ব্যাংকে চাকুরী করে উপার্জিত টাকা হালাল নাকি হারাম?

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

ব্যাংকে চাকুরী করে উপার্জিত অর্থ হালাল নাকি হারাম- বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।

সকল ব্যাংকের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি জেনে রাখুন-

ব্যাংকে চাকরি করা হারাম হওয়ার মূলত কারণ দু’টি। যথা-

১- হারাম কাজে সহায়তা করা হয়।

২- হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকা।

হারাম কাজের সহায়তার বিভিন্ন স্তর আছে। শরীয়তে সর্ব ধরণের সহায়তা হারাম নয়। বরং সেসব সহায়তা হারাম যাতে সরাসরি হারাম কাজে জড়িত হওয়া হয়। যেমন সুদী লেনদেন করা। সুদী লেনদেন লেখা। সুদী টাকা উসুল করা ইত্যাদি।

عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা: এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১)

তবে যদি সুদী কাজে জড়িত না হতে হয়, বরং তার কাজের ধরণ এমন হয় যেমন ড্রাইভার, ঝাড়ুদার, দারোয়ান, জায়েজ কারবারে বিনিয়োগ ইত্যাদি হয় তাহলে যেহেতু এসবে সরাসরি সুদের সহায়তা নেই তাই এমনটি করার সুযোগ আছে।

আর হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার বিষয়ের ক্ষেত্রে শরয়ী মূলনীতি হল-যদি বেতনটি হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়, আর হারাম মাল বেশি হয়, তাহলে তা নেয়া জায়েজ নয়। তবে যদি হারাম মাল কম হয় তাহলে বেতন নেয়া জায়েজ হবে।

ولا يجوز قبول هدية أمراء الجور لأن الغالب في مالهم الحرمة إلا إذا علم أن أكثر ماله حلال بأن كان صاحب تجارة أو زرع فلا بأس به لأن أموال الناس لا تخلو عن قليل حرام فالمعتبر الغالب (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الثاني عشر في الهدايا والضيافات-5/342)

অনুবাদ-জালেম বাদশাহর হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নয়। কেননা তার অধিকাংশ মাল হয় হারাম। তবে যদি জানা যায় যে, তার অধিকাংশ মাল হালাল, এ হিসেবে যে সে ব্যবসায়ী বা জমিদার, তাহলে তার থেকে হাদিয়া গ্রহণ করাতে সমস্যা নেই। কেননা সাধারণত মানুষের মাল অল্প হারাম থেকে মুক্ত নয়। তাই এতে আধিক্যের বিষয়টি বিবেচিত হবে। { ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২}

ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা-

১- মূলধন।

২-সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা।

৩-জায়েজ ব্যবসার আমদানী।

৪-সুদ এবং হারাম ব্যবসার আমদানী।

এ চারটি বিষয়ের মাঝে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে মূলত জায়েজ।

যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ বিষয়টি তথা হারাম লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকে সেসব ডিপার্টমেন্টে চাকরী করা যাতে হারাম কাজ করতে না হয় তাহলে তা জায়েজ হবে। এবং বেতন নেওয়াও জায়েজ হবে। তবে উত্তম হল এ চাকরীও ছেড়ে দেয়া।

কিন্তু যদি হারাম আমদানী বেশি হয় হালালের তুলনায়, বা হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে উক্ত ব্যাংকে চাকরী করা জায়েজ নয়। এ থেকে বেতন নেওয়াও জায়েজ নয়। বেতন নিলে তা হারাম হিসেবে গণ্য হবে। {ফাতওয়ায়ে উসমানী-৩/৩৯৪-৩৯৬}

 

20 thoughts on “ব্যাংকে চাকুরী করে উপার্জিত টাকা হালাল নাকি হারাম?

  1. ২ নং পয়েন্ট অর্থাৎ >>>> সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকাতেও হারাম রয়েছে।কারণ, সঞ্চয়কারীকে নির্দিষ্ট পরিমানে সুদ দেওয়া হয়। এবং আমরা জানি——

    সুদ দেওয়া
    সুদ নেওয়া
    সুদে কারবারে সহায়তা করা
    সুদের হিসাব লেখা
    সুদ আদায়
    সুদ প্রদান…. সবই হারাম।

    কারণ, সঞ্চয়কারীকে নির্দিষ্টহারে সুদ (অথবা ভিন্ন শব্দ বসিয়ে বলা হয়) দেওয়া হয়।

    1. #ইকবাল ভাই:
      ধরুন, আপনি একজন ব্যবসায়ী। ১০০ টাকা দিয়ে একটি পন্য কিনলে কত টাকায় পন্যটি বিক্রয় করবেন। নিচশই ১০৫/১১০ টাকায় বিক্রয় করবেন।

      যদি ১১০/১০৫ টাকায় বিক্রয় না করেন তবে আপনার দোকানের ভাড়া, কর্মচারিদের বেতন, ইউটিলিটি বিল কে দিবে?

      আপনি যখন কোন খুচরা পন্য দোকান থেকে কিনেন তখন পন্যের গায়ে তো MRP লেখাই থাকে। আর আমরা সেই দামেইতো পন্যটি কিনে আনি।

      যদি তাই হয়, তবে ব্যাংকের বেতনের টাকা কেন হালাল হবে না।

      1. আপনি দোকানদারকে দিলেন টাকা, দোকানদার আপনাকে দিল পন্য। কিন্তু ব্যাংকে রাখা হয় টাকা, আপনি নিবেনও টাকা। দুটি এক জাতীয় জিনিস না। তাই হারাম

      2. Vai, Apnak akane 100 tk k 105/110 krar Jnno Akta Porisrom krte hcce And Apni sei 100 tk k 105/110 akta porisrom er dara Halal kre Nilen Tai ata tk Halal R sei Jnnoi Allah Business k Halal blecen
        R Bank er j tk Teke tk Briddi peye apner kace Asce seta Te apner Kno Porisrom Krte hccena tai Seta Halal noi
        Islam Always Porisrom Krar nirdesh Dai

      3. এই জন্য আল্লাহ ব্যাবসাকে হালাল করেছে আর সুধ কে হারাম করেছে। সুদের মাধ্যমে জুলুম হয় ব্যবসার মাধ্যমে জুলুম হয় না, আর আপনি যেহেতু
        পরক্ষ ভাবে জুলুমের সহো্যোগীতা করছেন তাই এটা হারাম,

  2. সরকারি চাকরি কিভাবে হালাল হয় মুফতি সাহেব জানাবেন?
    সরকারের অর্থের হযোগানের বড় অংশ ঋন থেকেই কিন্তু হয়।

  3. কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক(AD) পদে কাজ করাটা হালাল না হারাম হবে?

  4. ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখা হালাল না হারাম ?

  5. বেকুব ইমরান শরিফ ব্যাবসা আর সুদের কারবারকে এক পাল্লায় মাপছে। কত বড় ছাগল। ঐ ছাগল আগে হাদিস কুরআন পড় পরে হারাম হালাল বুঝতে আসিস। সুদের ব্যাবসা আর সাধারন ব্যাবসা এক করিস না।

    1. Mr.Ali…একজন কে বেকুব ও ছাগল বলা এটা আরএকজনের মূর্খতা ছাড়া আর কিছু না…!!!
      …ধরুন আপনি যদি ব্যবসা করেন, সেই ব্যবসার জন্য যদি আপনি সরকার বা ব্যাংক থেকে লোন নেন অথবা আপনি ব্যবসার জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রনোদনা ভোগ করেন তবে আপনার আয় কি হালাল…??? কারন সরকারের টাকার মেইন উৎস হচছে এই ব্যাংক….সব ব্যাংক তাদের আয়ের-লভ্যাংশের ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশ সরকারকে দেয়…আর এই টাকা দিয়ে সরকার তার বিভিন্ন সরকারি ব্যয় নির্বাহ করে…
      সুতরাং ব্যংকের আায় যদি হালাল না হয় কোন আয় হালাল হওয়ার সুযোগ নাই…!!! (কম হালাল বেশি হালাল বলে কোন কথা নাই_ _ _হয় হালাল, না হয় হারাম )

  6. Karon vhai islam e taka ke ponno bole bebohar kora jabe na.ar sobai jane bank e keo na parte job kore na vhalo salary ar target e bonus ache .jekhane sobai onnoder sudi karber e taka dite o nite uthsahito o sahajjo kore sekhane hala er kono jaiga ache??

  7. মানুষ কত বড় আহম্মক হলে এ ধরনের ফতুয়া দিতে পারে।হাজার হাজার মাদ্রাসার টাকা কোথায় থাকে?মসজিদের টাকা কে পাহাড়া দেয়?আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ব্যাংক ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারে?শুধু ঝাড়ুদার ও সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে ব্যাংক চলবে?আপনি একদিকে বলবেন প্রয়োজন আছে,অন্যদিকে বলবেন হারাম,তাহলে তো ঐ দুমোখো সাপের মতই হল যে বলে ওখানে পায়খানা আছে,আবার নিজেই পায়খানায় গিয়ে নাড়াচাড়া করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *