দীর্ঘদিন ধূমপান করার পর অনেকের পায়ে কালো রঙের পচন রোগ হয়। নাম “Buerger’s Disease”। এমন রোগী পেলে যখন জানতে চাই যে, ধূমপান করেন কিনা? হাসি মুখে বলেন “না না! এইসব বাদ দিয়েছি।” আবার জিজ্ঞেস করি “কতদিন ধূমপান করেছেন? আর কবে থেকে বাদ দিয়েছেন?”। পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী চাচা জবাব দেন “তা পরায় ৩০ বচ্ছর ধইরা টানছি! গত ১ মাস ধইরা আর খাই না”! এবার আমি হাসি! চাচা প্রশ্ন করেন- বাদ তো দিয়া লাইছি! তাও কিমুন অইল! বালা অইতো না?
কিছু বুঝলেন? না বুঝলে থাক। সহজ কিছু প্রশ্ন করি-
১. আমি বার বার কারেন্টের তারে হাত দিই আর শক লাগে। এ থেকে বাঁচার উপায় কী?
২. আগুন ধরলেই তাপ লাগে। হাত পুড়ে যায়। ইদানীং খুব জ্বলে। এটা কি নরমাল?
৩. আমি প্রতিদিন বরফ খাই। দিনে ৩/৪ বার ও খাই। ইদানীং জ্বর আসে আর সর্দি লেগেই থাকে। সমাধান দিন।
৪. দশ বছর ধরে মাটি কেটে নদীর সমান বড় সুগভীর এক গর্ত করেছি। গত ২০ দিন ধরে আর কাটছি না। গর্তটা ভরে যাচ্ছে না কেন?
হাসছেন? কী সব প্রশ্ন এগুলা?
– আরে ভাই কারেন্টের তারে হাত দেয়া বাদ দেন। আগুন ধইরেন না। বরফ খান কেন? গর্ত কি নিজে নিজে পূরণ হয়? আর দশ বছরের গর্ত ভরা কি ২০ দিনের কাজ?
অথচ, এমন প্রশ্নই আসে!
১০/১২/১৫ বছর ধরে হস্তমৈথুন করা, দিনে ৩/৪ বার করে ক্ষয় করা ভাইটি জানতে চান সব ঠিক রাখার উপায় কী? বহুবছর উল্টোপথে হেঁটে হঠাৎ ১/২ মাস স্থির হয়েই পেরেশান হয়ে যান – আর কবে ঠিক হবে?
দৈহিক, মানসিক হাজারো সমস্যা চলছে, সাথে হস্তমৈথুনও চলছে। তারও সমস্যা সমাধান প্রয়োজন। তবে অভ্যাস ছাড়া যাবে না!
ভাই আমার,
জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। বোঝা উচিৎ – সমস্যা আর সমাধান দুইটাই আপনার হাতে। একদিকে নিজের ক্ষয় চালিয়ে যাওয়া আর তার সমাধান আশা করা বোকামি। আবার বহু বছরের ক্ষয় অল্পদিনেই পূরণের প্রত্যাশা ও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
দূষিত বায়ুর দম বন্ধ করা পরিবেশ থেকে মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে আসুন। দুটি কাজ- শুধু মাত্র দুটি কাজ করুন-
১. এই আসক্তি থেকে সম্পূর্ণভাবে বের হয়ে আসুন।
২. ধৈর্য ধরে তাওয়াক্কুলের সাথে লেগে থাকুন।
বিশ্বাস করুন- সব, একদম সব সমস্যাই সমাধান হবে। ঠিক আগের মত না হোক, অন্তত নতুন এক জীবনের হাতছানি আপনাকে সত্য, সুন্দর আর সাফল্যের পথে নিয়ে যাবে।
এবার শুধু একটি প্রশ্নই আশা করব আপনার কাছে-
“আমি এই আসক্তি থেকে বাচার উপায় জানতে চাই, কী করে মুক্ত হবো এই অক্টোপাস থেকে?”
যদি পূর্ণ ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সত্যিই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন- আপনাকে সু-স্বাগতম! আসুন মুক্তির পথে..…
১. আবারো নিজেকে প্রশ্ন করুন:
– আপনি আসলেই ক্ষতি উপলব্ধি করে মুক্তি চান কিনা?
– আপনি এই নেশা ছাড়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কিনা?
– প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ছাড়া এই যুদ্ধ জয় সম্ভব নয়। সেটা আপনার আছে কিনা?
২. ইখলাসের সাথে তওবা করুন:
– অতীতের পাপের জন্য আল্লাহর কাছে স্বীকৃতি দিয়ে খাঁটি দিলে তওবা করে আর কোন দিন এই সকল পাপ না করার ওয়াদা করুন।
– সব ধরনের নাফরমানি, অশ্লীল ও মন্দ কাজ ত্যাগ করুন।
– মেয়ে বন্ধু, গার্লফ্রেন্ড, জাস্টফ্রেন্ড বাদ দিন। হারাম না ছাড়লে হালাল অর্জন হবে না।
– মৌখিক তওবাকে কাজে বাস্তবায়ন করুন।
৩. খারাপ চিন্তা ও কাজের সকল সূত্র বন্ধ করে দিন:
– আসক্তির সকল কিছু (মোবাইল, পিসি, বিনোদন পত্রিকা, চটি বই ইত্যাদি) বিশুদ্ধ করুন। মানে – অডিও, ভিডিও, ছবি, গল্প শিফট ডিলিট করুন। নাচ, গান, আইটেম সং, সিনেমা, সিরিয়াল, রিয়েলিটি শো বাদ দিয়ে দিন। পাপের সকল উপকরণ নষ্ট করুন। একান্ত দরকার ছাড়া ইন্টারনেট/ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করবেন না।
– ফেসবুকের সকল নন-মাহরাম দের আনফ্রেন্ড করুন, ভালগার পেইজ/গ্রুপ থেকে লিভ নিন, লুচু বন্ধুদের ত্যাগ করুন, যেসব ছেলেরা গার্লফ্রেন্ড/বান্ধবী/বউয়ের ছবি পোস্ট দেয় তাদেরও আনফ্রেন্ড করুন, না পারলে আনফলো দিন।
৪. “নিরাপত্তার দুর্গে প্রবেশ” করুন:
– ফরজ, সুন্নত ও নফল ইবাদতের চাদরে নিজেকে ঢেকে নিন। দ্বীনী সার্কেলে সময় দিন। নেক লোকের বন্ধু হোন।
– কুরআন হাদিস অধ্যয়ন শুরু করুন। নফল রোজা রাখুন।
– “সিন প্রটেক্টর” হিসেবে দাড়ি রেখে দিন আর টাখনুর উপর কাপড় পরা শুরু করুন।
– ফোন ও পিসিতে pornblock software/app ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে Reboot app এর সাহায্য নিন। [ বিস্তারিত জানতে দেখুন এই লিংক- lostmodesty.com/muktobichoron ]
– নিজেকে সর্বদা এলার্ট রাখতে “মুক্ত বাতাসের খোঁজে/ মানসাঙ্ক/ চিন্তাপরাধ/ আয়নাঘর/ অনেক আঁধার পেরিয়ে/ তুমি ফিরবে বলে” বা এই ধরনের বই পড়ুন, দ্বীনী পেইজ/ গ্রুপে যুক্ত থাকুন।
৫. জীবনাচরণ বদলে ফেলুন:
– নিজেকে কখনোই অলস রাখবেন না। পড়াশুনা, ইবাদত, ব্যক্তিগত/ পারিবারিক ও সামাজিক কাজে লিপ্ত থাকুন।
– একা না থেকে লোকজনের সঙ্গে থাকুন। সম্ভব হলে একা ঘরে না ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
– উত্তেজনা বেশি হলে নফল রোজা রাখুন। সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করে ফেলুন।
– পরিশ্রম, বিশ্রাম, ঘুম ও খাওয়া-দাওয়া পর্যাপ্ত, পরিমিত ও নিয়ম মত করুন।
– ধূমপান ও সব ধরনের নেশাকর বস্তু একেবারে ছেড়ে দিন।
৬. ক্ষয় পূরণে বাড়তি খাবার খান:
– দুধ, মাছ, মাংস ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার এবং তাজা ফল ও শাক সবজী খান।
– কালোজিরা, মধু, খেজুর, ভেজা ছোলা, কিসমিস, বাদাম নিয়ম করে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
– পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
[ এর বাইরে, কোন খাবারগুলো বেশি বেশি খাবেন আর কোনগুলো এভয়েড করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে ডা. শামসুল আরেফিন এর ‘নীল কৃষ্ণগহ্বর’ নোটে- https://lostmodesty.com/nilkrishnogohobor/ ]
৭. সাধারণ চিকিৎসা:
– প্রায় সব সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে যদি টানা ৩-৬ মাস কষ্ট করে নিজেকে একদম ফিরিয়ে আনতে পারেন, যদি সত্যিই এসব বন্ধ করতে পারেন আর উপরোক্ত নিয়ম মেনে ক্ষয় পূরণ করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ।
– এসময়ে প্রস্রাবে সমস্যা হলে পানি বেশি খাবেন, টিলা ব্যবহার করবেন। ধাতু ক্ষয় হলে পাকা পেঁপে, ইসবগুলের ভুষি ইত্যাদি খেয়ে কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখবেন। উত্তেজনা বেশি হলে রোজা রাখবেন। লিঙ্গ ছোট/ বাঁকা/ ঢিলা/ উত্থানে সমস্যা এসব নিয়ে অহেতুক ভেবে নিজেকে বিপর্যস্ত করবেন না। প্রকৃত যা সমস্যা তা আস্তেধীরে ঠিক হবে। এরপরও ডাক্তার দেখানোর অপশন তো আছেই।
– তারপরও সম্পূর্ণ রিকভারি নির্ভর করে আপনি কতটা নিজেকে ঠিক রাখলেন, কতটা উপদেশ মেনে চললেন ও আপনার শরীরের অ্যাডাপ্টেশন ক্ষমতা কতটা। এখানে ধৈর্যের কোন বিকল্প নেই।
এককভাবে এগুলো আসক্তি দূর করার বা সমস্যা সমাধান করার কিছু না। কিন্তু, সবগুলো মিলে “হলিস্টিক এপ্রোচ” বা “সামগ্রিক প্রচেষ্টা”।
নতুন জীবনের নবযাত্রায় আপনার জন্য শুভ কামনা।
ফী আমানিল্লাহ।