মেডিটেশন বা কোয়ান্টাম মেথড কি জায়েজ?

প্রশ্ন- আমাদের দেশে গুরুজী শহীদ আল বোখারী নামক একজন কোয়ান্টাম মেথড মেডিটেশন কোর্স করায়। প্রতি মাসে ৪ দিনের একটি কোর্স করায় যেখানে পার কোর্স প্রায় ১৫০০ জন থাকে আর ফি ৯০০০ টাকা। অনেকেই কোর্সটি করছে।ইউটিউবে দেখলাম আলেমরা নাজায়েজ বলছে।কারণ এর মধ্যে কিছু শিরক এর বিষয় আছে। এই প্রতারক হিন্দুদের যোগব্যায়াম এর বিকল্প হিসেবে মুসলিমদের জন্য কোয়ান্টাম মেথড এনেছেন। মুসলিমদের ইমান আমল নষ্ট করে পথভ্রষ্ট করছেন।

যতদূর জানলাম এই প্রতারক হাই প্রোফাইল মানুষদের শিষ্য বানায়ে সমালোচনার পথ আটকাইসে ওর মেথড আসলে সাইকোলজিস্ট এম ইউ আহমেদ স্যার এর থেরাপি আর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে আসা সিলভা মেথডের খিচুড়ি। খুব ক্ষতিকর। আপনার নিজস্ব চিন্তা করার ক্ষমতা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা লোপ পাবেই পাবে। আর যদি আপনি মানসিক অসুবিধায় ভুগে থাকেন তা হলে সারা জীবন শেষ। আপনি জড় হয়ে গেলেন। গেলেন ভাল হতে; আজীবনের তরে পঙ্গু হয়ে ফিরবেন। জ্যোতিষবিদ ছিল আগে হাত দেখত।এই স্বীকার করেছে যে ১৯৭০-১৯৯২ হাত দেখানোটা প্রতারণা ছিল।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রচলিত কোয়ান্টাম মেথড এর মেডিটেশন সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ ও হারাম। সুতরাং এসব থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য আবশ্যক।

অনেকগুলো কারণেই এটি হারাম। এর মাঝে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অনুসরণে অন্তর্গুরুকে পাওয়ার ধ্যান, শিরকী ধারণা, হারাম বাদ্যযন্ত্র ও গানের চর্চা, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশাসহ অনেক অনৈসলামিক কাজ ও আকীদা রয়েছে।

قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ [١٥:٣٩

সে বলল: হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ট করে দেব। ই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। [সূরা হিজর-৩৯]

عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ

হযরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত। রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন-আমাদের দ্বীনের মাঝে যে ব্যক্তি নতুন বিষয় আবিষ্কার করে যা তাতে নেই তাহলে তা পরিত্যাজ্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬০৮, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-২৫৫০, সহীহ মুসলিম-৪৫৮৯}

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নি পুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পাদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}

وأبو حنيفة أشد الأئمة قولا فيه ومذهبه فيه أغلظ المذاهب وقد صرح أصحابه بتحريم سماع الملاهي كلها المزمار والدف حتى الضرب بالقضيب وأنه معصية يوجب الفسق وترد به الشهادة بل قالوا التلذذ به كفر(عون المعبود –كتاب الأدب– باب كراهية الغناء والزمر 13/186(

অর্থাৎ আর আবু হানিফা রাহ. এ ব্যাপারে সবচে’ কঠোর। তার মাযহাব হলো সবচে’ কঠিন , তার সঙ্গীরা একথা সুস্পষ্ট করেছেন যে, সকল প্রমোদ সামগ্রী হারাম , সর্ব প্রকার বাঁশি এবং “দফ” ও। এমন কি লাঠি দিয়ে বাড়ি মারাও, আর এটা গোনাহ যা ফাসেক হওয়াকে ওয়াজিব করে, যার ফলে তার সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য নয়, বরঞ্চ ফুকাহারা বলেন-এসব দ্বারা আনন্দ নেয়া কুফরী। (নাউজুবিল্লাহ) {আউনুল মাবুদ-১৩/১৮৬}

وَاسْتِمَاعُ ضَرْبِ الدُّفِّ وَالْمِزْمَارِ وَغَيْرِ ذَلِكَ حَرَامٌ وَإِنْ سَمِعَ بَغْتَةً يَكُونُ مَعْذُورًا وَيَجِبُ أَنْ يَجْتَهِدَ أَنْ لَا يَسْمَعَ قُهُسْتَانِيٌّ (رد المحتار–كِتَابُ الْحَظْرِ وَالْإِبَاحَة–فَصْلٌ فِي الْبَيْعِ-9/566)

অর্থাৎ দফের বাজনা ও বাঁশির আওয়াজ এবং এ জাতীয় বিষয় শোনা হারাম, আর যদি আচমকা শোনে ফেলে তবে তাকে মাজুর ধরা হবে। আর চেষ্টা করবে যেন তা না শুনতে পায়। {ফাতওয়ায়ে শামী-৯/৫৬৬}

ফতওয়া প্রদান -লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *