নফসের প্ররোচনা থেকে বাঁচার পদ্ধতি কী?


• সুওয়াল :


 

শয়তানের সাথে জিহাদ করে পারা গেলেও নফসের সাথে জিহাদে মাঝে মধ্যেই হারতে হয়। নফসের সাথে জিহাদে জিতার জন্য কি কি পন্থা অবলম্বন করা উচিত যাতে করে জিততে পারি?

 


✍ জাওয়াব;


 

নফস বড়ই খতরনাক। নফস নিজেই গোনাহের প্রতি উদ্ধুদ্ধ হয়। আর শয়তান সেই গোনাহের কাজের প্রতি যুক্তি তুলে ধরে তাতে মগ্ন করায়।

তাহলে সবচে’ বড় ভয়ানক হল এ নফস।

কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ

وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي ۚ إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ [١٢:٥٣

আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল,দয়ালু। [সূরা ইউসুফ-৫৩]

আল্লাহ তাআলা যার প্রতি রহম করেন, কেবলি সেই ব্যক্তি নফসের প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকতে পারে।

কয়েকটি পদ্ধতি বলছি। পারলে সব ক’টি মানতে চেষ্টা করুন!

বেশি বেশি ইস্তিগফার করতে হবে। ও গোনাহ থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَىٰ مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ [٣:١٣٥]

أُولَٰئِكَ جَزَاؤُهُم مَّغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ [٣:١٣٦]

তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।

তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান। [সূরা আলে ইমরান-১৩৫-১৩৬]

কোন আল্লাহ ওয়ালার সোহবতে সুযোগ হলেই সময় দেয়া উচিত।

ভাল মানুষের সাহচর্য গোনাহ থেকে মুক্ত হতে সহায়ক হয়ে থাকে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ [٩:١١٩

হে ঈমানদারগণ,আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। [সূরা তওবা-১১৯]

সর্বদা আল্লাহ আমাকে দেখছেন এ মানসিকতা দিলে বদ্ধমূল করতে হবে।

যে কোন মুহুর্তে আমার মৃত্যু হতে পারে, এ বিশ্বাস দিলে অটুট রাখতে হবে। গোনাহের হালাতে মারা গেলে কী হবে? এ ভয় সর্বদা জাগরুক রাখতে হবে।

وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَىٰ [٧٩:٤٠] فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَىٰ [٧٩:٤١

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে,তার ঠিকানা হবে জান্নাত। [সূরা নাযিয়াত-৪০-৪১]

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী, সাহাবাগণের ঈমানদীপ্ত ঘটনা, এবং বুযুর্গানে দ্বীনের কিতাবাদী বেশি বেশি পড়তে হবে।

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ [٨:٢]

যারা ঈমানদার,তারা এমন যে,যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। [সূরা আনফাল-২]

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সকল প্রকার গোনাহ থেকে মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। তার প্রিয় বান্দা-বান্দী হিসেবে কবুল করুন। আমীন।


ফতওয়া প্রদান;
মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

2 thoughts on “নফসের প্ররোচনা থেকে বাঁচার পদ্ধতি কী?

  1. আল্লাহর রহমত দ্বীনের খেদমত চালিয়ে যান ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *