মুসলমানদের বেশভূষায় স্বাতন্ত্র্য শরীয়তে কাম্য এবং অমুসলিমদের ও ফাসিক-ফাজির দ্বীনবিমুখদের বেশভূষা গ্রহণে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ সম্পর্কে মূলনীতি বর্ণনা করে হাদীসে বলা হয়েছে–
“এ হাদীসে বর্ণিত সামঞ্জস্যতার অর্থ হলো, যে ব্যক্তি নিজেকে কাফের-বেদ্বীনদের মত বানাবে যেমন, তারা যে লেবাস-পোশাক ইত্যাদি পরে থাকে তা পরিধান করবে অথবা ফাসিক-কুকর্মীদের সাথে বা বদকারদের সাথে সামঞ্জস্যতা গ্রহণ করবে, সে পাপের পথে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। আর যে সুফী-বুযুর্গানে দ্বীন ও নেককার-পরহেজগারদের মতো বেশ-ভূষা গ্রহণ করবে, সে নেকের পথে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে।”
“যদি কুকর্মকারী ও দ্বীনবিমুখদের কোন পোশাকের সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্টতা হয়, তাহলে অন্যদের জন্য সেই পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ হবে।”
(আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ১২তম খণ্ড, ১১ পৃষ্ঠা)
অবশ্য উক্ত সামঞ্জস্যতার বিষয়টি শুধু পোশাকের সাথেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর আওতা সুবিস্তৃত। এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষণ করে আল্লামা যাইনুদ্দীন মুহাম্মদ আল-মুনাভী (রহ.) ফাতহুল কাদীর শরহে জামি‘উস সগীর গ্রন্থে হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন–
অর্থাৎ যে ব্যক্তি বাহ্যিক শরীরে বেদ্বীন-ধর্মবিমুখদের বেশভূষা গ্রহণ করবে, তাদের কাজের মাধ্যমে নিজের পরিচয় দিবে, তাদের স্বভাব-চরিত্রের দ্বারা নিজেকে গঠন করবে এবং তাদের চালচলন ও লেবাস-পোশাক এবং তাদের কোন কিছু কাজ অবলম্বন করবে, সে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।”
তবে সেই সামঞ্জস্যতার প্রশ্নে পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়টি উক্ত হাদীসের সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে সংশ্লিষ্ট। এ জন্যই এ হাদীসটিকে ইমাম আবু দাউদ (রহ.) স্বীয় সুনানে আবু দাউদ হাদীসগ্রন্থে কিতাবুল লিবাস–পোশাক-পরিচ্ছদের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।
এ হাদীসের বর্ণনার আলোকে মুসলমানদের জন্য শার্ট-প্যান্ট, টাই ইত্যাদি পোশাক যা সাধারণত ওলী-বুযুর্গগণ পরেন না, বরং পূর্ণ দ্বীনদারী ও পরহেগারী যাদের ভিতরে নেই তারাই পরিধান করে থাকেন, তা পরার নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত হয় এবং পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবী,জুব্বা, টুপি ইত্যাদি পোশাক যা দ্বীনদার-বুযুর্গগণ পরে থাকেন তা পরার আবশ্যকতা বুঝা যায়। এ জন্যই হযরত হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলীফা হযরত মাওলানা হাকিম আবরারুল হক (রহ.) ‘এক মিনিট কা মাদরাসা’ বইয়ে শার্ট-প্যান্ট ইত্যাদি পরাকে কবীরা গুনাহ বলে উল্লেখ করেছেন। তেমনি জুমহুর উলামা-মাশায়িখ ও মুফতিয়ানে কিরাম শার্ট-প্যান্ট, টাই ইত্যাদি পরাকে নাজায়িয ও মাকরূহে তাহরীমী বলেন।