ইংরেজ বিতাড়নের পর আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেমন হওয়া উচিত ছিল

জাস্টিস আল্লামা মুফতি তাকি উসমানী

পাকিস্তান হওয়ার আগে হিন্দুস্তানে তিনটি বড় বড় শিক্ষাব্যবস্থা প্রসিদ্ধ ছিল। দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাব্যবস্থা। আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির শিক্ষাব্যবস্থা। নদওয়াতুল উলামার শিক্ষাব্যবস্থা।

সম্ভবত ১৯৫০ সনে আমার আব্বাজান মুফতি মুহাম্মদ শফী রহ. এক মজলিসে কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “পাকিস্তান হওয়ার পর আমাদের না আলীগড় ইউনিভার্সিটির দরকার আছে, না দরকার আছে দারুল উলুম দেওবন্দের। বরং আমাদের দরকার এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থার, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে ধারাবাহিকসূত্রে চলে আসছিল।”

শ্রোতারা একথা শুনে বড় আশ্চর্য হয়ে গেলেন। দারুল উলুম দেওবন্দের এমন একজন বড় মুফতি সাহেব এমন কথা বলছেন – পাকিস্তান হওয়ার পর দেওবন্দের প্রয়োজন নেই। আমাদের এক নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন।

আমার আব্বাজান যে কথা বলেছিলেন তা প্রকৃতপক্ষে অনেক গভীর একটি কথা। এবং সেটি না বুঝার কারণে অনেকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আসলে হিন্দুস্তানে যেই তিন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল সেটি প্রকৃতপক্ষে স্বভাবজাত কোন শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। বরং সেটি ইংরেজদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি পরিণতি এবং ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের একটি প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ছিল।

শতাব্দীর পর শতাব্দী মুসলমানদের যেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে আসছিল তাতে মাদ্রাসা এবং স্কুলের মধ্যে কোন ধরনের পার্থক্য ছিল না। বিভাজন ছিল না। সেখানে শুরু থেকে নিয়ে ইংরেজদের আসা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এই অবস্থাই বিদ্যমান ছিল যে, মাদ্রাসা অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়ে স্কুলের শিক্ষাও দেওয়া হতো এবং মাদ্রাসার শিক্ষাও দেওয়া হতো।

তখনকার অবস্থা ছিল এরকম- ইসলাম প্রত্যেককে আলেম হওয়া জরুরী সাব্যস্ত করে নি। বরং আলেম হওয়া- এটি ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ প্রয়োজন পরিমাণ কোন এলাকায়, কোন দেশে যদি আলেম থাকে তাহলে অন্যদের দায়িত্ব আদায় হয়ে যায়। কিন্তু দ্বীনের বুনিয়াদি শিক্ষা হাসিল করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ। এটি প্রত্যেকের উপর ভিন্ন ভিন্নভাবে ফরজ। তো তখনকার মাদ্রাসাগুলোর অবস্থা ছিল এরকম যে তাতে ফরয পর্যায়ের শিক্ষা নির্বিশেষে সকলকে দেওয়া হতো। প্রত্যেকে সেই শিক্ষা লাভ করতেন। যিনিই মুসলমান তিনিই সেই শিক্ষা লাভ করতেন। হ্যাঁ, যিনি ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে চান তার জন্য ছিল ভিন্ন ব্যবস্থা। যেভাবে সাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে কেউ বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে চাইলে তার জন্য ভিন্ন জায়গা রয়েছে।

গত বৎসর আমি মরক্কো গিয়েছিলাম। সেখানে জামিয়া কারবীন নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যদি আমরা ইতিহাসের পাতায় প্রসিদ্ধ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খোঁজ নেই তাহলে চারটি মৌলিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের নজরে পড়ে। তার মধ্যে সর্ব প্রথম নজরে পড়ে মরক্কোর জামিয়া কারবীন। দ্বিতীয় জামিয়া যাইতুনিয়া। তৃতীয় মিশরের জামিয়া আযহার। চতুর্থ দারুল উলুম দেওবন্দ। ইতিহাসে তাদের পর্যায়ক্রম এরকমই।

তো এই তিন ইউনিভার্সিটির প্রথমটি হচ্ছে জামিয়া কারবীন, যা মরক্কো অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ইউনিভার্সিটি।

ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে আমরা দেখতে পাই, এই জামিয়া কারবীনে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা তাফসীর হাদীস ফিকহ যেমন পড়ানো হত, তেমনি তার সাথে চিকিৎসা গণিত জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি সাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞানও পড়ানো হতো।

ইবনে খালদুন, ইবনে রুশদ, কাযী ইয়াযসহ আমাদের আকাবিরদের এক বড় সংখ্যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। এটাকে দুনিয়ার প্রাচীন ইউনিভার্সিটি বলা হয় এই দৃষ্টিকোণ থেকেই যে, ছোট ছোট মাদ্রাসা তো সব জায়গাতেই আছে। কিন্তু জামিয়া কারবীন এমন এক ইউনিভার্সিটির মর্যাদা রাখত যেখানে দ্বীনী এবং দুনিয়াবী সকল জ্ঞান-বিজ্ঞান পড়ানো হত।

এই ইউনিভার্সিটিতে এখনও হিজরী তৃতীয় শতকের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের বিভিন্ন নমুনা রাখা আছে। ইউনিভার্সিটি থেকে যারা পড়াশোনা করেছেন তাদের বিভিন্ন আবিষ্কার নমুনা স্বরূপ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আপনি তৃতীয় শতকের কথা একটু চিন্তা করুন। সেখানে ইসলামী জ্ঞানবিজ্ঞানের রাজপুত্ররাও তৈরি হয়েছেন আবার ইবনে রুশদের মত দার্শনিকও তৈরি হয়েছেন। সেখানে বড় বড় আলেমও তৈরি হয়েছেন, বড় বড় বিজ্ঞানীও তৈরি হয়েছেন।

সেখানে নিয়ম ছিল, ইসলামের ফরযে আইন ইলম সবাইকে একত্রে দেয়া হত। তারপর যদি ইসলামী কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে চাইত তাহলে তিনি জামিয়া করবীনের ইসলামি কোনো শাখায় পড়তেন। যদি কেউ গণিত পড়তে চাইতেন তাহলে গণিতও সেখানেই পড়া যেত। কেউ ডাক্তারি পড়তে চাইলে সেখানেই সে ডাক্তারি পড়তে পারত। জামিয়া যায়তুনিয়া, জামিয়া আযহারে এই নিয়মই চলে আসছিল। এই তিনটি ইউনিভার্সিটিই আমাদের ইতিহাসে অনেক প্রাচীন। সেখানে দ্বীনী শিক্ষা এবং সাধারণ শিক্ষা এভাবে দেওয়া হত।

সেখানে আপনি এ দৃশ্যও দেখতে পাবেন যে, কাযী ইয়ায যিনি কুরআন সুন্নাহয় অনেক বড় পণ্ডিত, যদি তার চেহারা সূরত বেশভূষা দেখা হয়, যদি ইবনে খলদুন, যিনি অনেক বড় দার্শনিক, তার বেশভূষা দেখা হয়, তাহলে দেখা যাবে, দুজনের চেহারা সূরত লেবাস পোশাক জীবন যাপন পদ্ধতি এক রকম। যদি প্রসিদ্ধ ইসলামী বিজ্ঞানী ফারাবী, ইবনে রুশদ, আল বেরুনি প্রমুখের জীবন যাপন পদ্ধতির সাথে তখনকার মুফাসসির মুহাদ্দিসদের জীবনী মিলান তাহলে তাদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য ধরতে পারবেন না।

তারা সকলেই নামাজ পড়তেন। রোযাও সবাই রাখতেন। নামাজ রোযার মাসায়েল তাদের সবারই জানা ছিল। মোটকথা ইসলামের মৌলিক বিধান যা সকলের উপর জানা ফরয তা সবাই জানতেন।

বিভাজন শুরু হল কোত্থেকে

ইংরেজরা আমাদের দেশে এসে ষড়যন্ত্র করে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়, যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন আমাদের আকাবিরগণ মানুষের দ্বীন হেফাজতের জন্যে, কমপক্ষে যে ফরযে কেফায়া ইলম আছে সেটা সংরক্ষণ করার জন্যে তারা দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান এমন খেদমত আঞ্জাম দিয়েছে যার নজির ইতিহাসে মেলা ভার।

কিন্তু এটি ছিল একটি অপারগ অবস্থার কথা। আসল অবস্থা তো সেটাই যা জামিয়া কারবীনে ছিল। জামিয়া যায়তুনিয়ায় ছিল। জামিয়া আযহারে শুরুর দিকে ছিল। যদি পাকিস্তান সত্যিকার অর্থেই ইসলামী রাষ্ট্র হত এবং সঠিক অর্থে তাতে ইসলামী বিধান প্রয়োগ হত তাহলে সেখানে কোনো অবস্থাতেই আমার আব্বাজানের কথা অনুযায়ী না আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার ছিল, না নদওয়াতুল উলামার দরকার ছিল, আর না দারুল উলুম দেওবন্দের দরকার ছিল। আমাদের তো দরকার ছিল জামিয়া কারবীনের, জামিয়া যায়তুনিয়ার। আমাদের এমন ইউনিভার্সিটির দরকার ছিল যাতে সব ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞান একত্রে পড়ানো হবে। সবাই ইসলামের রঙে রঙিন হবে। চাই সে ইঞ্জিনিয়ার হোক, কিংবা ডাক্তার হোক। চাই সে অন্য কোন বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত হোক। সে ইসলামের আলোয় আলোকিত হবে।

কিন্তু আমাদের উপর এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যা আমাদেরকে মন-মস্তিষ্কের দিক থেকে দাসত্ব শিখানো ছাড়া আর কিছুই শেখায়নি। তারা আমাদেরকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আকবর এলাহাবাদী বলেছিলেন, শুধু পেট ভরার জন্য আর পেট ভরার রাস্তা বের করার জন্য ইংরেজরা এ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এসেছিল। এর ফলে মুসলমানদের গোটা ইতিহাস-ঐতিহ্য তছনছ হয়ে গেছে।

ফলাফল এই হয়েছে, এই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় গড়ে উঠা প্রজন্ম বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষা না থাকার কারণে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো তারা জানেনা। স্কুল-কলেজ ইউনিভার্সিটির অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানে না, ইসলামের ফরজ কয়টি। দ্বিতীয়ত, তাদের উপরে এমন চিন্তা চেতনা চেপে বসেছে যে- যদি জ্ঞান-বিজ্ঞান চাও, যদি উন্নতি চাও তাহলে পশ্চিমের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। তৃতীয়ত, এই প্রজন্মের সভ্যতা-সংস্কৃতি পরিবর্তিত হয়ে গেছে। তাদের মনে এ কথা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, যদি দুনিয়াতে উন্নতি করতে হয় তাহলে তাদের চিন্তা চেতনা দিয়েই তা সম্ভব। পশ্চিমা পরিবেশেই সম্ভব। তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতিতেই সম্ভব।

আফসোস! নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা গ্রাজুয়েট, তারা আমাদের সমালোচনা করে বলেন- এই সকল লোক ইসলামের মধ্যে ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা ইজতেহাদ করে না।কুরআন সুন্নাহয় বিভিন্ন ইজতিহাদ অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু তার জন্যে বিধিনিষেধ রয়েছে। নিয়মনীতি রয়েছে।

এসব লোক এমন জিনিস যাতে ইজতিহাদের দরজা সবদিক থেকে খোলা সেখানে ইজতিহাদ করেনা। ইজতিহাদের আসল ক্ষেত্র ছিল বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি সমকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞান। এসব বিষয়ে কেউ ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করে নি। কিন্তু এই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে আপনারা কেন এমন মুজতাহিদ তৈরি করতে পারলেন না, যারা পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। আপনারা কেন এমন বিজ্ঞানী তৈরি করতে পারলেন না যারা ডাক্তারী, গণিত ইত্যাদি জ্ঞানবিজ্ঞানে নিত্যনতুন আবিষ্কারের রাস্তা খুলতে পারে। যেখানে ইজতিহাদের দরজা সব দিক থেকেই খোলা ছিল সেখানে তো ইজতিহাদ করলেন না। আর যেখানে কুরআন সুন্নাহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ লাগিয়ে দিয়েছে ইজতিহাদের ক্ষেত্রে, সেখানে এসে আলেমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তারা কেন ইজতেহাদ করেন না।

এই শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষের চিন্তাই পাল্টে দিয়েছে। আগে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মনে করা হতো একটি সম্মানিত জিনিস যার উদ্দেশ্যই হচ্ছে সমাজ ও সৃষ্টির সেবা। জ্ঞান অর্জনের এটি হলো আসল উদ্দেশ্য। হ্যাঁ যদি এর মাধ্যমে জীবিকার কোন উপকার অর্জিত হয়ে যায় সেটা দ্বিতীয় পর্যায়ের। কিন্তু আজ ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে গেছে। ইলমের উদ্দেশ্য শুধু টাকা কামানো। ইলমের উদ্দেশ্য হল, এই পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করো যাতে মানুষের পকেট থেকে বেশি থেকে বেশি টাকা বের হয়ে আসে। তোমার জ্ঞান তখন কাজে আসবে যখন তুমি অন্যের মোকাবেলায় বেশি থেকে বেশি টাকা কামাতে পারবে।

আপনি দেখবেন বর্তমানে কত লোক পড়াশোনা করছে। গ্রাজুয়েশন করছে। মাস্টার ডিগ্রি করছে।আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, তারা কেন পড়ছে। তারা বলবে, এজন্য পড়ছি- ক্যারিয়ার ভালো হবে। ভালো চাকরি পাওয়া যাবে। টাকা বেশি পাওয়া যাবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য পুরোপুরি পাল্টে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হয়ে গেছে টাকা কামানো। এলেম অর্জন করে সমাজের সেবা, দেশ ও জাতির সেবা করবে এই চিন্তা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় থেকে অর্জিত হয় না।

ফলাফল হয়েছে এই- প্রত্যেকেই টাকা কামানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তার না আছে দেশের ফিকির না আছে জাতির চিন্তা। না আছে সৃষ্টির সেবার কোন উদ্দেশ্য। অন্তরে সৃষ্টির সেবার আগ্রহই সৃষ্টি হয়না। সে দিন রাত শুধু টাকা কামানোর ধান্দায় থাকে। কিভাবে বেশি বেশি টাকা কামানো যায়। কিভাবে চুরি-ডাকাতি ঘুষ জুয়া নাজায়েজ পদ্ধতিতেও টাকা উপার্জন করা যায়।

আচ্ছা বলুন তো বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা শিক্ষিত হয়েছেন এই শিক্ষাব্যবস্থা কয়েকজন লোককে এমন তৈরি করেছেন যারা সৃষ্টির খেদমত করেছেন। তারা কতটুকু উপকার করেছেন সৃষ্টির। আমাদেরকে তো আমাদের নবী শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আল্লাহ, দুনিয়াকে আমাদের সবচেয়ে বড় কামনার বস্তু বানিও না। এমন যেন না হয়, আমরা সবসময় দুনিয়া উপার্জনের ধান্দায় থাকি। এবং আমাদের জ্ঞানের শেষ সীমা যেন কখনো দুনিয়া না হয়। এবং দুনিয়া যেন আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু না হয়।

আমি আমার আব্বাজানের কথা বলছিলাম। তার কথার উদ্দেশ্য ছিল, ইংরেজদের গোলামী করার পর শিক্ষাব্যবস্থার রূপ ও স্বরূপ যেভাবে পাল্টে গেছে সেই শিক্ষাব্যবস্থাকে গোঁড়া থেকে পরিবর্তন করে সেই পথে পরিচালিত করতে হবে যে পথ জামিয়া কারবীন আমাদেরকে দেখিয়েছে। জামিয়া যাইতুনিয়া আমাদেরকে দেখিয়েছে। এবং আল-আজহার তার শুরুর জামানায় দেখিয়েছে। আমি শুরুর দিকে এজন্য বললাম যে আজ জামিয়া আজহারের রূপরেখাও পাল্টে গেছে। এজন্য আমি শুরুর সময়ের কথা বলছি।

তো আমাদের এখানে সরকারিভাবে সেই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োগ করা যায়নি। এজন্য এখন বাধ্য হয়ে কমপক্ষে দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা ব্যবস্থা তো সংরক্ষণ করতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ। এই উদ্দেশ্যে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যতদিন আমাদের শাসক গোষ্ঠীর ওপর এবং তাদের নিয়ম নীতির উপর ভরসা না হবে এবং নিকট ভবিষ্যতেও ভরসা হওয়ার কোন আশা দেখতে পাচ্ছি না, এইজন্য ওই সময় পর্যন্ত আমরা এই মাদ্রাসাগুলো পুরোপুরি সংরক্ষণ করব। মাদ্রাসাকে এমন ভাবে বজায় রাখবো যেভাবে আমাদের আকাবীরে দেওবন্দ এটাকে বজায় রেখেছেন। সেগুলোর ওপরে সামান্য আঁচও পড়তে দিব না। ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আমরা চাই, আস্তে আস্তে এই জাতি সেদিকেই অগ্রসর হোক যা আমাদের প্রথম টার্গেট ছিল। সেটাকে কেন্দ্র করেই আমাদের ‘হেরা ফাউন্ডেশন’ এর এই ছোট্ট প্রেজেন্টেশন।

আমি সব সময় বলি এবং সবসময় বলবো যে, আপনাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা আমাদের এই প্রজন্মকে ইংরেজদের চিন্তাগত দাসত্ব থেকে বের করুন। আপনাদেরকে এই পরিচয় দিতে হবে যে, আলহামদুলিল্লাহ, আমরা একটি স্বাধীন জাতি। আমাদের রয়েছে স্বতন্ত্র চিন্তা-চেতনা। আমরা আমাদের নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিন্তা চেতনা ধারণ করি। লালন করি। যা কিছু হবে সেগুলো পশ্চিম থেকে হবে। আমরা পশ্চিমের চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে উন্নতি করব- এমন ধ্যান-ধারণা বর্জন করুন। আল্লাহর ওয়াস্তে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এধরনের চিন্তা থেকে রক্ষা করুন। তাদের ভিতরে ইসলামী চিন্তা চেতনা সৃষ্টি করুন। জাগ্রত করুন। হ্যাঁ পশ্চিমের সব জিনিস খারাপ নয়। কিছু জিনিস ভালো। কিন্তু সেই ভালো জিনিস গুলো নিন। খারাপ জিনিসগুলো বর্জন করুন। খুয মা সাফা দা মা কাদিরা এই নীতির উপর চলুন। তাহলে আমরা আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারব ইনশাআল্লাহ।

অনুবাদ ও সংক্ষেপণ : এনাম হাসান জুনাইদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *