আপনার সন্তানকে নামাযে অভ্যস্ত করুন ১০ উপায়ে

মুসলমান হিসেবে আমাদের সকলেরই নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা আছে। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে যার অবস্থান কালেমার পরেই। কিয়ামতের দিনও সর্ব প্রথম নামাযেরই হিসাব নেওয়া হবে।

নামাযের এই গুরুত্বের কারণেই আমাদের উচিত আমাদের শিশুদের শৈশব থেকেই নামাযের জন্য উৎসাহিত ও নামাযে অভ্যস্ত করে তোলার চেষ্টা করা। শিশুর অভিভাবক হিসেবে এটি আমাদের দায়িত্ব। তবে এই দায়িত্ব পালনে জোরাজুরি নয়, বরং নামাযের জন্য তাদেরকে এমনভাবে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিতে হবে যাতে তারা নিজে থেকেই নামায আদায় করে নেয়।

এ নিবন্ধে শিশুদের নামাযে উৎসাহিত ও অভ্যস্ত করাতে সহায়ক ১০ টি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হল।

১. দৃষ্টান্ত তৈরির মাধ্যমে শিক্ষা

শিশুরা তাদের পিতা-মাতার অনুকরণ করে। তাই তাদেরকে সাথে নিয়েই আপনি ওজু ও নামায আদায় করুন। এতে করে তারা আপনাকে অনুকরণ করে নামায আদায়ে উৎসাহিত হবে।

শিশুর জন্য তার পিতা-মাতা প্রথম শিক্ষক। আপনাকে দেখেই আপনার শিশু বিভিন্ন শিক্ষা গ্রহণ করবে। যদি আপনি আপনার নিজের সকল কাজের চেয়ে নামাযকে গুরুত্ব দেন, আপনার শিশুও নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে বেড়ে উঠবে।

২. শৈশবেই ইবাদতের সূচনা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সাত বছর বয়স হলেই তোমার শিশুকে নামায শিক্ষা দাও। দশ বছর বয়সে তারা নামায আদায় না করলে তাদেরকে শাসন করো এবং বিছানা আলাদা করে দাও।” (আবু দাউদ, আহমাদ)

যদিও দশ বছর হওয়ার আগে শিশুদের নামায আদায়ের কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তথাপি তাদের শৈশবেই ঘরে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করুন যাতে করে তারা নামায আদায়ে উৎসাহিত হয়।

৩. শিশুর নিজের জায়নামায

নামাযের জন্য উৎসাহিত করতে শিশুদেরকে নিজস্ব জায়নামায দিন। তাদের জায়নামায তাদেরকে নিয়মিত ব্যবহার করতে উৎসাহিত করুন।

৪. নামাযের দৃশ্যমান সময়সূচি

শিশুরা সর্বদাই দৃশ্যমান বস্তু ও তালিকায় প্রতিক্রিয়া করে। শিশুকে নামাযে উৎসাহিত করার জন্য নামাযের সময়সূচি সম্বলিত ঘড়ি, পঞ্জিকা ইত্যাদি ঘরে ঝুলিয়ে রাখুন। এসকল দৃশ্যমান সময়সূচি আপনার শিশুকে নামাযের জন্য উৎসাহিত করবে।

৫. নামায-পার্টি

মাঝে মাঝে আপনার শিশুকে তার সকল বন্ধু-বান্ধবসহ একসাথে নামায আদায়ের জন্য একত্রিত করুন। তাদেরকে নামাযের জন্য জায়নামায, টুপি, হিজাব, তসবিহ দিন। এরপর একসঙ্গে নামায আদায় করুন। নামায শেষে তাদেরকে চকলেট, ক্যান্ডি ইত্যাদি উপহার দিন এবং সম্ভব হলে নবী ও সাহাবীদের জীবনী হতে কিছু গল্প তাদের শোনান।

৬. আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা প্রদান

আল্লাহর কথা জানানো ছাড়া শিশুকে নামায শেখানো খুব কার্যকরী নয়। শিশুকে আল্লাহর সম্পর্কে জানান এবং তাঁর অফুরান অনন্ত নেয়ামতের কিছু বিবরণ দিন। আল্লাহর এই নেয়ামতসমূহের শোকর আদায়ের জন্য নামায পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের শিক্ষা দিন।

৭. রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান

রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবন সম্পর্কে আপনার শিশুকে শিক্ষা দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) কে তার হিরোতে পরিণত করুন এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ভালোবাসা থেকেই তারা তাঁর অনুকরণে নামায আদায়ে উৎসাহিত হবে।

৮. ধীর পদক্ষেপ

শিশুকে নামায আদায়ের শিক্ষায় তাড়াহুড়া না করে ধীর পদক্ষেপে অগ্রসর হোন। কখনোই আশা করবেন না, আপনার শিশু একবারেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে ফেলবে।

৯. অভিভাবকের দৃঢ়তা

যদিও আমরা চাই আমাদের শিশুরা নিজে থেকে নামায আদায় করেই বড় হোক, তথাপি একসময় হয়তো তারা নামাযে অবহেলা করবে এবং নামায আদায় করতে চাইবে না।

পিতা-মাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তাদের নামায আদায়ে অভ্যস্ত করা। কখনই তাদেরকে নামায ছেড়ে দিতে না দেওয়া। এক্ষেত্রে দৃঢ়তা বজায় রাখুন।

১০. পারিবারিক সময়দান

পারিবারিকভাবে মাঝে মাঝে একসঙ্গে নামায আদায় করুন। পিতার ইমামতিতে পরিবারের সকলকে নিয়ে নামাযের জামাআত করুন। আপনার শিশু সক্ষম হলে তাকে আযান ও ইকামত দিতে দিন।

জুমা ও ঈদের নামাযে আপনার শিশুকে নিয়েই নামায আদায় করুন। বিশাল জামাআতে নামায আদায়ের দৃশ্য তাকে তার পরিচয় সম্পর্কে সচেতন ও নামাযে উৎসাহিত করবে।

এবাইট ইসলাম অবলম্বণে লিখেছেন মুহাম্মদ আল বাহলুল 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *