গত ২২ নভেম্বর ঢাকার জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ীতে সাপ্তাহিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে দাওয়াত ও তাবলীগের চলমান বিষয়ে কথা বলেন মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির ও গুলশান আজাদ মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হাসান।
অনুলেখন – জুবায়েদ ইসলাম ফয়সাল।
সম্পাদনা, সাঈদ আল হাসান
—————————————————
শুনছি ইজতেমা নাকি দুই ভাগ হয়ে যাচ্ছে! কাকরাইল ভাগ করার কথা উঠছে! অথচ প্রধান উপদেষ্টা হওয়া সত্ত্বেও আমি কিছুই জানি না! সবাইকে জানিয়ে রাখি, তাবলীগ একটিই আছে। আগে যেমন ছিল। নতুন একটি দল হয়েছে- তারা “এতায়েতি পার্টি” বা সাদপন্থী বলে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে। এরা নতুন দল গঠন করে তাবলীগ থেকে বের হয়ে গেছে। তাবলীগের সাথে ওদের কোনই সম্পর্ক নেই।
এখন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, উলামায়ে কেরাম চেষ্টা করছে দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত করে সবাইকে মেলানো যায় কিনা এ ব্যাপারে। এতবড় বিপদ এখনো পর্যন্ত মুসলমানের ওপর আসে নি। নবীজির যুগে আসছিল, এরপরে ইসলামের ওপর এতবড় বিপদ আর আসেনি। আমার কাছে এমনটিই মনে হয়। এ এক ভয়ংকর বিপদ, যেখানে এক মুসলমান অপর মুসলমানকে কাফের বলে গালি দিচ্ছে। জন্তু জানোয়ারের মত পেটাচ্ছে। নিজ ভাইকে হত্যা করে কাফের হত্যার সওয়াব লাভ করতে চাচ্ছে। ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, কাদিয়ানিরাও এভাবে নির্যাতন করে না। গালি দেয় না। কতক অবুঝ (এতায়েতি) এসব গর্হিত কাজ করে যাচ্ছে আজ। আলেমদের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করা হচ্ছে।
আগে থেকে গুণ্ডামি করতো এমন লোকও তাদের আছে। তারাই এসব জঘন্য অপকর্মগুলি চালাচ্ছে। আলেমদের দ্বারা এগুলো সম্ভব নয়। আলেমরা বুঝাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা বুঝতে নারাজ।
আমরা যে বুঝাবার চেষ্টা করছি সেটাকে তারা মনে করে দুর্বলতা! তার মানে তারা চায়, আমরাও তাদের মত লাঠি লইয়া নাইমা পড়ি!
সেদিন একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলো ইজতেমা কয়টা হবে? আমি বললাম, কয়টা মানে?
তাবলীগের ইজতেমা তো একটাই হয়। আজকাল সমাজের মধ্যে এটা খুব চলছে ।
সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আমাকে এবং একজনকে (মাওলানা যুবায়ের সাহেব) ডাকছে, আর কাউকে ডাকে নাই। সবাই মনে করছে আজকে আলেমরা মাইর খেয়ে আসবে। যারা আলেম বিরোধী তারা মনে করছে আজকে সুযোগ।
আমি গেছি, বসে আছি। জিজ্ঞেস করলাম, দুটি ইজতেমা কেন হবে? তারা বলল, তাবলীগ না ভাগ হয়ে গেছে!
বললাম- কে বলল? আমি না উপদেষ্টা? আমিই তো জানলাম না! ভাগ হইলো কোথায়?
এখন একটা সঙ্কট চলছে। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া করছেন। সে সঙ্কট মেটাতে হবে। আমরা মেটানোর চেষ্টা করছি। গত ইজতেমা তো সুন্দরভাবে হয়ে গেছে। সামনেও যাতে ভালোভাবে হয়, আমরা সচেষ্ট থাকবো।
তখন একজন বলল, ভাগ হয়েছে কারণ, একটি এতায়েত পার্টি বের হয়েছে…
আমি বললাম, এটা তো এতায়েত পার্টি, তাবলীগের পার্টি না। দুই ভাই হওয়ার পর বাপ মারা গেলে জমির ভাগ হয়। কিন্তু আমরা তো ভাগ হচ্ছি না। আমরা তাবলীগ এক আছি। ওরা (এতায়েতিরা) বের হয়ে নতুন দল বানিয়েছে। ওরা ইজতেমার জন্য একটি মাঠ বানিয়ে নিক। ওরা কাকরাইল কেন যাবে? ওরা এতায়েত নামে পৃথক একটি মারকাজ বানিয়ে নিক।
যেগুলো তাবলীগ থেকে বের হয়ে গেছে এগুলো এতায়েত পার্টি, তাবলীগের কেউ না। এতায়েতিরা আলাদা মারকাজ কিনে নিক, আরেকটা মাঠ বানাক। এটাতো (কাকরাইল মারকাজ, টঙ্গী ময়দান) তাবলীগওয়ালাদের।
এটাতে তুমি ভাগ বসাতে চাও কেন? তুমি তো বেশির চেয়ে বেশি… পালক পুত্র হতে পারো! পালক পুত্র কি ওয়ারিস পায়?? ওয়ারিস পেতে আপন ভাই হতে হয়। তোমরা তো কোনভাবেই ওয়ারিস হবার যোগ্যতা রাখ না।
এই কথাগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে বলার পর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলাম- তার (মাওলানা সাদ) কি তারিখ দেওয়ার অধিকার আছে? তাদের ঢুকতেই তো দেয়নি! তারিখ দেবে কোন অধিকারে? সেই তারিখ দিয়ে আরেকটা জোড় করার কথা বলছেন? কীসের অধিকার আছে তার?
তারা বলল, না। তাহলে? যান শেষ।
তারপর হযরত বলেন- “এখন অনেকে বলছে আরে হুজুর (আল্লামা মাহমুদুল হাসান) যে প্যাঁচ ধরলো তা তো খেয়ালই আসেনি!! কথা সত্য কিনা?
ওরা বের হয়ে গেছে তাবলীগ থেকে। বিভিন্ন নামে ইসলামের খেদমত হচ্ছে (মুয়াজ্জিন কমিটি, ইমাম পরিষদ ইত্যাদি।) তারাও একটি বের করেছে।
ওরা যদি ফিরে আসে তাবলীগে তবে কোনো বাধা নেই। ওরা সারা বাংলাদেশ থেকে রুজু করে, তওবা করে ফিরে আসুক। তারা এলান করে দিয়ে বলুক যে, আজ থেকে আমরা আর এতায়েত পার্টি না, আমরা তাবলীগে ফিরে এসেছি।
চট্টগ্রাম থেকে একজন এতায়েতি মুরব্বি ফোন দিয়েছেন। জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর আপনি নাকি এমন বলেছিলেন?
আমি বললাম, ‘ভুল বলে থাকলে বলেন?
বলল, না ঠিকই বলেছেন।
তো, কী করবেন?
নাহ, আজ থেকে আমি নিজেকে আর এতায়েত পার্টি বলব না। আমি রুজু করলাম।
আমি বললাম, “এইত আপনি ভালো বুঝেছেন, এখন সবাইকে বলে দেন সবাই যেন রুজু করে নেয়। সবাই রুজু হয়ে, সবাই মিলে রুজুনামা চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসায় পাঠিয়ে দেন। আমরা সবাই মিলে একসাথে ইজতেমা একটি করব। দুটি করব না। দুটি হলে ঝগড়া হবে। ঝগড়া, মারামারি এটা তাবলীগ নাকি?
তাবলীগ তো মাইর খায়, মাইর দেয় না। যারা মারামারি করে তারা কখনো তাবলীগের কেউ হতে পারে না। তাদের তাবলীগে চোর, মুনাফেক ঢুকে গেছে। দলাদলি সৃষ্টি করে। তাবলীগে তো মারামারি, গালাগালি নাই।
এক জায়গায় প্রশ্ন করলো হুজুর আমরা কী করব? বললাম, “যে গালাগালি করে তাকে বাদ দিন। আলেম কখনো আলেম গালাগালি করে না, যদি আলেম হয়েও গালাগালি করে তবে সেও বাদ…!”
আমি ১২ বছর আগে যে সংশোধনী দিয়েছিলাম তা সংশোধন করলে আজকে এ অবস্থা হতো না। এখন বলে, “আরে হুজুর তো ঠিক বলছিল!!”
ওই যে আমরা মনে করছিলাম, আলেম প্রয়োজনে নাই। এরা ভালো কাজ করতেছে, যথেষ্ট । খেয়াল করি নাই আমরা। এখন বিশ্বাস করছি। এত সুন্দর আখলাক, চরিত্র- স্কুল, কলেজ, বেশ্যা পাড়া থেকে লোক ধরে ধরে এনে কালিমা পড়াইয়া টুপি, জামা পড়াইয়া বুযুর্গ বানিয়ে দিয়েছে। তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
কিন্তু আলেমদের ভুলটা এখানেই হয়েছে যে, আলেমরা সরল মনে বিশ্বাস করে সব তাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে!
এখন ওরা চেয়ার পেয়ে বইসা গেছে, এখন আর আলেম দরকার নাই!! এই কথাগুলো আমি ১২ বছর আগে একটি বইয়ে লিখেছিলাম, ‘আমির আলেম হতে হবে, গাইরে আলেম আমির হতে পারবেনা। তা যদি ১২ বছর আগে মানত তাহলে আজ এমন ফেতনা হতো না।
১০০ জনের ১০০ জন আলেম বাদ দিয়ে এখন ১০০ জনের আমির হলো একজন ইংরেজ!!
ইংরেজরা কি বুঝবে দ্বীন? এই যে আয়াত পড়তেছি বলেন তো কিছু বুঝতেছেন? আলেম ছাড়া দ্বীনের কাজ চলে কিভাবে?
আমরা এইটা বুঝি নাই, আমাদের ভুল হয়েছে। আগের থেকে এটা করা উচিত ছিল। এখন ফল কি হলো?
হে উলামারা! তোমরা ভাবছিলা যে- আমরা মাদরাসা, মসজিদ আর ইমামতি নিয়ে থাকি, আর তারা (সাধারণ পাবলিক) তাবলীগের কাজ করুক। তোমরা তাদের বিশ্বাস করছিলে যে, তাদের মাধ্যমে বিরাট কাজ হচ্ছে বা হবে।
কিন্তু এখন দেখ, সময়মত সব প্রকাশ পেয়ে গেছে, তোমরা যেটাকে ভালো মনে করছিলে, সেটা তোমাদের জন্য কঠিন খারাপ একটা পরিস্থিতি ডেকে এনেছে।
এই তাবলীগের ভেতর আমাদের ওলামাদের আগে থেকেই শক্তিশালী অবস্থান না থাকার কারণে আজ কী পরিমাণ দুরবস্থার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। কাদিয়ানীরা এত শক্তিশালি হয়েও কখনো আমাদের গালি দিতে পারেনি অথচ আজ তারা (এতায়েতিরা) সেই গালি দিচ্ছে। বলছে, আলেম দরকার নাই তাবলীগে!
আল্লাহর রাসুল ﷺ বলে গেছেন, “আলেম ছাড়া আমি কাউকে দ্বীনের কাজের দায়িত্ব দিয়ে যাইনি। তোমরা আলেমদের দেখে শুনে রাখবে, আলেমদের সাথে মিলে মিশে কাজ করবে। আলেমরা যেটা বলে সেটা মেনে নির্দ্বিধায় মেনে চলবে।” এই আলেম সমাজকেই আল্লাহ তাআলা “ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এতায়াতিরা বলে তারা নাকি আল্লাহর রাসুল সা. এর কাজ করবে। কিন্তু আল্লাহর রাসুল সা. এর কথা অমান্য করে বা বাদ দিয়ে অথবা ভুল ব্যাখ্যা করে তারা রাসুলের কোন কাজটা করবে আমার বুঝে আসে না!!
তাদের তো উচিত ছিল এই কথা বলা, ‘আমাদের ভুল হয়ে গেছে, আমরা মাফ চাই।’ কিন্তু মাফ চাইবে তো দূরের কথা, কিছু বলতে গেলেই এখন লাঠি নিয়ে আসে!!
আল্লাহ্ তাদেরকে সঠিক বুঝ ও হেদায়াত দান করুন।
আল্লাহ্ মাহমুদুল হাসান কে সঠিক বুঝ ও হেদায়াত দান করুন।
জয়নাল হুজুর নিজেই চিরদিন তাবলীগ বিরোধী এর জন্য প্রমান দরকার নেই আমি নিজেইনএর চাক্ষুষ সাক্ষী
লিখা প্রকাশ করার সুযোগ আছে জনাব
জি আছে। ইমেল করুন
saidalhasan01@gmail.com
এই আল্লামা তাবলীগ নিয়ে নাক গলায় কেন? সে তো নিজেই তাবলীগ বিরোধীতায় ব্যস্ত। নিজের উস্তাদকে সরিয়ে দিয়ে মাদ্রাসা দখল করে মুহতামিম হয়ে বসে আছে সে কীভাবে তাবলীগ নিয়ে নাক গলায়।
অসংখ্য ধন্যবাদ