ফয়সাল আহমদ
বিবাহের ক্ষেত্রে ইস্তেখারার কোনও বিকল্প নেই। আপাতদৃষ্টিতে ধনসম্পদ, সৌন্দর্য, বংশ ইত্যাদির চাকচিক্য দৃশ্যমান হলেও দ্বীনদারিত্বের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ-ই আলাদা। এক্ষেত্রে মহান রবের থেকে সাহায্য কামনার বিকল্প নেই।
এক্ষেত্রে শুধু ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, কুরআন তেলাওয়াত নিয়মিত করে, এতটুকুতে-ই আশ্বস্ত হওয়াটা মারাত্মক বোকামি। কন্যার শিক্ষাঙ্গন ও বন্ধুসার্কেল সম্পর্কিত তথ্য নেওয়াটাও মার্ক করে রাখার মতো।
যাবতীয় খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনাও চালিয়ে যেতে হবে যথারীতি, সবিশেষ মেয়ের ব্যাকগ্রাউন্ডের চারিত্রিক সকল সাইড পরিচ্ছন্ন হলে কল্যাণ-অকল্যাণের ফায়সালার দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহ’র উপরে-ই ন্যস্ত করতে হবে ও বেশি বেশি ইস্তেখারা করতে হবে।
আরও পড়ুন
- ব্যাংকে চাকুরী করে উপার্জিত অর্থ হালাল নাকি হারাম? https://adarshanari.com/articles/7373/
- মহিলাদের জন্য মসজিদের চেয়ে ঘরে নামাজ পড়া অধিক উত্তম : আব্দুর রহমান আস-সুদাইস https://adarshanari.com/news/international/7369/
- প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করার হুকুম কী? https://adarshanari.com/arti…/suwal-jawab/bibaho-shadi/7313/
- শিশুদের মসজিদে গমন : কোরআন ও সুন্নাহ কী বলে? https://adarshanari.com/articles/7305/
- ———————————————————
শারীরিক কোনও খুঁত রয়েছে বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী নয়, এমন অগণিত চরিত্রবান নারী রয়েছে যারা স্বামীর সংসারে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে নিজেকে তিলেতিলে ক্ষয় করছে । অপরদিকে একজন দুশ্চরিত্রা নারীর সংসার দিনদিন পরিণত হয় কেবল জ্বলন্ত অঙ্গারে।
পৃথিবীর অনেক সফল ব্যক্তি এখানে এসে হোঁচট খায়, বহু পণ্ডিত পা পিছলে পড়ে, পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে ধৈর্যশীলদের তালিকায় নাম লেখিয়ে নিতান্তই বেচারা বনে যায়।
এবার আসি নিজের বিষয়ে:-
কর্মজীবনে পা দেওয়ার পরে কালক্ষেপণ না করেই আমার পরিবার আমার বিয়ের বিষয়ে ভাবনা শুরু করে দেয়। একে একে চলতে থাকে মেয়ে দেখার বিড়ম্বনা, এটা মিলে তো ওটা অমিল থাকে। অবশেষে পরিবারের সবাই একটি মেয়েকে দেখে পছন্দ করলেন।
বিবাহের ক্ষেত্রে আমার শর্ত ছিলো দ্বীনদারিত্ব, হোক সে মাদরাসার কিংবা স্কুল-কলেজপড়ুয়া।
আমার ফ্যামিলির পছন্দ করা মেয়ে ছিলো জেনারেল শিক্ষিতা, অর্থাৎ কলেজপড়ুয়া। তার বাবা একজন ইমাম। যতটুকু তারা বলেছে, সে অনুযায়ী মেয়ে পর্দা করে কিছুটা শিথিলতার সাথে, কুরআন তেলাওয়াত পারে ইত্যাদি….।
এমন আশা বুকে নিয়ে এগুচ্ছিলাম যে, ভালো ফ্যামিলির মেয়ে যেহেতু! তাকে পুরোপুরি দ্বীনের সাথে সেটআপ দেওয়াটা সহজ-ই হবে। উভয় পরিবার একে অপরের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করেছে, আমার পরিবারও তাদের বাড়িতে গিয়েছে, তারাও এসেছে, সব ঠিকঠাক। এবার কনফার্ম করার পালা।
আমরা দু’জনও একে অপরের সাথে মুঠোফোনে জীবনপথে চলার প্রয়োজনীয় শর্তাদি আরোপ করলাম, উভয়-উভয়ের সরলপথে চলার সহজ কল্যাণময় শর্তগুলো একবাক্যেই মেনে নিলাম এবং যেহেতু আমি অনেক দূরে ছিলাম, তাই তাকে (ওজরের হালতে) যেভাবে দেখা যায়, সেভাবে দেখেও নিলাম। আলহামদুলিল্লাহ! মোটকথা সবাই সবাইকে পছন্দ করেছে। কারো দৃষ্টিতে আর কোনও প্রতিবন্ধকতা-ই রইলো না।
সময়টা অক্টোবর এর শুরুর দিকে, আর আমার দেশে যাওয়ার সময় হলো ২৫-এ অক্টোবর। সময় খুবই স্বল্প। তাই যাবতীয় বিষয়াদি সমূলে আল্লাহ’র উপর ন্যস্ত করে দিলাম। নিশ্চয়ই তিনি উত্তম ফায়সালাকারী। মাঝেমাঝে ইস্তেখারা-সহ ছোটছোট কিছু ওজীফা নিয়মিত করতে থাকলাম।
ধীরেধীরে আমার অন্তরে চিঁর ধরতে শুরু করে, আমি বুঝতেই পারিনা, কেন যেন তার প্রতি আমার একটা অনাগ্রহ কাজ করছে, আবার মাঝেমাঝে এমন মনে হয় যে, মেয়ের বিষয়ে যা শুনেছি ভালোই শুনেছি, যা দেখেছি বাহ্যদৃষ্টিতে ভালোই দেখেছি। এটা অন্তরের কুমন্ত্রণা কি না, সেটাও বুঝতে পারছি না।
পুনরায় ইস্তেখারাসহ দোয়া করতে থাকি, আর দোয়াতে এমন বলতাম:- আল্লাহ! যদি এখানে কল্যাণ থাকে, তাহলে আমার অন্তরকে দৃঢ় করে দাও, আর অকল্যাণের যদি কোনও আভাস থাকে, তাহলে হে মাওলা! আমি ইঙ্গিত-ইশারা বুঝি না, তুমি এমন করে দিয়ো-যাতে আমার সামনে সবকিছু দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায়।
দোয়া আল্লাহ কবুল করলেন। মেয়ের অন্তরে উদ্ভট কিছু দাবির উদ্ভাবন ঘটলো। সেগুলো আমার কাছে আস্তে আস্তে প্রকাশিত হওয়ার পর-ই আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। আমার মন কিছুতেই টানছিলো না, বুঝতে পারলাম যে এটাই রাব্বে-কারীমের ফায়সালা।
মাঝখানে অনে–ক কিছু হয়ে গেলো।
…….. অবশেষে দেশে যাওয়ার ১৭ দিন আগে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিয়েটা নাকচ করে দিলাম। মেনে নিতে কষ্ট হলেও আল্লাহ’র উপর ভরসা ছিলো যে, তিনি যা করেন বান্দার কল্যাণের জন্য-ই করেন।
আল্লাহ’র উপরে অগাধ বিশ্বাস তো রয়েছেই, তারপরও অন্তরকে আশ্বস্ত করাতে পারছি না। তবে হ্যাঁ- এটা জানতাম যে আজ না হোক কাল, আমার সামনে ফলাফল প্রকাশিত হবেই ইনশাআল্লাহ।
দুদিন আগে দুপরে খাবার খেতে বসবো, এমন সময় একটু ফেসবুকে নিউজ ফিডে গেলাম, হঠাৎ একটি আইডির ফ্রেন্ড সাজেশন চোখে পড়লো, একটু অনুসন্ধিৎসু চোখে দেখলাম, কেমন চেনা চেনা লাগছে! ক্লিক করতেই ইয়া মারহাবা..!
ইমাম সাহেবের সেই পর্দানশীন মেয়েটি কিভাবে মুখ খুলে প্রোফাইলে ছবি দিয়ে রেখেছে। (তার চেহারা দেখার ইচ্ছে না হলেও আল্লাহ আমাকে যেটা থেকে রক্ষা করেছেন সেটা দেখার উদ্দেশ্যে নিচের দিকে গেলাম) কী বীভৎসতা!
২০১৭ সালের শুরুর থেকেই তিনি নিয়মিত ফেসবুকের পর্দা কাঁপান। অথচ আমাকে সদ্যভূমিষ্ট একটা আইডি দিয়ে বলেছিলো যে, এটাই তার আইডি। কি মিথ্যাচার!!
তারপর যেটা শুনলে চোখ কপালে তোলার মতো, সেটা হলো ম্যাডামের ছবি ব্যবহার করে ফেইক আইডিও ব্যবহৃত হচ্ছে, আর তিনি সেই ফেইক আইডির স্ক্রিনশট তার ওয়ালে আপলোড করে চেঁচিয়ে বলছেন যে,- এটা ফেইক আইডি, এটা ফেইক আইডি।
একটা পিকে এক ভদ্রলোকের কমেন্ট ছিলো এমন-হুজুরের মেয়ের যদি শরীর দেখা যায়, তাহলে অন্য মেয়েরা কী করবে? ইন্নালিল্লাহ।
এগুলো তো সিম্পল ছিলো, এক ছেলে তো এক ফটোতে অকথ্য ভাষায় গালিও দিলো একটা, অন্য এক আশেকের কভার ফটোতে আবার দেখি মুহতারামার সাথে তার তোলা ছবিও বেশ সুভাস(!) ছড়াচ্ছে।
পরে বের হয়ে গেলাম আইডি থেকে আর মহান আল্লাহ’র দরবারে শুকরিয়ার আর ভাষা পেলাম না, তিনিই উত্তম ফায়সালাকারী, তিনিই বান্দাকে বিপদ থেকে উদ্ধারকারী।
এতক্ষণ যার বিষয়ে কথা বললাম, সে একটা কলেজপড়ুয়া মেয়ে। কলেজপড়ুয়া মেয়ে বিবাহ করার জন্য আমি নিরুৎসাহ প্রদান করছি না। কারণ মাদরাসাপড়ুয়া মেয়ে দেখার ক্ষেত্রেও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, মাদরাসাপড়ুয়া মেয়েদের অন্য বিষয়াদির সার্টিফিকেট তো দিতে পারি না, কিন্তু তাদেরকে স্বাভাবিকভাবে পর্দানশীন হিসেবেই দেখা যায়।
আসলে যার যার দ্বীন-তাক্বওয়া তার মনের ভেতর। বহু স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়ে আছে যারা পর্দা ও চরিত্রের ক্ষেত্রে অনেক মাদরাসাপড়ুয়া মেয়েকে ছাড়িয়ে যায়। আবার মাদরাসায় পড়ে এমন কতশত মেয়ে আছে, যারা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে গুণান্বিত।
সর্বশেষে প্রথম অংশের কথাগুলো আবারো এড করে দিচ্ছি, বিবাহের ক্ষেত্রে ইস্তেখারার কোনও বিকল্প নেই। আপাতদৃষ্টিতে ধনসম্পদ, সৌন্দর্য, বংশ ইত্যাদির চাকচিক্য দৃশ্যমান হলেও দ্বীনদারিত্বের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ-ই আলাদা। এক্ষেত্রে মহান রবের থেকে সাহায্য কামনার বিকল্প নেই। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
জানার একমাত্র উপায় তার স্বপ্নকে জানা
জাযাকাল্লাহ খাইর