আজকের দিনে তরুণ সমাজকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে প্রচারিত হচ্ছে কত রকম বিজ্ঞাপন। যেখানে বলা হচ্ছে, সারা রাত কথা বলো। যত রাত হবে, কলরেট তত কম। কিন্তু সারা রাত গল্প করলে একজন ছাত্র বা ছাত্রী পড়বে কখন? ঘুমাবে কখন? সে কি ঘুমাতে ঘুমাতে ক্লাসে যাবে?
দেশে একজন সচেতন ব্যক্তিও কি নেই যিনি বলবেন, তরুণ সমাজের কল্যাণার্থে এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। এসব বন্ধ করো। এক অর্থে বলা যায়, প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মস্তিস্ক ধ্বংশ করা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে সবার মধ্যে।
বিজ্ঞাপনে আরও বলে, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখো, তোমার ঔজ্জ্বল্য এত বাড়বে যে, সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। এটা পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক ও বর্ণবিদ্বেষী একটা কথা। শ্যামবর্ণ হলে যে তাকে সুন্দর লাগবে না, তা কে বলল? মনের সৌন্দর্যটাই আসল।
ইসলামে কোনো বর্ণবিদ্বেষ নেই। নবীজী সা. বেলাল রা-এর সঙ্গে মানবিক ব্যবহার করে দেখিয়ে দিয়েছেন, একজন ক্রীতদাস হলেও তার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে।
এ যুগের আরও ভয়াবহ জিনিস হচ্ছে মাদক ও পর্নোগ্রাফি। তরুণ সমাজকে এসবে আসক্ত করার জন্যে কৌশলে প্রচারণা চলছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এরকম কাজ করেছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আমাদের বাচ্চারা হরদম ঘোরাফেরা করছে।
অভিভাবকরা সময় থাকতে সাবধান হোন, খোঁজ রাখুন আপনার সন্তান কী কী ওয়েবসাইট ভিজিট করে। কৌশলে জানতে হবে তারা কোন ধরনের সাইট ব্যবহার করছেন। এ দিকে অভিভাবকের সচেতন হতে হবে।
হুমকির মুখে তরুণ প্রজন্মের মস্তিষ্ক-
১৯৮১ সালে কানাডার ক্যালগেরিতে একটা কনফারেন্সে গিয়েছি। ওখানে আমার এক ব্রিটিশ বন্ধুর সঙ্গে বসে গল্প করছি। এসময় ওখানে একটা ছেলে এলো। অধ্যাপক বন্ধু বলল, তোমাকে একটা মজা দেখাই।
সে ওই ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, এককে দুই দিয়ে ভাগ করলে কত হয়? ছেলেটি বলল, খুব সহজ। বলেই সে পকেট থেকে ক্যালকুলেটর বের করল। অর্থাৎ এককে দুই ভাগ করলে যে শূন্য দশমিক পাঁচ হয়, এটা ক্যালকুলেটর ছাড়া বলতে পারছে না!
অনেকে বলেন মানুষের সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ মহাকাশে যাওয়া, কোটি কোটি মাইল দূরের নক্ষত্রে পৌঁছানো। আমি বলি, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানুষ নিজে।
আল্লাহ মস্তিষ্কের মতো এত রহস্যময় ও সম্পদশালী আর কিছু তৈরি করেননি, যা আমরা নষ্ট করছি মাত্রাতিরিক্ত প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে। কারণ আমরা চিন্তা করছি না।
মস্তিষ্ক ব্যবহার না করার ফলে কমে যাচ্ছে আমাদের ইন্টেলেকচুয়াল ক্যাপাবিলিটি। সাধারণ যোগ-বিয়োগে এখন আমাদের যন্ত্রের সাহায্য লাগে।
আজকে ফেসবুকের উদ্যোক্তারা আফসোস করছেন, আমরা শিশুদের মস্তিষ্কের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছি। বিল গেটস সন্তানদের কম্পিউটারে আসক্ত হতে দেন নি। নিজের সন্তানকে না দিয়ে সারা পৃথিবীর ছেলেমেয়েদের আসক্ত হওয়ার জন্যে ছেড়ে দিয়েছেন।
মায়েদের নিতে হবে চালিকাশক্তির ভূমিকা-
নারীদের প্রচণ্ড একটা শক্তি রয়েছে, তা হলো মমতার শক্তি। তাই মায়েদের অনুরোধ করি, আপনারা এই শক্তিকে প্রয়োগ করুন, ব্যবহার করুন। স্মার্টফোন, ফেসবুক, ইউটিউব, ভিডিও গেম-কত নাম বলব!
এসব ভার্চুয়াল ভাইরাস থেকে সন্তানদের বাঁচান। দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিন, ১৮ বছর বয়সের আগে সন্তানকে কোনোভাবেই স্মার্টফোন দেবেন না। তাদের মমতা দিয়ে বোঝান। একটা পরিবার হলো রাষ্ট্রের একক। এখানে মায়েদের আধুনিক চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রযুক্তি হোক স্রষ্টার মহিমা উপলব্ধির মাধ্যম-
ছোটবেলায় মনে প্রশ্ন জাগত, সারা জীবনের আমলনামা কেয়ামতের দিন এক হাতে কীভাবে আসবে? এই যে এত জায়গায় ঘুরছি, এত কথা বলছি। এত তথ্য এক হাতে কীভাবে ধরবে? পৃথিবীতে মাইক্রোইলেকট্রনিকস বিপ্লবের পর এটা বোঝা গেল। সেটা কেমন?
প্রথমে কম্পিউটার ছিল বিশাল হলরুম জুড়ে। এরপর ডেস্কটপ, ল্যাপটপ হয়ে কম্পিউটার এখন মানুষের হাতের তালুতে চলে এসেছে। এত ছোট!
ধরা যাক, একজন মানুষ ৭০ বছর বাঁচল। প্রতিদিন ১০ হাজার করে সে যে আড়াই কোটি বাক্য বলেছে, এর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি তথ্য একটা এক সেন্টিমিটার মাইক্রো প্রসেসরে সংরক্ষণ করা সম্ভব।
এটা থেকে বুঝলাম এক হাতে আমলনামা কীভাবে আল্লাহ দেবেন। অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে যে কোরআনের বাণীই প্রমাণ হলো এটা কেউ বলে না।
রমজান হোক পরিবারে কোরআন চর্চার মাস-
পরিবারে সবাই মিলেই ধর্মাচার অনুসরণ করা জরুরি। কোরআন পুরো সৃষ্টির জন্যে রহমতস্বরূপ ও সংবিধান। রমজানে সপরিবারে প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্যে হলেও কোরআনের চর্চা করুন।
ছেলেমেয়েরা কোরআন থেকে জানবে যে, বাবা-মা বৃদ্ধ হলে তাদের সেবা করতে হবে, বিরক্ত হওয়া যাবে না, ‘উহ্’ শব্দটিও বলা যাবে না। তখন তারা উপলব্ধি করবে কত জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।
বাবা-মাও জানবেন নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে। সন্তান জন্মদানের পর দুই বছর বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের সঙ্গে সন্তানের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এতে তার মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। এরকম শিশু ধ্বংসাত্মক হয় না।
সব মানুষই শান্তি চায় কিন্তু শুধু নিজের জন্যে কাজ করলে শান্তি আসে না। অন্যের জন্যে কাজ করলেই তা পাওয়া যাবে। আর সময় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। কেউ জানে না জমিনের ওপরে তার জন্যে সময় কতটুকু আছে। তাই কাজ করতে হবে একাগ্রচিত্তে।
হৃদয় থাকবে স্রষ্টার দিকে ধাবিত। আর হাত থাকবে কাজের দিকে ধাবিত। এই রমজানে প্রযুক্তিকে শুধু প্রয়োজনে ব্যবহার করুন এবং অন্যদেরও এ সম্পর্কে সচেতন করুন।
কোয়ান্টাম থেকে সংগৃহীত।