হাফিজ মাওলানা আব্দুল কাদির আল মাহদি
দু’আ হচ্ছে মুমিনের হাতিয়ার। মানুষের কষ্ট ক্লেশ,বলা মুসিবত দূর করতে দু’আ হাতিয়ারের মতো কাজ করে। দু’আ একজন বান্দার একমাত্র শেষ উপায়। হাদিসে দু’আকে স্বতন্ত্র এবাদত বলা হয়েছে। এমনকি দু’আকে সব এবাদতের মগজ হিসেবে পরিচয় করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, দু’আ হচ্ছে এবাদতের মগজ বা সারবস্তু (তিরমিজি)
মানুষের সব দু’আ আল্লাহ তা’আলা ক্ববুল করেন। বান্দার কোন দু’আ তিনি ফিরিয়ে দেননা। দু’আ ফিরিয়ে দেয়া আল্লাহ তা’আলার বিধান নয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে। (আল কোরআন ৪০/৬০)
এভাবে তিনি বলেন, আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে।(আল কোরআন ২/১৮৬)
উপরোক্ত আয়াত সমূহ থেকে বুঝাগেলো সব দু’আই আল্লাহ তা’আলা ক্ববুল করেন। তবে হ্যাঁ, দু’আর কিছু কন্ডিশন আছে সেগুলো পুরা করে তিনার কাছে চাইতে হবে। এমন চাওয়া তিনি ফিরিয়ে দেননা। কারন আল্লাহ তা’আলা ওয়াদার বিপরীত করেন।
যেভাবে আল্লাহ তা’আলা বান্দার দু’আ ক্ববুল করেন
এখানে জানা দরকার, আল্লাহ তা’আলা বান্দার দু’আ তিনটি স্তরে ক্ববুল করেন।
প্রথমত বান্দার চাওয়া বিষয় হয়ত সাথে সাথে পুরা করেন।
দ্বীতিয়ত বান্দার চাওয়া বিষয় পুরা না করে, আল্লাহ তা’আলা অন্য কোন মুসিবত দূর করে দেন।
তৃতীয়ত কোন কোন সময় চাওয়া বিষয় পুরা না করে আখেরাতের জন্য অবশিষ্ট রেখে দেন।
হাদিসে নাবী (সা) বলেন, কোন মুসলিম দু‘আ করার সময় কোন গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু‘আ না করলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা তাকে এ তিনটির একটি দান করেন। (১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন, (২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন (৩) অথবা তার মতো কোন অকল্যাণ বা বিপদাপদকে তার থেকে দূরে করে দেন। সাহাবীগণ বললেন, তবে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি (সা) বললেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ)
দু’আ ক্ববুলের শর্ত সমূহ হচ্ছে-
এক. দু’আ শিরেক মুক্ত হওয়ার সাথে একাগ্রচিত্তে আল্লাহ তা’আলার কাছে ইয়াক্বিন ও দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে চাইতে হতে হবে।
কারন রাসুলুল্লাহ (সা) ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করবে এবং যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাইবে।(তিরমিজি)
দুই. কোন ধরনের গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু’আ করা যাবে না। এবং দু‘আ কবুলের জন্য তাড়াহুড় করা যাবে না।
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, বান্দার দু‘আ সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দু‘আ করে এবং (দু‘আয়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল (সা)! (দু‘আয়) তাড়াহুড়া করা কি? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি তো দু‘আ করেছি, আমি দু‘আ তো করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে, তিনি আমার দু‘আ কবূল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দু‘আ করা পরিত্যাগ করে। (সহিহ মুসলিম)
তিন. ক্বলবে হাজির তথা মনোযোগ সহকারে দু’আ করা। এবং আল্লাহ তা’আলার প্রতি আস্থা ও ক্ববুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দু’আ করা।
আবু হুরায়রা বর্নিত রাসুলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা ক্ববুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ কর। তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয় অমনোযোগী ও অসাড় মনের দু’আ ক্ববুল করেন না।(জামে’ আত-তিরমিজি)
দু’আর আদাব সমূহ হচ্ছে
- শুরুতে ও শেষে আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও রাসুলুল্লাহ (সা) এর উপর দুরুদ পড়া।
- দু’আর মাঝে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা।
- হাত উত্তলন করে দু’আ করা।
- ইতস্ততঃ ভাব না করা।
- পাকপবিত্র অবস্থায় দু’আ করা।
- যথাসম্ভব কিবলা মুখি হয়ে দু’আ করা।
- হালাল খাবার দু’আ ক্ববুলের অন্যতম কারন।
রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি দূর-দূরান্তে সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধুলাবালি লেগে আছে। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি উভয় হাত আসমানের দিকে তুলে সকাতর হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে। অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম। সে হারামই খেয়ে থাকে। ওই ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে!’ (মুসলিম)
লেখক – শিক্ষার্থী, দারুল কোরআন ইসলামিক সেন্টার বার্সেলোনা, স্পেন
Aimen
আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন