল এই রকম- “গাধা লবণে পড়ে লবণ হয়ে যায়”। তার নিজস্বতা বলতে আর কিছু বাকি থাকে না।
আমাদের যুবকদের দেখলে এ উপমা খুব বেশি মনে পড়ে। স্বকীয়তা আর আত্মমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে আমরা এখন গাধায় রূপান্তরিত হয়েছি। পাশ্চাত্যের নোংরা সংস্কৃতির ভাগারে নিমজ্জিত হয়ে হয়ে গেছি তাদেরই মত। না পোশাকে আমি মুসলিম। না আখলাকে মুসলিম। না চেহারায় মুসলিম। না পারিবারিক জীবনে মুসলিম। না রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলিম। আমাদের জীবনের কোথাও ইসলাম ও মুসলমানিত্বের ছাপ পর্যন্ত নেই। একি হালাত আমাদের? আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ, আমাদের স্বকীয়তাবোধ, স্বাতন্ত্রতাবোধ এতটা মিইয়ে গেল কিভাবে?
ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনকারীদের বলছি!!
আপনি কি জানেন এটি কিসের উৎসব? কিভাবে শুরু হল এ নোংরামি?
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের ধারণা, রোমান সেন্ট ভ্যালেন্টাইন খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ না করায় তাকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা থেকেই এর উৎপত্তি। ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার আত্মত্যাগের ওই দিনটি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। কিছু বিশেষজ্ঞ অবশ্য বলে থাকেন, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারাগারে বন্দী থাকার সময় কারারক্ষীর মেয়েকে তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেন, যাতে লেখা ছিল ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। ভালোবাসার এমন স্মৃতিকে জড়িয়েই পরবর্তী সময়ে ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রচলন হয়। অপর একটি ধারণা, রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন গির্জার ধর্মযাজক ছিলেন। ক্লডিয়াস তার সঙ্গে বিরোধের জন্য প্রথমে তাকে কারাবন্দী করেন। পরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি নির্ধারিত করেন এবং পরবর্তীকালে তার নামানুসারে পালিত হতে থাকে এই অনুষ্ঠান। ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে। প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেবদেবীদের রানী জুনোর সম্মানে পবিত্র দিন। রোমানরা তাকে নারী ও বিবাহের দেবী বলে বিশ্বাস করত। দিনটি অনুসরণ করে পর দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি পালিত হতো লুপারক্যালিয়া উৎসবের বিশেষ ভোজ। সে সময় তরুণ এবং তরুণীদের জীবনযাপন ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ পৃথক। কিন্তু তরুণদের জন্য ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ নামে একটি ভিন্নধর্মী প্রথা ছিল ‘লটারি’। লুপারক্যালিয়া উৎসবের সন্ধ্যায় কাগজের টুকরায় তরুণীদের নাম লিখে একটি পাত্রে জমা করা হতো। সেখান থেকে এক একজন তরুণ একটি করে কাগজের টুকরা তুলত এবং কাগজের টুকরায় যে তরুণীর নাম লেখা থাকত ওই উৎসবের সময় পর্যন্ত সে তাকে তার সঙ্গী হিসেবে পেত। পরে কখনো কখনো ওই দুজনের জুটি পুরো বছর ধরে টিকে থাকত। {সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৫ ইং সংখ্যা}
একে তো খৃষ্টান পাদ্রীর মাধ্যমে উদ্ভব। দ্বিতীয়ত লটারির মাধ্যমে লিভ টুগেদারের মত নিকৃষ্ট কর্মের প্রমাণবাহী একটি দিনকে সাদরে গ্রহণ করে নিজেদের আত্মমর্যাদাবোধকে কোন স্তরে নামিয়ে নিল এ দেশের অতি আধুনিক সমাজ? লজ্জা, নৈতিকতাবোধ, স্বকীয়তা বিসর্জন করে এ কোন নোংরামিতে মত্ত আমরা? একবার ভাবার কি সময় হবে?
আমি তোমাকেই বলছি!
যে যুবক! হে মুসলিম যুবক! হে মুসলিম নামধারী ব্যক্তি! তোমার শিরায় উপশিরায় মুসলমানের রক্ত বহমান! যে খৃষ্টানদের হিংস্র থাবায় রক্ত ঝরেছে তোমার পূর্বসূরির। যাদের হাত এখনো তোমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গা। যাদের চিন্তনে-মননে তোমাদের প্রতি ঘৃণা ও ধ্বংসের ভয়ানক অভিলাষ! তুমি তোমার নিজস্বতা বিকিয়ে দিয়ে তাদের উৎসবকে তোমার ঘরে কিভাবে প্রবেশ করালে? কি করে নিজেকে এতটা আত্মমর্যাদাহীন হিসেবে জাতির সামনে উপস্থাপিত করলে? তোমার কি হল? তুমি এতটা নিচে কি করে নামতে পারলে? একবার কি তোমার বিবেক জাগবে? একবারও কি ভাবনার দরজায় টুকা পড়বে?
তুমি আর কত নিচে নামবে? আর কত নামতে পারে তোমার মানসিকতা?
তুমি তোমার বোনকে মঞ্চে তুলেছো অর্ধ উলঙ্গ করে। বিলবোর্ডের ক্যানভাসে উন্মুক্ত করেছো তোমার বোনের সম্ভ্রমের ওড়না। দুই টাকার ম্যাচ বক্সেও বিক্রি করছো তোমার বোনের অর্ধ উলঙ্গ ছবি। পত্রিকায় পাতায়, টিভি পর্দায় অবমুক্ত করেছো তোমার বোনের সতীত্ব।
আর কতটা নিচে নামলে তোমার এ নিচুতার যাত্রা বন্ধ হবে? কতটা? বলবে কি একবার?
আমি তোমাকে বলি! তোমাকেই বলছি!
তুমি দাবি কর তুমি মুসলিম। তুমি ঈদের জামাতে সবার আগে গমন কর। তুমি কুরবানীর গরুটা সবচে’ বড় দেখে ক্রয় কর। তোমার নামটা মুসলিমের নাম। তোমার মৃত্যুর পর তোমাকে জানাযা পড়ানো হবে। তোমাকে সসম্মানে দাফন করা হবে। তোমাকে পোড়ানো হবে না। কারণ তুমি মুসলিম। তোমাকে রাখার সময় বলা হবে- বিসমিল্লাহি ওয়ালা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ তথা রাসূল সা: এর মিল্লাতের, আদর্শের উপর তোমাকে কবরস্থ করা হচ্ছে।
এই তুমি। এই তুমিই সারা বিশ্বকে বড় গর্ব করে বল-“তোমার নবীর চেহারা সবচে’ সুন্দর! তোমার নবীর চরিত্র বড় সুন্দর! তোমার নবীর আখলাক সবচে’ সুন্দর! তোমার নবীর পারিবারিক জীবন বড়ই উত্তম। তোমার নবীর পোশাকটা শ্রেষ্ঠ পোশাক। তোমার নবীর লেনদেন, সামাজিক জীবন, সাংসারিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, যাপিত জীবনের প্রতিটি কোণ, প্রতিটি কাজ, প্রতিটি কর্ম, প্রতিটি মুহূর্ত সুন্দর ও শ্রেষ্ঠ। যার নজীর পৃথিবীর ইতিহাস না কোনদিন দেখাতে পেরেছে, না কোনদিন দেখাতে পারবে”।
কিন্তু তুমি সেই শ্রেষ্ঠ নবীকে তোমার চেহারা থেকে কিভাবে বহিষ্কার করলে?
তোমার পোশাক থেকে কিভাবে বহিষ্কার করলে?
তোমার চালচলন থেকে কিভাবে বহিষ্কার করলে?
কিভাবে তোমার সংসার জীবন থেকে ছুড়ে দিলে বহুদূর?
কিভাবে তোমার লেনদেন, তোমার বাণিজ্য, তোমার সর্বত্র থেকে তোমার শ্রেষ্ঠ নবীর আদর্শ বিসর্জিত হল? জবাব কি দিতে পারবে ভাই?
তোমার চেহারা দেখলে মনে হয়, তুমি বিশ্ববাসীকে জানাচ্ছো- তোমার নবী নয়, হলিউডের নায়কের চেহারা তোমার কাছে আদর্শ। বলিউডের নায়কের পোশাক তোমার কাছে আদর্শ। ঢালিউডের নায়েকের হেয়ার স্টাইল তোমার কাছে অনুকরণীয়। তোমার সর্ব হালাতের আমল দ্বারা তুমি বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছো- ইহুদী খৃষ্টানদের প্রতিটি কর্ম তোমার কাছে আদর্শ। তাদের প্রতিটি উৎসব তোমার উৎসব। তাদের প্রতিটি কর্ম তোমার কাছে অনুকরণীয়!
এরকম আত্মমর্যাদাহীন, এমন স্বকীয়তাহীন, এমন নির্লজ্জ পরগাছা হয়ে আর কতদিন তুমি ধরাধামে বেঁচে থাকবে? আর কত? কবে তোমার হুশ হবে? কবে তুমি চিনবে তুমি কে? কবে তোমার বিবেক বলবে-তোমার নবীর মত শ্রেষ্ঠ কোন ব্যক্তি নেই। তাই তোমার পোশাকে তোমার নবীর নিদর্শন ফুটে উঠবে। তোমার চেহারায় তোমার নবীর প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠবে। তোমার লেনদেন, পরিবার, সমাজ, উৎসব সর্বত্র পরিস্ফুটিত হবে তোমার নবীর প্রতি তোমার অগাধ ভালবাসা। তোমার নবী শ্রেষ্ঠ আদর্শের অধিকারী হবার পরিচ্ছন্ন প্রমাণ?
এদিন কবে আসবে? কবে জাগবে তোমার বিবেক? আমাকে বলবে কি?