ওমর আলফারুক
—————–
ইসলাম একটি সার্বজনীন জীবন ব্যবস্থা। মানব জীবনের প্রত্যেক সমস্যার সমাধান আছে বলেই এই জীবন ব্যবস্থা সকল যুগের সকল মানুষের উপযোগী। ব্যাপকহারে মানুষ আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হলে আল্লাহ পৃথিবীতে গজব নাজিল করেন যাতে মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পেরে তাওবার মাধ্যমে আবার ফিরে আসতে পারে।
এই গজব বা মহামারি থেকে বাঁচতে ইসলামে এর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। যেকোনো মহামারি থেকে বাঁচতে প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে নিজেদের কৃত কর্ম থেকে তাওবা করা এবং বেশি বেশি ইসতেগফার করা।
সম্প্রতি চীন থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫০+ এ। যে ভাইরাসের সাথে কিছুদিন আগেও মানুষ পরিচিত ছিলো না ভালোভাবে। কারণ, এই ভাইরাস এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। তবে ২০০২ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে সংক্রমিত হয়েছিল ৮ হাজার ৯৮ জন। মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। সেটিও ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো হলো কাশি, জ্বর, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, নিউমোনিয়া।
এই মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা, সর্বদা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকা। কারণ কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর একটি হলো মহামারি।
রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারি, বকরির পালের মহামারির মতো, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে এক শ দিনার দেয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যুদ্ধবিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং ৮০টি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রতিটি পতাকার নিচে থাকবে ১২ হাজার সৈন্য। (বুখারী, হাদিস : ৩১৭৬)
হাদিসের ভাষ্যের সঙ্গে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকাংশেই মিলে যায়। বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে প্রাচুর্য বেড়েই চলছে। নতুন নতুন রোগ আত্মপ্রকাশ করছে। এগুলো বন্ধ করার সাধ্য কারো নেই। তবে এই পরিস্থিতিতে আমরা রাসূল সা. এর দেখানো পথ অনুসরণ করতে পারি।
মহামারি মূলত আল্লাহর গজব। মহামারি প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি বনি ইসরাইলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারি। অতএব, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫
তাই আমাদের উচিত, যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে। যেহেতু চিকিৎসকদের মতে এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতো তীব্র নিউমোনিয়া সিনড্রোমের মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়।
মহামারি আল্লাহর গজব হলেও এতে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে পাপী-জাহান্নামি মনে করা যাবে না। রাসূল সা. এর ভাষায় মহামারিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিও শহীদ। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদ—মহামারিতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হলো। বুখারী, হাদিস : ২৮২৯
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, মহামারিতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। বুখারী, হাদিস : ২৮৩০
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজী লা ইয়াদ্বুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামী‘উল আলীম’, অর্থ : ‘আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’; সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮৮
এছাড়া নবিজি সা. মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এই দোআ পড়তে বলেছেন,
للَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আওজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি,ওয়া সাইয়ি ইল আসক্কাম’
তাই আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত এসব গজব থেকে মুক্তির জন্য প্রথমে আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন!