মাওলানা আলী আযম
কিয়ামত অতি নিকট এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রকাশ আছে কিয়ামতের আগে মুসলিমরা বহুদলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এবং দিনেদিনে এই বিভক্তি ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে। নিত্যনতুন ভয়াবহ ফিরকার আবির্ভাব ঘটবে। তারা নিজেদের খাঁটি মুসলমান দাবি করবে। অন্যদের বাতিল, কাফির, মুশরিক ইত্যাদি নামে অবহিত করবে। অথচ বাস্তবে তারা নিজেরাই ধর্মের নাম নিয়ে অধর্মের কাজ করবে। কোরআন-হাদীসের ভাষ্যমতে কিয়ামতের বেশকিছু আলামত রয়েছে। তার মধ্যে ফিরকা-বৃত্তিটাও অন্যতম। সে ফিরকা-বৃত্তিটা গুরুতরভাবে চলছে এখন। দেশেদেশে ইসলাম নামধারী অসংখ্য ফিরকার সয়লাব।
প্রকাশ আছে, কিয়ামতের আগে ইসলাম তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। সেখান থেকে শুধু একটিমাত্র দল জান্নাতি । বাকিসব জাহান্নামি হবে। অথচ বর্তমানে ইসলাম কতো দলে বিভক্ত আল্লাহই ভালো জানেন। হাদিসের ভাষ্যমতে কিয়ামতের আগে ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকা এতো কঠিন হবে, যতো কঠিন জ্বলন্ত আগুনের কয়লা হাতে রাখা । সেই সময়টাও আমাদের সামনে উপস্থিত। চারিদিকে ফিৎনার সয়লাব। বেশিরভাগ ফিৎনা ধর্মীয় মোড়কেই আত্মপ্রকাশ করছে। সেই ধারাবাহিতায় হেযবুত তাওহীদ নামের নব্য আরেক ফিৎনা আমাদের সামনে উপস্থিত। যা দিনদিন লাগামহীনভাবে বিস্তার লাভ করছে সর্বত্র।
এই ফিরকার বেশকিছু হাস্যকর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা ইসলামকে অন্যভাবে প্রকাশ করতে মরিয়া। এই দলে রয়েছেন একজন এমাম (ইমাম)। তারা ইসলাম লিখে না। লিখে “এসলাম”। অর্থাৎ ধর্মীয় পরিভাষাগুলোকে এভাবে বিকৃত করে। একবার তাদের এক কর্মীকে শব্দ বিভ্রাট নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। বলেছিলাম আপনারা এভাবে এমাম, এসলাম, হেযবুত ইত্যাদি শব্দগুলোকে বিকৃতভাবে লিখেন কেনো? তিনি আমাকে কোথাকার এক বাংলা সাহিত্যিকের বরাত দিয়ে বললেন, বাংলা সাহিত্য অনুযায়ী নাকি শব্দগুলোকে এভাবে লিখতে হবে। অর্থাৎ সহীহভাবে লিখা যাবেনা। আজীব ব্যাপার!
তাকে অনেক বুঝালাম। বললাম ভাই আমি কোথাকার কোন সাহিত্যিকের কথাকে অগ্রাধিকার দিবো কেনো? আমি মুসলিম। আমার ভাষা হবে ধর্ম অনুযায়ী। অশুদ্ধ উচ্চারণ কেনো প্রচার করবো? তিনি তা মানতে নারাজ। কারণ ব্রেন ওয়াশ। তারা বলে ইসলাম দাঁড়ি, টুপি কিম্বা পাঞ্জাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অন্তরে ঈমান থাকলেই হয় । আচ্ছা, দাঁড়ি, টুপি, পাঞ্জাবি এসব মুসলিমের বাহ্যিক পরিচয় নয় কি? নাকি বিধর্মীদের কালচার? যদি বলেন মুসলিম হবার বাহ্যিক প্রমাণ।তাহলে প্রশ্ন থাকবে কেনো আপনাকে বাহ্যিক পরিচিতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে হবে? এটা তো সুবিধাবাদী চিন্তাধারা। মুনাফিক হবার লক্ষণ।
মুসলিম হবার বাহ্যিক কিছু পরিচিতি আছে। যেমনটা আছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা অন্য ধর্মাবলম্বী হবার। তাহলে আপনি সে পরিচিতিকে এড়িয়ে চলবেন কেনো? কারণ হলো, আপনি যখন বলবেন, ইসলাম দেখানোর জিনিস নয়। মানার জিনিস। (যদিও আপনি মানলেন না) তখন আপনি হয়ে যাবেন নিরাপদ। অর্থাৎ আপনার কোনো শত্রু থাকবে না। বামপন্থী সরকার ও ভিনদেশী ইসলাম বিদ্বেষীরা আপনার পিছু নিবে না। আপনাকে টার্গেট করবেনা। বরং বাহবা দিবে। কারণ তারাও চায়, আপনি নামধারী মুসলিম হোন। মুখে মুসলিম পরিচয় দিলেও কাজেকর্মে অমুসলিমদের অনুসরণ করুন।
ইসলাম বিদ্বেষীরা এটা ভালো করে জানে যে, নামধারী মুসলিমে গোটা দুনিয়া ভরে গেলেও ইসলাম বিদ্বেষীদের কোনো সমস্যা নেই। বরং তাদের স্বার্থ উদ্ধার করা সহজ হবে। তাই তারা বর্তমানে দেশেদেশে মোডারেট মুসলিম তৈরির কাজ ভালোই এগিয়ে নিচ্ছে। সেই মোডারেটরা কখনো বলে জিহাদের নামে মানুষ হত্যা ইসলাম সমর্থন করে না। দাঁড়ি, টুপি, পাঞ্জাবির মধ্যে ইসলাম সীমাবদ্ধ নয়। নারীদের পর্দায় আবদ্ধ রাখার কথা ইসলাম বলে না ইত্যাদি… এসব কথা যারা বলে তারা আসলে মুসলিম নাকি অন্যকিছু তা বলার প্রশ্ন রাখে না। আর সে কাজই বাধাহীনভাবে করে যাচ্ছে হেযবুত তাওহীদ নামধারীরা।
এই সংগঠনটির প্রধান যিনি তার মুখে সুন্নতি দাঁড়ি নেই। সিগারেট খেতে দেখা যায় প্রায়ই। আর যিনি এমাম তিনি স্পষ্ট দাঁড়ির বিরোধিতা করতেও তার এক লেকচারে শুনেছিলাম। তিনি জোর গলায় বলেছিলেন “আমি দাঁড়ি রাখবো না”।তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় বেপর্দা বেগানা নারীদের সামনে লেকচার দিতেও দেখা যায়। লুতুপুতু নারীদের গা-ঘেঁষা তার কিছু ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় তাদের ভূমিকা নাকি উল্লেখযোগ্য। বয্রশক্তি নাকি কী নামে যেন তাদের একটা পত্রিকাও আছে। যার প্রচার করে যুবতি নারীরাই। তাদের কিছু এক্টিভ কর্মী আছে।
রাজধানী এবং উত্তরবঙ্গের বেশকিছু জায়গাতে তাদের অপতৎপরতা উল্লেখযোগ্য। সাধারণত ধর্মীয় জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের তারা টার্গেট করে। তাদের টার্গেটে নারীরা প্রথমে। কারণ অশিক্ষিত ও নারীদের সহজে ব্রেন ওয়াশ করা যায়। তাদের এক্টিভ কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে রাতদিন তাদের তৎপরতা প্রচার করেই যাচ্ছে। তারা সবখানে সঙ্ঘবদ্ধ। কেউ তাদের বিরোধিতা করে ফেইসবুকে কিছু লিখলে সিক্রেট গ্রুপে তা শেয়ার করে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে পোস্টকারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধর্মের নামে তাদের মনগড়া প্রচার দিনদিন বেড়েই চলেছে। এখনি সময় তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার।