মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহ.-এর অমূল্য বাণী

সফলতা তো কাজের দ্বারা আসে!

হাজার বছর ধরে যে উল্টো অভ্যাস চলে আসছে তার ইসলাহ ও সংশোধনের জন্য গভীর চিন্তা ও চেষ্টা করার প্রয়োজন এবং সার্বক্ষণিক লেগে থাকা উচিত, তখন গিয়ে কাজ হয়, শুধু ইচ্ছা আর আশা দিয়ে কিছুই হয় না. যেমন একটা বিলবোর্ডের ওপর ডাক্তারখানা লেখা। এখন যদি কেউ তার দিকে ইশারা করে বলে, আমিও ওই ‘ড’-এর মতো ‘ড’ আর ‘খ’-এর মতো ‘খ’ লিখে নিব। তাহলে শুধু ইচ্ছা আর দেখার দ্বারা লিখতে পারবে না, যতক্ষণ না সে এ বিষয়ে ফিকির ও চেষ্টা আর মেহনত করবে। তেমনি যে চরিত্র উল্টে আছে তার ইসলাহ ও সংশোধনের জন্য ফিকির ও মেহনত আর চেষ্টার প্রয়োজন। তার পর আল্লাহ তার জন্য সফলতার রাস্তা খুলে দেন।

বেয়াদব আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে মাহরুম থাকে!

উস্তাদের আদব ও সম্মানের প্রতি লক্ষ রেখে চলা উচিত, অন্তরে তাদের প্রতি সম্মান ও মুহাব্বত থাকা উচিত, যে ব্যক্তি উস্তাদের সঙ্গে বেয়াদবি বা খারাপ ব্যবহার করে তার পূর্নতায় পৌঁছা কঠিন হয়ে যায় আর যদি পড়ালেখা শেষ করেও ফেলে কিন্তু ইলমের বরকত থেকে সে মাহরুম থেকে যায়। যদি হাফেজ হয়ে যায় তার হেফযে বরকত হয় না। আর যদি আলেম হয়ে যায় তার ইলমে বরকত হয় না। তার উদাহারণ হলো, যেমন একটি নালা তা দিয়ে ভালো পরিস্কার পানি বের হয়, কিন্তু কেউ যদি তার মুখে মাটি রেখে দেয় বা ময়লা ফেলে রাখে তাহলে এখন যে পানি আসবে তা দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত নাপাক হবে, তেমনি উস্তাদের তারবিয়াত নষ্ট করার কারণে তার ফয়েয বন্ধ হয়ে যায়, আর এটা খুবই আশাংকাজনক।

উস্তাদকে নিজের কল্যাণকামী মনে করা!

উস্তাদকে যে পরিমাণ সম্মান আর আদব দেখাবে এবং তাকে যত বেশি সম্মান করবে, ইলমে তত বেশি বরকত হবে। উস্তাদের হেদায়েত আর দিকনির্দেশনার উদাহারণ হলো, যেমন এক ব্যক্তির চোখে জ্যোতি আছে কিন্তু চোখে ছানি পড়ে যাওয়াার কারণে যে চোখে দেখে না ডাক্তার তাকে চিকিৎসা করে দিল, ফলে তার চোখ ভালো হয়ে গেল। সে দেখতে শুরু করলো। ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যোগ্যতা ও দক্ষতা তো থাকে, প্রয়োজন হলো তাকে প্রকাশ করা এবং কাজে লাগানো। সুতরাং উস্তাদের হেদায়েত আর দিকনির্দেশনা দেখতে খুবই স্বাভাবিক কিন্তু তা অত্যন্ত উপকারি। তার ওপর আমল করার দ্বারা তাদের ভেতরকার যোগ্যতা ও প্রতিভা উপকারি ও প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। এ জন্য তাকে নিজের জন্য উপকারি আর ফলপ্রসু মনে করা।

দীনি খাদেম এবং তাদের লেবাস

খাদেমরা বলে যে, সাধারণ মানুষের মাঝে আমাদের ইজ্জত নেই, কিন্তু কথা হলো, নিজের চলাফেরা লেবাস পোশাক যখন সাধারণ মানুষের মতো হবে, তখন তোমাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মতোই ব্যবহার করবে। যদি পুলিশ কনস্টেবল বা পরিচালক সাধারণ বেশে যায় তার সঙ্গে আচরণ তো তেমনই হবে। যদি একজন পুলিশ অফিসার সাধারণ মানূষের পোশাকে পানের দোকানে যায়, তার সঙ্গে কোনো বিশেষ ব্যবহার করবে না। বরং সবার সঙ্গে লাইনে দাঁড়াতে হবে। যখন নাম্বার আসবে তখন সে পান পাবে। কিন্তু যদি নিজের বিশেষ পোশাকে যায় তার সঙ্গে ভিন্ন আচরণ দেখাবে। সুতরাং লেবাস পোশাকের বড় প্রভাব পড়ে।

একবার শহরের কাছেই এক জলসার জন্য একজন আমন্ত্রিত মাওলানা সাহেব এলেন। তার সঙ্গে মাস্টার সাহেবকেও পাঠানো হলো। ওই বক্তা সাহেব সাধারণ পোশাকে ছিলেন। আর মাস্টার সাহেব দরবেশদের পোশাক পরে ছিলেন। ওই জায়গায় পৌছার পর সেখানকার লোকেরা সবাই মাওলানা সাহেবকে সাধারণ মানুষ আর এই মাস্টারকে সবাই মাওলানা মনে করল এবং তার সঙ্গে মুসাফাহা করার জন্য সবাই আগে বাড়তে থাকে।

এখানে মূলত কী কারণ ছিল? কারণ এটাই ছিল, সে একটা সাধারণ পোশাকে ছিল তাই তার সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়। আমার যখন বাগদাদ যাওয়া হয়েছিল। আমার এক ধর্মীয় ভাই ডাক্তার মৃত মাহমুদ শাহ। সেখানে একজন ভালো কারী ছিলেন। তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে যায়। আমার পরিচয় দেয়া শুরু করে। কারী সাহেব বলেলন, পরিচয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। তার চেহারা ছবি আর আকৃতি তার পরিচয় দিয়ে দিচ্ছে। আজকাল খাদেম ও তালাবা সবার পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সে অমুক মাদরাসার ছাত্র। তিনি অমুক মাদরাসার শাইখুত তাফসির ও অমুক মাদরাসার শাইখুল হাদিস ।

এসবের প্রয়োজন কেন পড়ল? আমাদের যে পোশাক আর ঐতিহ্য ছিল তা আমরা ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে তো সাধারণ মানূষের মতোই আচরণ করা হবে। এজন্য নিজের চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ ঠিক হওয়া উচিৎ।

লেখক- মুফতি সাঈদুল ইসলাম কাসেমী
মুহাদ্দিস, জামিয়াতুস সালাম আল মনসুরিয়া, ময়মনসিংহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *