কন্যা সন্তান লালন পালনে রাসুলের কয়েকটি নির্দেশনা

মুহাম্মদ ফাতিহ । । 

আপনি কি কন্যা সন্তান পেয়ে সত্যিই খুশি? তাহলে আপনি প্রকৃতপক্ষেই একজন ভাগ্যবান। কন্যা সন্তান লালন সমন্ধে রাসূল স. যে কথা বলেছেন তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। কন্যা সন্তান অফুরন্ত নিয়ামতের নাম। যদি কেউ তাকে সঠিকভাবে লালন পালন করে, ভালবাসে এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তবে জান্নাত তার জন্যে অপেক্ষামান।

যে সময় কন্যাসন্তান জন্মদানকে লজ্জার কারণ মনে করা হত এবং এ লজ্জা থেকে বাঁচতে তাদের জীবন্ত কবর দেয়া হত তবে রাসূল স. এসে দেখিয়ে দিলেন যে, কাজটি মারাত্মক ভুল। কন্যাদের লাঞ্চনা, অপমান ও শিশুহত্যার সেই সময়ে এ হাদিসগুলো তাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে। এমনকি বর্তমান প্রেক্ষাপটেও হাদিসগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।

চলুন দেখা যাক কন্যাদের অভিভাবক হিসেবে আপনি কি কি নিয়ামত লাভ করতে পারেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. বলেছেন, যদি কারো কন্যা সন্তান থাকে এবং সে তাকে কবর দেয়নি, কিংবা অসম্মান করেনি অথবা এর পরিবর্তে ছেলে সন্তান কামনা করেনি, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। (আহমদ)

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. বলেছেন, যার তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে এবং সে তাদের বাসস্থানের নিরাপত্তা বিধান করেছে, তাদের প্রতি দয়াদ্র আচরণ করেছে এবং তাদের লালন পালন করেছে আল্লাহ অবশ্যই তাকে জান্নাত দান করবেন।

এক ব্যক্তি জিজ্ঞাস করলেন হে আল্লাহর রাসুল যদি কারো দু’টি কন্যা সন্তান থাকে?

জবাবে রাসুল স. বললেন, যদি দুজন হয় তবুও সে এ পুরস্কার লাভ করবে। উপস্থিত অনেকেই প্রশ্ন করলেন, যাদের একজন কন্যা সন্তান আছে তাদের ব্যাপারে কি? তিনি বললেন এ পুরস্কার সবার জন্যই প্রযোজ্য। (আলবানী)

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একদা এক মহিলা তার দুই কন্যা সন্তান সহ আমার কাছে এসে কিছু সাহায্য চাইল। আমি তাদের দেওয়ার মত একটি খেজুর ছাড়া আর কিছুই পেলাম না, তাই আমি তাকে দিয়ে দিলাম।

মহিলাটি খেজুরটিকে ভাগ করে দুই কন্যার মাঝে বন্টন করে দিল নিজে তা থেকে কিছুই খেল না। অতঃপর চলে গেল। রাসূল স. ঘরে ফিরলে আমি তাঁর কাছে সামগ্রিক ঘটনা খুলে বললে তিনি বললেন, “যার এমন কন্যাসন্তান আছে, এবং তাদের প্রতি সদয় হয়, তারা তাদের জন্য জাহান্নাম থেকে রক্ষাকবচ হয়ে যাবে।” (মুসলিম)

উকবাহ ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল স. কে বলতে শুনেছি, যার তিনজন কন্যা আছে আর সে তাদের প্রতি ধৈর্যশীল, তাদের অন্ন, বস্ত্র ও সম্পদ দানকারী, সে কন্যাগণ হাশরের দিন তার জন্য রক্ষাকবচ হয়ে উঠবে। (আলবানী)

রাসূল স. এর সাহচর্য লাভ আনাস রা. থেকে বর্ণিতঃ রাসূল স. বলেছেন, “যে তার দুই কন্যাকে বিবাহযোগ্য হওয়া অবধি লালন পালন করবে, আল্লাহর রাসূল স. হাতের দুই আঙুল এক করে বললেন হাশরের দিন আমি এবং সে এমন পাশাপাশি অবস্থান করবে। (মুসলিম)

ইসলাম কন্যা সন্তানকে কত মর্যাদা দিয়েছে এখানে তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হল। এই হাদিস সহ অপরাপর যে হাদীসগুলো রয়েছে তার সারমর্ম হচ্ছে কন্যা সন্তানের শারীরিক, মানসিক অনুভূতি সংক্রান্ত যাবতীয় উন্নতির দিকেই নির্দেশ করা হয়েছে।

এ থেকে বুঝা গেল আমাদের কন্যা সন্তানদের সাথে ভালো ব্যবহার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল স. আমাদের আদেশ করেছেন যেন আমরা আদর্শ ও উত্তম অভিভাবক হতে পারি। আবারো বলছি, যদি আপনি সন্তানের অভিভাবক হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনি ভাগ্যবান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *