মেহেদী হাসান সাকিফ
তাপদগ্ধ আকাশে হঠাৎ মেঘ আসে কোথা থেকে?
মেঘের জল কোথা থেকে বৃষ্টির ধারা নিয়ে আসে?
পবিত্র কুরআনে এই প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং ই আল্লাহই দিয়েছেন-
আর তিনিই সে সত্তা; যিনি তাঁর রহমত বৃষ্টির আগে বায়ু প্রবাহিত করেন সুসংবাদ হিসেবে, অবশেষে যখন সেটা ভারী মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমরা সেটাকে মৃত জনপদের দিকে চালিয়ে দেই, অতঃপর আমরা তার দ্বারা বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তা দিয়ে সব রকমের ফল উৎপাদন করি। এভাবেই আমরা মৃতদেরকে বের করব, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর (সুরা আরাফ আয়াত ৫৭)
এই আয়াতে মূলত বলা হয়েছে যে,
কোন বিশেষ দিক কিংবা বিশেষ ভূখণ্ডের দিকে মেঘমালা ধাবিত হওয়া সরাসরি আল্লাহর নির্দেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তিনি যখন যেখানে ইচ্ছা এবং যে পরিমাণ ইচ্ছা বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দান করেন। মেঘমালা আল্লাহর সে নির্দেশই পালন করে মাত্র। (তাফসীরে কুরআনুল কারীম বাংলা)
প্রচণ্ড গরমের দাবদাহে যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে মানুষ ও প্রকৃতি। আল্লাহর নির্দেশে পরম শান্তির পরশ নিয়ে হাজির হয় বৃষ্টি। দিনরাত অবিরাম বৃষ্টির ধারা মানব মনকে করে দোলায়িত। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন কবি সাহিত্যিক নেই যিনি মুগ্ধ হয়ে কাব্য সংগীত রচনা করেন নি।
আমাদের দেশের পানির সত্তুরভাগ চাহিদা পূরণ হয় বৃষ্টির পানির মাধ্যমে। আকাশ থেকে এই তরল ধারা না বইলে পাখি গান গাইত না। প্রাণ ও প্রকৃতি যেত মরে। বৃষ্টির মাধ্যমে প্রকৃতি সতেজ ও নির্মল হয়ে উঠে। মৃত জলাধার প্রাণ ফিরে পায়। জমিতে কৃষি কাজের উৎপাদন ভালো হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার হয়।
পবিত্র কুরআনে বৃষ্টি, বৃষ্টির কারণ, বৃষ্টির দান, বৃষ্টির শিক্ষা ও বৃষ্টির স্রস্টার কথা বারবার তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন- আর আল্লাহ্ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তা দিয়ে তিনি ভূমিকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা কথা শোনে ( সুরা নাহল আয়াত ৬৫)
গেল শতাব্দীতে তেল নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে দেশে দেশে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বড় বড় সংগঠনগুলোকে বেশ সরব দেখা যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পৃথিবীর বরফ ভাণ্ডার গলতে শুরু করেছে। এতে হুমকিতে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রকৃতি।
ভূতত্ত্ববিদ ও গবেষকদের মতে আগামী শতাব্দীতে যুদ্ধ ও হানাহানি হতে পারে পানি নিয়ে। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশে এক বিরল ঘটনা ঘটে। সারাদেশে একযোগে বিদ্যুৎ চলে যায়। দেশজুড়ে নেমে আসে এক অন্ধকার জাগানিয়া ভীতি। জেনারেটরের মতো বিকল্প ব্যবস্থাগুলোও প্রায় বিকল হয়ে যায়। আমরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি, পানির এই নিয়ামত স্বল্প সময়ের জন্য কেড়ে নিলে আমাদের পরিণতি কতটা করুণ হতে পারে।
পবিত্র কুরআনে প্রায় জায়গায় আল্লাহ পানির এই নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে তার মারফত লাভ ও কৃতজ্ঞতা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় এই নেয়ামত কেড়ে নেয়ার ও হুমকি দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন- আর আমরা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে অতঃপর আমরা তা মাটিতে সংরক্ষিত করি; আর অবশ্যই আমরা তা নিয়ে যেতেও সম্পূর্ণ সক্ষম [ সুরা মুমিনুন আয়াত- ১৮)
রাসূল (স.) বৃষ্টিতে ভিজতেন। আর সাহাবীদের ও ভিজতে বলতেন। নবীজী যা করেছেন, ভালোবেসে তা করা সুন্নাত।
আল্লাহ বলেন -তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। [আহযাব -২১)
বৃষ্টির সময় দুয়া কবুলের এক সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। সাহল বিন সাদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না কিংবা (তিনি বলেছেন) খুব কমই ফেরত দেওয়া হয়। আজানের সময় দোয়া এবং যুদ্ধক্ষেত্রের দোয়া যখন একে অপরের মুখোমুখি হয়। অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (আবু দাউদ : ২৫৪০)।
সুতরাং আমাদের সকলের উচিত বৃষ্টির এই অফুরান নেয়ামতকে বেশী বেশী স্মরণ করা ও আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা।