তাবীজ-কবজ ও ঝাড়-ফুঁক সম্বন্ধে আক্বিদা বা বিশ্বাস

শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.


বর্তমান যুগে ঝাড়-ফুঁক, তাবীয-কবজের ব্যাপারে মানুষের মাঝে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কেউ তো ঝাড়-ফুঁক, তাবীয-কবজকে একেবারে অস্বীকার করে এবং এ সকল কাজকে না-জায়িয, হারাম এমনকি শিরক ও মনে করে। অপর দিকে কেউ কেউ তাবীয-কবজে এতটাই বিশ্বাসী যে, তাবীয-কবজকে স্বয়ংক্রিয় ও নিজস্ব কার্যক্ষমতার অধিকারী মনে করে এবং প্রতিটি কাজেই তাদের একটি তাবীয কাম্য। অথচ উল্লেখিত উভয়পন্থার কোনটিই সঠিক নয়। বরং তাবীয-কবজকে উসীলা মনে করে কুরআন-হাদীসে বর্ণিত নিয়ম অনুসারে আমল করাই হল একমাত্র সহীহ তরীকা। (সূত্র: জাস্টিস মুফতী তাকী উসমানী দা.বা. মুর্জারাবাতে আকাবির: পৃ: ৪৫)

শরী‘আতের দৃষ্টিতে রোগ হলে যেমন ঔষধ ব্যবহার করা বৈধ, তেমনি রোগ-বালাই ও বিভিন্ন সমস্যায় দু’আ-দুরূদের ব্যবহারও শরী‘আত-সম্মত। কুরআনের আয়াত, হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন দু’আ ও আল্লাহর নাম দ্বারা ঝাড়-ফুঁক ও তাবীয ব্যবহার করা সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয। (সূত্র: মিরকাতুল মাফাতীহ: পৃ: ৮/৩৬) তদ্রূপ কুফরী ও শিরকী থেকে খালী কোন নকশা বা শব্দ দ্বারা তৈরী তাবীয ব্যবহার করাও জায়েয। পক্ষান্তরে কুফর ও শিরক মিশ্রিত নকশা বা শব্দ অথবা অর্থ বুঝে আসেনা এমন শব্দ দ্বারা তৈরী তাবীয ব্যবহার করা না-জায়িয। (সূত্র: তাকমিলাতু ফতহিল মুলহিম: পৃ: ৪/৩২৫ হাদীস নং ৫৬৮৮) আর তাবীয ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এগুলোর নিজস্ব কোন কার্যক্ষমতা নেই। (সূত্র: বজলুল মাজহূদ: পৃ: ১১/৬১২ হাদীস নং ৩৮৮৩) এগুলো উসীলা মাত্র। বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রা. ঝাড়-ফুক করতেন। বাকী যে সকল হাদীসে তাবীয-কবজকে শিরক বলা হয়েছে, তার ক্ষেত্র হল শুধু ঐ সকল তাবীয যাতে শিরকী ও কুফরী কথা রয়েছে। যেমনটি ছিল জাহিলী যুগের তাবীয-কবজে। (সূত্র: আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ১/১৭৯) অথবা যে ক্ষেত্রে তাবীয-কবজকেই কার্যকরী বিশ্বাস করা হয়। তাবীয কে উসীলা বিশ্বাস করে নয়। এমন বিশ্বাস নিয়ে এ্যালোপ্যাথিক, হোমিও প্যাথিক চিকিৎসা করানোও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাবীয-কবজ নয়।

তাবীয-কবজ জায়িয হওয়ার আরো কিছু দলীল:

১. হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী ও সাহাবায়ে কেরামের রা. আমল:

عن عمرو بن شعيب، عن أبيه، عن جده، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال: إذا فزع أحدكم في النوم فليقل: أعوذ بكلمات الله التامات من غضبه وعقابه وشر عباده، ومن همزات الشياطين وأن يحضرون فإنها لن تضره. فكان عبد الله بن عمرو، يلقنها من بلغ من ولده، ومن لم يبلغ منهم كتبها في صك ثم علقها في عنقه.

হযরত ‘আমর ইবনে শু‘আইব স্বীয় পিতা এবং তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন তোমাদের কেউ ঘুমের মধ্যে ভয় পায়, সে যেন বলে: أعوذ بكلمات الله التامات من غضبه وعقابه وشر عباده، ومن همزات الشياطين وأن يحضرون তাহলে সেই ভয় কিছুতেই তার কোনরূপ ক্ষতি করবেনা। আর আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর রা. এ দু’আ স্বীয় সন্তানদের মধ্যে যে বালিগ হয়েছে তাকে মুখে বলাতেন এবং তাদের মধ্যে যে বালিগ হয়নি এ দু’আ কোন পর্চায় লিখে দিতেন অত:পর তা তার গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। (সূত্র: তিরমিযী শরীফ হাদীস নং ৩৫২৮)

২. তাবেয়ীগণের রহ. মাঝেও অনেক থেকে তাবিজ লিখে দেওয়ার কথা বর্ণিত আছে, যথা- كان مجاهد يكتب للناس التعويذ فيعلقه عليهم হযরত মুজাহিদ রহ. মানুষের জন্য তাবীয লিখতেন এবং তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। (সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: হাদীস নং ২৩৫৪৫) তদ্রূপ ইবনে শিরীন ও জাহহাক রহ. প্রমুখ থেকেও অনুরূপ আমল বর্ণিত আছে।

৩. হযরত মুফতী শায়েখ নিযাম রহ. তার বিখ্যাত ফাতাওয়া গ্রন্থ হিন্দিয়ায় লেখেন: ولا بأس بتعليق التعويذ তথা তাবীয ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই । (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৯)

৪. তদ্রূপ আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. তার ফাতাওয়া গ্রন্থে লিখেন: বিপদগ্রস্ত ও অন্যান্য অসুস্থ লোকদের জন্য জায়িয (তথা পবিত্র) কালি দ্বারা আল্লাহর কিতাব ও আল্লাহর যিকির থেকে কিছু লেখা এবং তাকে ধুয়ে পান করানো জায়িয হবে। (মাজমূ‘আয়ে ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া: মাস’আলা নং ১৯)

আসল সুন্নাত ঝাড়-ফুঁক:

হযরত আশরাফ আলী থানভী র. বলেন: ঝাড়-ফুঁক তাবীয থেকেও বেশী উপকারী। এবং তার তাছির তাবীযের তাছির থেকে দ্বিগুণ। কেননা এ আমল হুযুর আলাইহিস সালাম স্বয়ং নিজে করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এর তালকীন করেছেন। যেখানে ঝাড়-ফুঁক করার কোন লোক নেই, সেখানে তাবীয ব্যবহার করা যেতে পারে। বাকী উভয় তরীকাই সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত আছে। (সূত্র: মুর্জারাবাতে আকাবির: পৃ: ৪৯)

2 thoughts on “তাবীজ-কবজ ও ঝাড়-ফুঁক সম্বন্ধে আক্বিদা বা বিশ্বাস

  1. জাল জয়িফ হাদিস দিয়ে রেফারেন্স দিলে হবে? একটি হাদিস পেশ করে “আরো আছে” বলা একেবারে অজ্ঞদের কাজ। ইমানের ব্যাপারে সতর্ক হন।

    1. আচ্ছা সব জাল হাদীস নাকি ভাইয়া,তাহলে আপনি একটা মিটা হাদীস দেখান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *