এস এম আরিফুল কাদের । ।
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের উদ্যোগের ফলেই সুন্দর সংসার জীবন গড়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ লক্ষ করা যায়। এ সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা নিয়ে অজ্ঞতা। আমরা অনেকেই জানি না, একজন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর এবং একজন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কী? এ বিষয়ে জানা থাকলে হয়তো অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে বিশ্বাস।
স্বামী-স্ত্রী একজনের প্রতি অপরজন দয়াশীল হলে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেন” মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, তার সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর হুকুম মেনে চলে, তাকে বলা হবে- তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো। (ইবনে হিব্বান)
সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর কথা কাটাকাটি, কিছুটা রাগারাগি, অভিমান ও হালকা ঝগড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এগুলোর ভেতর লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা কাজে লাগানো আবশ্যক। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- আমি কি তোমাদের বলব না স্ত্রীদের জান্নাতের কথা? সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন- হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসুল (সা.)!
তিনি (সা.) ইরশাদ করলেন, স্ত্রী যদি কোনো কারণে স্বামীর ওপর রেগে যায় অথবা স্বামী তার স্ত্রীর ওপর রেগে যায়, এ অবস্থায় স্ত্রী যদি বলে- আপনার হাতের ওপর আমার হাত, আমি ততক্ষণ ঘুমাব না, যতক্ষণ না আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হোন, সেই স্ত্রী জান্নাতে যাবে। (দারেমি)
স্বামী তার স্ত্রীর জান্নাত বা জাহান্নামে যাওয়ার কারণও হতে পারে। এ সম্পর্কে হুসাইন ইবনে মুহসিন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একসময় আমার খালা রসুলে আকরাম (সা.)-এর কাছে তার কিছু সমস্যা নিয়ে গেলেন এবং তিনি তার সমস্যার কথা বিশ্বনবী (সা.)-কে বললেন। সে সময় হুজুর পাক (সা.) তাকে প্রশ্ন করলেন- তোমার স্বামীর সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন? তিনি উত্তরে বললেন, আমি সেই কাজগুলো করি যা আমার স্বামী আমাকে করতে বলেন। তবে শুধু সেই কাজ আমি করি না যা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। রসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, লক্ষ রেখো, তার সঙ্গে কেমন আচরণ কর। কারণ সে-ই তোমার জান্নাত এবং সে-ই তোমার জাহান্নাম। (বায়হাকি)
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন সম্পর্কে রসুলে আরাবি (সা.) আরো ইরশাদ করেন, আমি যদি আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে আমি নির্দেশ দিতাম স্ত্রীদের তাদের স্বামীদের সিজদা করার জন্য। অপরদিকে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সদাচরণের দ্বারা স্বামী ফজিলতপ্রাপ্ত হয়। যার প্রমাণস্বরূপ এক হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তারাই সমস্ত মানবজাতির মধ্যে উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে। (সুনানে তিরমিজি)
স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করার জন্য রসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরিধান করবে, তাকেও পরিধান করাবে। তার চেহারায় কখনো প্রহার করবে না। তার সঙ্গে অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
রসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও। কেননা তারা তোমাদের ঘরে অবস্থানরত থাকবে। এর বেশি তাদের ওপর তোমাদের অধিকার নেই। হ্যাঁ, যদি তারা অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়, তখন বিছানা আলাদা করতে পারো অথবা হালকা প্রহার করতে পারো। তবে তারা অনুগামী হলে তাদের কষ্ট দিয়ো না। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার যেরূপ রয়েছে, তদ্রূপ তোমাদের ওপরও তাদের অধিকার রয়েছে।
তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো, তারা তোমাদের অপছন্দ হয়- এমন লোককে তোমাদের বিছানায় আসতে দেবে না এবং অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাউকে ঘরে থাকার অনুমতি দেবে না। তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলো, তাদের জন্য উত্তম খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করা। (সুনানে তিরমিজি)
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি কর্তব্য আদায়ের মাধ্যমে ইহকালে দাম্পত্য জীবন সুখের পাশাপাশি পরকালে অজস্র সওয়াব ও কল্যাণের অধিকারী হয়। এভাবে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী মহান আল্লাহর হুকুম মেনে চলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে কামিয়াব হতে পারে।
লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক