জহির উদ্দিন বাবর
————————–
কহর দরিয়া খ্যাত টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে জানুয়ারি ১০, ১১, ১২ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ব ইজতেমা। এবারের ইজতেমা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর এক-দুদিন আগে থেকেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় ভরে যায় তাবলীগের সাথীদের দ্বারা। মূল মাঠে জায়গা না পেয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা হাজার হাজার দীনপ্রেমী মুসলিম আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের নানা জায়গায়। এবার ইজতেমায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যে স্বতঃস্ফূর্তটা লক্ষ্য করা গেছে তা গত কয়েক বছর ধরে অনেকটা অনুপস্থিত ছিল।
তাবলীগ জামাত ও ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরে লোক-হাসানোর মতো ঘটনা কম ঘটেনি। যারা তাবলীগ জামাতকে পছন্দ করেন না তারা এসব ঘটনায় ভেতরে ভেতরে খুশিতে আটখানা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গীর ময়দানে যে হিংস্র ও নৃশংস ঘটনা ঘটে সেটার ক্ষত সারাতে আরও অনেক দিন লাগবে। আমাদের আস্থা ও ভালোবাসার যে চূড়ায় তাবলীগ জামাতের অবস্থান ছিল সেটাকে অনেকটা ক্ষুণ্ণ করেছেন এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। আল্লাহর জন্য নিবেদিত একটি জামাত নিয়ে এতোটা জল ঘোলা না করলেও হতো।
তবে অতীতে যাই হয়ে থাকুক, তাবলীগ জামাত যেন নেতিবাচক কোনো খবরের শিরোনাম আর না হতে হয় সেই প্রত্যাশা থাকবে সবার। শুরায়ি সিস্টেম বলুন আর এমারতের ভিত্তিতে বলুন সবই হলো এই কাজের শৃঙ্খলার জন্য। মূল কাজ হলো ইখলাস ও লিল্লাহিয়াতের সঙ্গে আল্লাহর দুনিয়ায় তার দীনের প্রচার ও প্রসার।
তাবলীগ জামাতের এতো মাকবুলিয়তের মূল কারণই হলো ইখলাস ও লিল্লাহিয়াত। এখন কোনো কারণে কারও কারও মধ্য থেকে এই গুণটি বিদায় নিলে এই কাজের আর প্রাণ বাকি রইল কই! এজন্য আমরা যাই করি তাবলীগ জামাতের মূল প্রাণটি যেন অক্ষুণ্ণ থাকে সেই চেষ্টাটা সবার থাকা উচিত।
আমি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকি আর না থাকি, ইলহামি এই কাজটি যেন আমার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা সবাইকে বিবেচনা করতে হবে। আল্লাহর দীনের প্রচার-প্রসার যেমন জরুরি তেমনি জরুরি হলো এই দীনকে ফেতনা-ফ্যাসাদ থেকে রক্ষা করা। আমরা দীনের প্রচার-প্রসারের নামে নতুন ফেতনার যেন জন্ম না দিই সেটা সবার আগে বিবেচনায় রাখি।
আমাদের দেশে ধর্মীয় যেসব উপলক্ষ সমগ্র জাতিকে ছুঁয়ে যায় এর অন্যতম বিশ্ব ইজতেমা। এটি তাবলীগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ইজতেমা হলেও জাতীয়ভাবে নানা পর্যায়ে এর প্রভাব রয়েছে। আমাদের দেশের গণমাধ্যম অন্যান্য ধর্মীয় উপলক্ষকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও ইজতেমাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বছরের পর বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমা কীভাবে আমাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করে আসছে সেটা আমরা সচক্ষে দেখছি।
প্রতি বছর ইজতেমার সময় লাখো প্রাণের স্পন্দনে প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে তুরাগ তীর। কহর দরিয়া খ্যাত এই নদ যেন ইজতেমার কারণে ফিরে পায় তার পূর্ণ যৌবন। ইজতেমার সময় খোদাপ্রেমিকদের পদভারে শিল্প এলাকা টঙ্গীতে দেখা মিলে মোহনীয় এক দৃশ্যের। হাজার মায়ের সন্তানেরা একই সঙ্গে, একই বিছানায় শুয়ে, একই পাত্রে খেয়ে তিন দিন কাটান।
অপরকে অগ্রাধিকার দেয়ার যে মহান শিক্ষা এর বাস্তব রূপ দেখা যায় টঙ্গীর ময়দানে। পথহারা এই উম্মতকে সঠিক পথের দিশা দিয়ে যায় ইজতেমা। বিশেষ করে আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায় সেটা জাতীয় জীবনে ধর্মীয় আবহ ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক।
বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য আরও অনেক দেশ আগ্রহী ছিল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে স্থায়ীভাবে আমাদের বাংলাদেশ লটারিতে ইজতেমার আয়োজক দেশ হওয়ার মর্যাদা লাভ করে। মুসলিম বিশ্বের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে। এ উপলক্ষে সারা বিশ্বের দা’য়ীরা বাংলাদেশে আসেন। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা নিয়ে যান। পবিত্র হজের পর এতো বড় আয়োজন আর বিশ্বের কোথাও হয় না। এজন্য এই ইজতেমা ইতিবাচক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এই ইতিবাচকতায় নেতিবাচক কোনো ছাপ লাগুক সেটা কারও কাম্য হতে পারে না।
তাবলীগ জামাত দীনের একটি প্রচলিত ধারা। এই কাজের কিছু বিধি-বিধান ও রেওয়াজ আছে। চাইলেই সেই বিধি-বিধানে হুট করে পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব নয়। হজরতজি মাওলানা ইলিয়াস রহ. একজন বিচক্ষণ আলেম ছিলেন। আলেম-উলামার তত্ত্বাবধানে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নই তিনি দেখতেন। এই কাজের সঙ্গে আলেম-উলামার সম্পৃক্ততা কমে গেলে এর ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে বলেও নিজের আশঙ্কার কথা তিনি প্রকাশ করেছেন।
উলামায়ে কেরামের নির্দেশনায় পরিচালিত একটি জামাত বছরের পর বছর একটি ধারায় চলার পর এতো বছর পরে এতে তাতে হঠাৎ করে ভিন্নধারা চালুর প্রচেষ্টা কখনও সুফল বয়ে আনতে পারে না। আলেম-উলামার সীমাবদ্ধতা ও ব্যক্তিগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে; তবুও আল্লাহ তাদের যে মর্যাদার আসনটুকু দিয়েছেন তাকে মূল্যায়ন করতে হবে। আল্লাহর নির্বাচিত প্রতিনিধি উলামায়ে কেরামকে নির্দেশনার জায়গায় রেখে; তাদেরকে সামনে রেখে পথ চললে সেই পথই নিরাপদ।
আলহামদুলিল্লাহ খুব সুন্দর কথা বলেছেন। তাবলিগ ওলামাদের অধীনে আগেও ছিল এখনো থাকবে। নিজামুদ্দিনের ওলামাদের এক জামাত আছে সেই জামাতের অধীনে সারা দুনিয়াতে মেহেনত চলতেছে। হুজুর সাঃ এর জমানাতে ইসলাম চলছে এক কোরবানি ওয়ালা জামাত কে দিয়ে যারা আল্লাহ্র রাসুলের নির্দেশ পেলে বাস্তবায়নের জন্য জীবনের মায়া ছেড়ে দিতেন, আমাদের দিলের তামান্না সেই সব আলেম যারা নিজেরা দ্বীনের জন্য জীবন কোরবানি করেন, যারা যেমন করতেছেন উম্মতকে এলেম শিখানোর কাজ তেমনি উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাছানোর কাজ, আল্লাহ্র কাছে আমরা আসাবিয়াত থেকে মুক্তি চাই, আল্লাহ যেন না জেনে না তাহকিক করে কথা বর্ণনার ঘুনা থেকে আমাদের কে হেফজত করন। সাথে সাথে আপনাদের কাছে আরজ শুরা পদ্ধতি আর এমারত এর মধ্য একটি প্রবন্ধ চাই , আমাদের জানার খুব ইচ্ছা কোনটা ইসলামের দলিল ।
যথার্থ বলেছেন।