ইসলামি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের অনলাইন ফতোয়া সাইটে এক ভাই প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছেন দিরিলিস আরতুগ্রুল দেখা জায়েজ আছে কি না। তিনি লিখেন, “মিডিয়া বিপ্লবের এ যুগে ক্রমশই বাড়ছে নাটক সিনেমা আসক্তি। তাই নাটক সিনেমা আসক্ত এ প্রজন্মের জন্য তুরস্কে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামি ইতিহাস নির্ভর দিরিলিস আরতুগ্রুল নামে একটি টিভি সিরিয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ এর মে পর্যন্ত তুরস্কের সরকারী টেলিভিশন ‘টি আর টি ওয়ার্ল্ড’এ ধারাবাহিকভাবে সম্প্রচারিত হয়। ১৫০ ভলিউমের এ ধারাবাহিকটির প্রতিটি পর্বের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় দুঘণ্টা করে।
ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো এ সিরিজটির প্রতি বিশেষভাবে ঝুঁকতে দেখা গেছে মুসলিম তরুণদের। সাধারণের পাশাপাশি সেলিব্রেটিরাও এ সিরিয়ালে আসক্ত। বিশ্বব্যাপী উসমানী খেলাফতের প্রকৃত ইতিহাস ছড়িয়ে দিতেই মূলত তুর্কি সরকার এ সিরিয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বলে জানা গেছে।
সিরিয়ালে দর্শকের মনে রঙ ছড়াতে প্রেম ভালবাসার চিত্রনাট্য ছাড়াও বেগানা মেয়েদেরও দেখানো হয়েছে। অপর দিকে প্রায় প্রতিটি ভলিউমে দোয়া, নামাজসহ ইসলামি বিভিন্ন সংস্কৃতিও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান ছাড়াও তুরস্কের বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা রয়েছেন এর পৃষ্ঠপোষকতায়।
আলহামদুলিল্লাহ আমি এখনো এর কোন অংশ দেখিনি। বর্তমানে এর প্রতি মানুষের মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি দেখে ইউটিউব ঘেঁটে ও মানুষের মুখে শুনে এ ব্যাপারে শরয়ী বিধান জানতে চাই। যেভাবে চারদিক অশ্লীল নাটক সিনেমার ছড়াছড়ি তার প্রেক্ষিতে শরিয়তে এমন সিরিয়াল বানানো ও দেখার হুকুম কী রেখেছ?
মদের পরিবর্তে যেভাবে অন্যান্য পানীয় পান করা জায়েজ অশ্লীলতায় ভরপুর অন্যান্য ফিল্মের বিপরীতে এ সিরিয়াল বৈধতা পাওয়ার কোন সুরত আছে কি?”
দারুল উলুম দেওবন্দ এর উত্তরে জানান, নাটক অথবা ফিল্ম যাই বলি না কেন তাতে ভিডিওগ্রাফি, নাচ-গান ও বেগানা নারীদের উপস্থিতি বিদ্যমান। যার সবই শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ।
ছবি নির্মাণকারীদের ব্যাপারে হাদিসের স্পষ্ট ভাষ্য: ছবি নির্মাতাদের কেয়ামতের দিন প্রচণ্ড শাস্তি দেয়া হবে। এবং সে যা তৈরি করেছে তাকে জীবন দিতে বলা হবে। (বুখারী শরিফ,ছবি নির্মাণকারীদের শাস্তি সম্পর্কিত হাদিস,নম্বর : ৫৯৫।
মিউজিকের ব্যাপারে নবুয়তের পাক জবানে উচ্চারিত হয়েছে আল্লাহ তায়ালা আমাকে পৃথিবীবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। এবং অনর্থক কাজ, খেলাধুলা ও গান-বাজনার সরঞ্জামাদি ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন।( মেশকাত শরিফ,শাস্তি ও মদ সম্পর্কিত হাদীস,তৃতীয় অধ্যায়)
বেগানা নারীদের সাথে পর্দার ব্যাপারে হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মুসলিম শাসকদের জীবনী নির্ভর নাটক ও সিরিয়ালের আরেকটা ক্ষতির দিক হল অনেকেই এসব সিরিয়াল দেখাকে গুনাহ মনে করেন না অথবা কেউ কেউ এই গুনাহকে হালকা মনে করেন। আর গুনাহকে গুনাহ মনে না করা বা হালকা মনে করা যা আরো মারাত্মক কবিরা গুনাহ।
এছাড়াও ধারাবাহিক সিরিয়াল দেখতে গিয়ে সময়ের অপচয়, নামাজ ক্বাযা হওয়া সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে অমনোযোগী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। যা সব অনিষ্ঠ ও অশান্তির মূল বলেই বিবেচিত। কোন বৈধ খেলাধুলার প্রতি আসক্তি ফরজ ওয়াজিব পালনে অলসতা সৃষ্টি করলে তাও তো যা না জায়েজ বলে গণ্য হয়।
আর ইতিহাস নির্ভর সিরিয়ালগুলোতে দর্শক চাহিদা বাড়াতে অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাসের প্রধান চরিত্রগুলোর ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এক কথায় প্রশ্নে উল্লেখিত সিরিয়ালগুলোতে ভিডিও, মিউজিকসহ নারীর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকায় তা দেখা না জায়েজ। গুনাহকে হালকা মনে করে তা দেখা, ফরজ ওয়াজিব পালনে উদাসীনতাসহ অন্যান্য গুনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তা হারাম। আপনি তা না দেখে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।
আপনার শেষ কথার প্রেক্ষিতে নিবেদন, এ সিরিয়ালগুলো অশ্লীল সিনেমা থেকে বাঁচার মাধ্যম হতে পারে না। কারণ এই সিরিয়াল নিজেই শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ। বলা যায় দুটোতেই বিষ মেশানো একটাতে একটু কম আরেকটাতে বেশি। তাই দুটো থেকেই বেঁচে থাকার চিন্তা করা আবশ্যক। আর এ থেকে বাঁচা মানুষের ইচ্ছা শক্তির উপরই নির্ভর করে। অবৈধ পন্থা অবলম্বনের কোন প্রয়োজন নেই।
কুরআন তেলাওয়াত, কুরআনের অর্থ ও তাফসীর পাঠ, মুসলিম বীর ও বুজুর্গদের জীবনী অধ্যয়নসহ ভাল কবিদের কবিতা, লেখদের বই এ জাতীয় বৈধ মাধ্যমগুলো এসব সিরিয়ালের বিকল্প হতে পারে।
অনুবাদ – নুরুদ্দীন তাসলিম