গতকাল এতায়াত পন্থিদের সন্ত্রাসী কায়দায় অতর্কিত হামলায় তাবলীগ জামাতের বেশ কয়েকজন সাথী ও মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র আহত হবার ঘটনায় দিনভর বিক্ষোভ করেছে বি-বাড়িয়া জেলার তাবলীগের সাথী ও মাদ্রাসার ছাত্ররা।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিন দফা দাবিতে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান করছেন ।আর এদিকে বি বাড়িয়া জেলার নেতৃস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ডিসির সঙ্গে মিটিং করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের মূল দাবি, বিতর্কিত এতায়াত পন্থিরা কোনভাবেই বি-বাড়িয়া জেলার তাবলীগ মার্কাজ ব্যবহার করতে পারবে না এবং সেই সাথে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া এবং তাবলীগের নামে তাদের ভ্রান্ত কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করার ব্যাপারেও তারা দাবি জানান।
স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম বলিষ্ঠ কণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন যে, এ দেশে উলামায়ে কেরামের পরামর্শক্রমে সহীহ আকিদার তাবলীগ চলবে। তাবলীগের নামে কোন কোন দল বা গোষ্ঠিকে ব্যক্তিপূজার সুযোগ দেয়া হবে না। যেখানেই ভ্রান্তরা দ্বীনের নামে অপপ্রচার চালাবে, উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মুসলমানরা সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করবে ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, গতকাল মাগরিবের পর মারকাজে তাবলীগ জামাতের কুরআন ও হাদীসের উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলাকালে এতায়াত পন্থীরা ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে আহত হন বহু আলেম ওলামা ও ছাত্র। কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক।
আরও পড়ুন…
তাবলিগ জামাতের চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে পরিপত্র জারি করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে তাবলিগের উভয় পরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, অপপ্রচাররোধ, একে অপরের প্রতি সহনশীল মনোভাব পোষণসহ বেশকিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পরিপত্রটি ইতোমধ্যে দেশের সব জেলা প্রশাসক ও তাবলিগের মারকাজগুলোতে ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে।
তাবলিগ জামাত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন উল্লেখ করে পরিপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি এ সংগঠনের মধ্যে দৃশ্যমান বিভক্তি পরিলতি হচ্ছে। ফলে শান্তিকামী সংগঠনটির দুটি গ্রুপের মধ্যে দেশের প্রায় সব এলাকায় প্রায়ই বিভক্তি ল করা যাচ্ছে যা ধর্মীয় রীতিনীতি তথা সার্বিক শান্তি-শৃংখলার অন্তরায়। তাই দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা তথা সার্বিক শান্তি-শৃংখলা নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. বর্তমানে তাবলিগে বিদ্যমান দুটি পক্ষ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা পরামর্শক্রমে কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী ইজতেমা ময়দানসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা মারকাজে সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে, তারিখে তাদের কার্যক্রম (সাপ্তাহিক বাণী ও রাতযাপন, পরামর্শ ও তালিম, মাসিক জোড় ইত্যাদি) পরিচালনা করবে। তবে কোন প চাইলে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে পরামর্শক্রমে মারকাজ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে বা জায়গাতেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
২. তাবলিগের আদর্শ ও চিরাচরিত রীতিনীতি অনুযায়ী কোন পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কোনরূপ লিখিত বা মৌখিক অপপ্রচার চালাবে না।
৩. দেশের সকল মসজিদে আগের মতো শান্তিপূর্ণভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সে লক্ষ্যে যেকোনো মসজিদে উভয় পক্ষের জামাতই যেতে পারবে। এতে কোনো পক্ষই কাউকে বাধা দিবে না। তবে একই সময়ে দুই পক্ষের দেশী ও বিদেশী জামাত একই মসজিদে অবস্থান করা যুক্তিসংগত হবে না। এ ক্ষেত্রে যে পক্ষের জামাত আগে আসবে সেই পক্ষের জামাত অবস্থান করবে। অন্য পরে জামাত পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো সুবিধাজনক মসজিদে চলে যাবে।
৪. উভয় পক্ষ তাদের ইজতেমা বা জোড় তাবলিগের দেশী-বিদেশী মুরুব্বিদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। এতে এক পক্ষ অন্য পক্ষের কার্যক্রমে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।
৫. কোনো এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।