দ্বীনের দাওয়াতের জন্য ইসলামের বিধানে ছাড় দেয়া যায় কি?

মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী | সম্পাদক : মাসিক আদর্শ নারী


দ্বীনের দাওয়াতের উদ্দেশ্য হলো, দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে ইসলামের বিধান পালনে ছাড় দেয়া হলে, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে এবং তারা মনে করবে–এটা দ্বীনের অংশ। তখন সেরূপ দাওয়াতের দ্বারা ছাড়েরও দাওয়াত হবে–যা কাম্য নয়।

অপরদিকে সেই ছাড়ের সাথে যদি অনেক লোকের সংশ্লিষ্টতা হয়, তখন তার খারাবির ব্যাপকতা হবে। যা আরো মারাত্মক বিষয়।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন–
فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلا الضَّلالُ
“হকের পর কী রয়েছে গোমরাহী ছাড়া?”
(সূরাহ ইউনুস, আয়াত নং ৩২)

এক্ষেত্রে যারা দ্বীনের আমল থেকে দূরে, তাদের অবস্থার সাথে তুলনা চলে না। কেননা, তাদের কাজকে কেউ দ্বীন মনে করে না। তাই সেখানে বিভ্রান্তির অবকাশই নেই।

একটি উদাহরণ দিচ্ছি, স্কুল-কলেজের মুসলিম নামধারী ছেলেরা যারা প্যান্ট-শার্ট পরে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে এবং বিজাতীয় স্টাইলে চলাফেরা করে, আর আমলের দিক দিয়ে জিরো অবস্থানে, তাদের কেউ যদি কিছুটা হিদায়াত পেয়ে সেই প্যান্ট-শার্টের সাথে মাথায় টুপি পরে মসজিদে নামায পড়তে যায়, তখন দ্বীনের পথে তার সেই ২০% পার্সেন্ট অবস্থান দেখে কেউ তার সমালোচনা করে না, বরং তার সেই কাজে মানুষ খুশীই হয়। কারণ, সে জিরো অবস্থান থেকে দ্বীনের পথে কিছুটা হলেও সামনে অগ্রসর হয়েছে।

কিন্তু কোন কওমী স্বনামধন্য আলেম দ্বীনের আমলে ১০০% পার্সেন্ট অবস্থানে থেকে যদি কখনো কোন কারণে শার্ট-প্যান্ট পরে মসজিদে ইমামতী করতে যান, তখন তা নিয়ে সমালোচনা ঝড় বইবে। কারণ, তিনি দ্বীনের পথে ১০০% পার্সেন্ট অবস্থান থেকে পিছনে গিয়ে ৯০% পার্সেন্টে নেমে এসেছেন।

এভাবেই দ্বীনবিমুখদের কোনরকম দ্বীনী কাজকেও দ্বীনের পথে সামনে অগ্রসর হওয়া মনে করা হয়। পক্ষান্তরে দ্বীনের পথিকদের দ্বীনের কোন বিধানে ছাড় দেয়াকে দ্বীনের অবস্থান থেকে পিছনে চলে যাওয়া গণ্য করা হয়। অথচ ইসলামে সামনে অগ্রসর হওয়াই কাম্য, পিছনে চলে যাওয়া কখনো কাম্য নয়। এমনকি দাওয়াতের নামেও নয়।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَى وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
“(হে নবী!) আপনি বলে দিন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর হিদায়াতই তো হচ্ছে হিদায়াত। যদি আপনি তাদের (বেদ্বীনদের) আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন–ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই।”
(সূরাহ বাক্বারা, আয়াত নং ১২০)

তাইতো দ্বীনবিমুখ শ্রেণী নারী-পুরুষ একত্র হয়ে কোন ইসলামী আলোচনার অনুষ্ঠান করলে কাউকে সমালোচনা করতে দেখা যায় না। কারণ, সবাই মনে করে, ওরা জিরো পাসেন্ট থেকে দ্বীনের পথে কিছুটা সামনে এগিয়েছে। কিন্তু কোন কওমী উলামা ফাউন্ডেশন নারী-পুরুষকে বেপর্দাভাবে একাকার করে কোন অনুষ্ঠান করলে প্রচুর সমালোচনা শুনতে হবে। কেননা, তাদের ক্ষেত্রে সেটা দ্বীনের পথে অগ্রসরতা নয়, বরং পিছনে চলে যাওয়া–যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন–
وَمَا يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَلَا الْمُسِيءُ ۚ قَلِيلًا مَّا تَتَذَكَّرُونَ
“অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়, আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং যারা কুকর্মী (তারাও সমান নয়।) তোমরা অল্পই অনুধাবন করে থাকো।”
(সূরাহ মু‘মিন, আয়াত নং ৫৮)