সংসদে কওমি মাদরাসার মাস্টার্স সনদের স্বীকৃতি বিল পাস

 

বহুল প্রতীক্ষিত কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল) এর সনদকে ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল- ২০১৮ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

গতকাল বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিলটি পাসের প্রস্তাব উপস্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

এর আগে জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন (সোমবার) বিলটি উত্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। বিলটি উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, আমি আশা করছি, আমরা সকলে এই বিলের ঐতিহাসিক পটভূমি গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারছি। ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন করে অাসছে। ১৫ লক্ষ শিক্ষার্থী এ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রতি বছর শিক্ষা সমাপ্ত করছে। এখন তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রয়োজন রয়েছে।

জনমত যাচাই ও বাছাইয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, অন্যান্য বিলের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ জনমত যাচাই ও বাছাই করা হয় তার চাইতে বেশি এ বিলের ক্ষেত্রে হয়েছে। দীর্ঘ নয় বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদরাসার বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আসছেন। এখন আর নতুন করে কোন যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন আসে না।

তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমি ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে এ স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। আমি মনে করি, বিলটি পাস হলে ঐতিহাসিকভাবে তা লিখিত থাকবে। যেমনটা সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, বিলটি এখনই পাশ করে দেওয়া হোক। এখন আর জনমত যাচাই-বাছাইয়ের দরকার নেই।

এর আগে কওমি মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে সাংসদ ফখরুল ইমাম বলেন, সরকারি স্বীকৃতি ও কওমি মাদরাসার সুশাসনের মাধ্যমে সমাজের বুকে কওমি মাদরাসা নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। তবে  মাস্টার্স ডিগ্রি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আবারো বিলটি যাচাই করার জন্য অনুরোধ জানান।

এর আগে সংসদে এমপি প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এ বিলকে সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, কওমি মাদরাসাকে ইসলাম প্রচারের কেল্লা হিসেবে জানি। তাদেরকে সরকারি সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এসময় তিনি কওমি মাদরাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতির আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সকলের প্রতি কৃতঙ্জা প্রকাশ করেন।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিগুলোকে ভিত্তি করে এই সমমান দেয়া হলো।

বলা হয়েছে,  এই আইন বাংলাদেশে দারুল উলূম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নেসাব (পাঠ্যসূচি) অনুসরণে পরিচালিত হবে। যা কওমি মাদরাসাগুলোর দাওয়ারে হাদিস এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

বিলে , এই সমমান দেয়ার লক্ষ্যে কওমি মারাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারাসিল আরাবিয়া- বেফাক সভাপতি হিসেবে পদাধিকার বলে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে কওমি মাদরাসা সনদের আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। তখন থেকে আলেমগণ সরকারকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সংসদে উত্থাপন করে তা পাসের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

উল্লেখ্য, কওমি মাদরাসা সদনের সরকারি স্বীকৃতির জন্য দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিলে গণভবনে এই স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *