নবীজির মজলিসে তাওয়াক্কুলের শিক্ষা

মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ

আল্লাহ্ তাআলা বলেন, وَاتَّقُوا اللَّهَ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلْ الْمُؤْمِنُونَ “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আর মুমিনগণ যেন আল্লাহর উপরই ভরসা করে।” -সূরা মায়েদা:১১

তাওয়াক্কুলের বাস্তবায়ন এবং বৈধ উপায়-উপকরণ অবলম্বন করার সাথে সাথে হৃদয়কে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য নিম্নোক্ত উদাহরণটি উল্লেখযোগ্য:

রাসূলুল্লাহ্ (সা.) হিজরতের সময় মদিনার দিকে যাওয়ার জন্য মক্কা থেকে উল্টা দিকে গমন করেন। আর তা ছিল রাতের আঁধারে। অতঃপর তাঁরা ‘ছওর’নামক গুহায় আত্মগোপন করেন।

আবু বকর (রা.) নবীজি (সা.) এর হিজরতের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমরা যখন ‘গারে ছওরে’ ছিলাম তখন আমি উপর দিকে তাকিয়ে দিয়ে দেখলাম মুশরিকদের পা আমাদের মাথার ঠিক উপরেই। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কেউ যদি নিজের পায়ের দিকে তাকায় তাহলেই আমাদেরকে দেখতে পাবে। তখন তিনি আমাকে বললেন, “আমাদের দুজন সম্পর্কে তোমার ধারণা কি হে আবু বকর! আল্লাহ্ আমাদের তৃতীয় জন। অর্থাৎ আমাদের সাহায্যকারী।” -বুখারী ও মুসলিম

যে কথা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ এভাবে বর্ণনা করেছেন,

إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا

“যখন তাকে কাফেররা বহিষ্কার করেছিল, তিনি ছিলেন দুজনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ্ আমাদের সাথে আছেন।” (সূরা তওবাহ্-৪০)

এরপরের ঘটনা তো আমাদের অধিকাংশেরই জানা আছে যে, কাফিরেরা রাসুলুল্লাহ (সা.) কে আর দেখতে পায়নি। তারা ব্যর্থ হয়ে চলে গিয়েছিলো।

এখানে স্পষ্ট যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বাহ্যিক উপায় গ্রহণ করেছিলেন। তা হল, তিনি প্রথমত মক্কা হতে উল্টো পথ ধরে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে কৌশল অবলম্বন করেছেন। দ্বিতীয়ত, কাফিরেরা যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) কে পেয়ে যাওয়ার উপক্রম হল, রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন আবু বকর (রা.) কে নিয়ে গারে সাওরে আত্মগোপন করলেন, এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহএ উপর ভরসা রেখে উপায়ও অবলম্বন করেছেন। আল্লাহ তাআলা সাহায্যও করেছেন।

আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

“আর যে আল্লাহ্‌কে ভয় করে, আল্লাহ্ তার জন্যে পরিত্রাণের পথ করে দেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দান করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” -সূরা ত্বালাক:২,৩

সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, সে অকল্পনীয়ভাবে মর্যাদা লাভ করবে, এর ফলাফল ভোগ করবে। আর সে হবে সর্বাধিক উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষ, সবচাইতে সুখী মানুষ।

আল্লাহ্ বলেন, وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” (সূরা ত্বালাক-৩)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *