তারাবীহ নামাযের রাকাত সংখ্যা এবং লা মাযহাবীদের ভয়াবহ প্রতারণা!

মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


এ বিষয়ে ৪টি শিরোনামে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। যথা-

১-আট রাকাত তারাবী দাবীদাররা মূলত তারাবী মানেই না।

২-তারাবী নামায আট রাকাত হতেই পারে না।

৩-লা-মাযহাবীদের প্রকাশিত বইয়ের আলোকেই তারাবী নামায বিশ রাকাত।

৪-তারাবী নামায নিয়ে লা-মাযহাবীদের অবিশ্বাস্য জালিয়াতি

তারাবী নামায আট রাকাত দাবীদার মূলত তারাবী মানেই না!

কোন কিছুকে অস্বীকার করার পদ্ধতি দু’টি। যথা-
১) পরিষ্কার শব্দে অস্বীকার করা।

২) মুনাফিকীর সাথে অস্বীকার করা। অর্থাৎ মুখে স্বীকারের ভান ধরা, কিন্তু মূলত অস্বীকার করা।
যেমন এক ব্যক্তি ইশার নামাযকে অস্বীকার করে।

আরেকজন বলে আমি ইশার নামাযকে মানি। তবে ইশার নামায হল, তিন রাকাত। কারণ ইশা ও মাগরিব নামায একই। সূর্যাস্তের পরপর পড়লে এর নাম মাগরিব হয়, আর দেড় ঘণ্টা পরে পড়লে এর নাম ইশা। সূর্যাস্তের পরপর পড়লে যেমন রাকাত সংখ্যা তিন, দেড় ঘণ্টা পড়ে পড়লেও রাকাত সংখ্যা তিনই।

লক্ষ্য করুন!

প্রথম ব্যক্তি সরাসরি ইশার নামাযকে অস্বীকার করেছে। তার মাঝে কোন নিফাকী নেই। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিও ইশার নামাযকে অস্বীকার করছে। সেই সাথে মুনাফিকীও করছে। সে বলছে ইশার নামাযকে মানে। আবার বলছে ইশা আর মাগরিব নামায একই। অর্থাৎ এক নামাযের দুই নাম হল মাগরিব ও ইশা। তাহলে সে মূলত মাগরিব নামাযকেই মানে। ইশাকে মানেই না। কিন্তু মানুষকে ধোঁকা দেবার জন্য বলছে সে ইশাকে মানে। তাহলে প্রথম ব্যক্তিটি অস্বীকারকারী হিসেবে পরিষ্কার। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিও ইশার নামায অস্বীকারকারী সেই সাথে মুনাফিক।

কারণ, ইশার নামায কিছুতেই মাগরিব নামায নয়। বরং আলাদা স্বতন্ত্র একটি নামায। যার রাকাত সংখ্যা চার।
বাহ্যিকভাবে কিন্তু উক্ত মুনাফিক আর আমরা যারা ইশার নামায মান্য করি তাদের মাঝে মতভেদ মনে হবে রাকাত সংখ্যা নিয়ে। মানুষ বুঝবে উভয় ব্যক্তিই ইশাকে মানে। মতভেদ শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে। একজন বলছে রাকাত চারটি। আরেকজন বলছে রাকাত হল তিনটি। কিন্তু উভয়ই ইশার নামাযকে স্বীকার করে।

কিন্তু আসল বিষয় কিন্তু তা নয়। বরং উভয়ের মাঝে মতভেদটা হল ইশার নামায আছে কি না? তা নিয়ে। যে বলছে ‘ইশার নামায তিন রাকাত’ সে মূলত ইশার নামাযকে মানেই না। বরং শুধু মাগরিব নামায মানে। আর যে ইশার নামাযকে চার রাকাত বলে, সে ইশার নামাযকে মানে। স্বতন্ত্র নামায মানে। যা মাগরিব নামায নয়। বরং আলাদা নামায।
তাহলে কি বুঝা গেল? বাহ্যিকভাবে তিন আর চার রাকাতের মতভেদ বুঝা গেলেও আসলে কি উভয়ের মাঝে রাকাতের মতভেদ নাকি ইশার নামাযের অস্তিত্ব নিয়ে মতভেদ?

নিশ্চয় ইশার নামাযের অস্তিত্ব নিয়ে মতভেদ। কিন্তু মুনাফিক লোকটি তার ইশার নামায অস্বীকার করার বিষয়টির উপর রাকাত সংখ্যার ধূম্রজাল দিয়ে পর্দা ঢেলে দিল। আর মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে সে ইশার নামায মানে। শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। অথচ সে ইশার নামাযই মানে না।

লা-মাযহাবী বন্ধুদের অবস্থাও তা। তাদের লিখিত বই যেমন, শায়েখ মুযাফফর বিন মুহসিনের লেখা ‘তারাবীর রাকাত সংখ্যা: একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’সহ তাদের প্রকাশিত সালাত সংক্রান্ত বইয়েই তারাবী বিষয়ে আলোচনা আছে।
যদি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তারাবী নামাযকে মানে কি না? বলবে মানে।

যদি জিজ্ঞাসা করেন রাকাত সংখ্যা কত? তখন বলবে আট। যদি বলেন কিভাবে? তখন বলবে তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নামায।
এগার মাস যে নামায ছিল তাহাজ্জুদ সেটিই রমজানে এসে হয়ে যায় তাহাজ্জুদ।

রাতের শুরু ভাগে পড়লে যার নাম তারাবী, সেই নামাযই শেষ ভাগে পড়লে নাম হল তাহাজ্জুদ। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হল, তারাবী তাহাজ্জুদ একই নামায। যেহেতু তাহাজ্জুদ আট রাকাত তাই তারাবীও আট রাকাত।

তাদের প্রকাশিত বইয়ের দু’টি উদ্ধৃতি পেশ করি:

১) শায়েখ আসাদুল্লাহ গালিব তার রচিত নামায বইয়ে লিখেছেন “রাত্রির বিশেষ নফল সালাত তারাবী ও তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত। রমযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে তারাবীহ আর রমযানও অন্যান্য সময়ে শেষ রাতে পড়লে তাকে তাহাজ্জুদ বলে। {ছালাতুর রাসূল [সা.]-১৭১}

২) “রমযান ছাড়া অন্য মাসে যাকে তাহাজ্জুদ বলা হয়, রামাযান মাসে তাকেই তারাবীহ বলে। {সহীহ নামায ও দুআ শিক্ষা-১৭১}

লামাযহাবী ভাইদের লেখা যেকোনো তারাবী সংক্রান্ত বই খুলে দেখুন একই বক্তব্য পাবেন।
আমাদের দেয়া আগের ইশা ও মাগরিবের উদাহরণটা একটু মিলিয়ে দেখুন। এরা কিভাবে মুনাফিকী আচরণ করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে।

সাধারণ মানুষ তো মনে করবে লা-মাযহাবী ভাইয়েরা বুঝি তারাবী মানেন। শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। আসলে কিন্তু তা নয়। ওরা তারাবীকে মানেই না। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে। যেহেতু তাহাজ্জুদের রাকাত আট তাই ধোঁকার আশ্রয় নিয়ে তারাবীর রাকাতও আট বলে থাকে। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে, কিন্তু মুখে নাম নেয় তারাবীর। আর ভাব প্রকাশ করে তারা তারাবী মানে কিন্তু মতভেদ শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে।
কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণই ভিন্ন।

যেমন ইতোপূর্বে দেখেছেন, যে ব্যক্তি বলছে ইশার নামায তিন রাকাত বলে, সে কিন্তু ইশাকে মানেই না। কিন্তু মুখে বলছে মানে। তিন রাকাত এজন্য বলছে যেহেতু তার মতে ইশা মাগরিব এক নামায।

একই হালাত লা-মাযহাবীদের। তারাও তারাবী মানে না। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে। কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা দেবার জন্য রাকাত সংখ্যার মতভেদকে সামনে নিয়ে আসে। ভাব ধরে তারাবী মানে। আসলে এটি মুনাফিকী ছাড়া আর কিছু নয়।
তারাবী অস্বীকার করলে সরাসরি অস্বীকার করুক। এভাবে মুনাফিকী আচরণ করে অস্বীকার করা কেন?

তারাবীহ তাহাজ্জুদ কিছুতেই এক নামায নয়!

১- দু’টির শরয়ী উৎস আলাদা!

তাহাজ্জুদ নামায কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। {আলইসরা-৭৯} আর তারাবী নামায রাসূল সা: এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩২৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-২২১০}

২- মাশরূ তথা শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত হবার স্থানও আলাদা!

তাহাজ্জুদ মক্কায় থাকা অবস্থায় শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত সাব্যস্ত হয়, আর তারাবী মাশরূ হয় মদীনায়।

৩- সময়কালও আলাদা!

তাহাজ্জুদ মাশরূ হয় হিজরতের আগে। আর তারাবী হয় হিজরতের পর।

৪- মাশরূ হবার পদ্ধতিও ছিল ভিন্ন!

তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরজ ছিল। অনেক দিন পর্যন্ত তা ফরজই ছিল। তারপর তার ফরজিয়্যাত রহিত হয়ে নফল হয়ে যায়। {সুনানে আবু দাউদ-১/১৮৯-১৯৯}
কিন্তু তারাবী শুরু থেকেই ছিল সুন্নত।

৫- হুকুমের দিক থেকেও ভিন্ন

তাহাজ্জুদ নামায নফল। বা সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা। আর তারাবীহ নামায হল সুন্নতে মুআক্কাদা। {সৌদী আরবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্য হিসেবে পঠিত আরওজুল মুরবি-৬৫, শরহুন নুকায়া-১/৩৪১}

৫- জামাত ও গায়রে জামাত

তাহাজ্জুদে আসল হল জামাত না হওয়া। আর তারাবীহে জামাত পড়াই উত্তম। দেখুন {আররওজুল মুরবি-৬৫}

৬- রমজান ও গায়রে রমজান

হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রা: এর কাছে জানতে চান নবীজী সা: এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল সা: রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেয়ো না। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেয়ো না, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রা: বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায় না। (সহীহ বুখারী-১/১৫৪)

উপরোক্ত হাদীসে যে নামাযের কথা বলা হয়েছে রমজান ও গায়রে রমজান তথা সারা বছরের নামাযের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেটি হল তাহাজ্জুদ। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ হল সারা বছর পড়া নামায। আর তারাবীহ শুধু রমজানে পড়া হয়।
সারা বছর পড়ার নামায আর শুধু এক মাস তথা রমজানে পড়া নামায এক হয় কি করে?

যেমন ইশরাকের নামায সারা বছর পড়া হয়, আর দুই ঈদের নামায কেবল বছরের দুই দিন পড়া হয়। এ দু’টি নামায কি এক হতে পারে? বরং তা আলাদা নামায।

যোহরের নামায প্রতিদিন পড়া হয়, আর জুমআর নামায সপ্তাহে একদিন পড়া হয়। তাহলে এ দু’টি নামায এক হতে পারে কি? তা আলাদা আলাদা নামায পরিষ্কার।

ঠিক একইভাবে তাহাজ্জুদ হল সারা বছরের নামায, আর তারাবীহ হল শুধু রমজানের নামায, সুতরাং এটিও আলাদা আলাদা নামায।

৭- পড়ার পদ্ধতির ভিন্নতা

হযরত আয়শা রা: এর হাদীস দ্বারা তাহাজ্জুদ নামায চার রাকাত করে পড়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। অথচ তারাবীহ নামায দুই রাকাত করে পড়া সুন্নত। দেখুন সৌদী আরবের শিক্ষা সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত বই “আররওজুল মুরবি” গ্রন্থ-৬৫।
তাহলে চার রাকাত করে পড়া নামায আর দুই রাকাত করে পড়া নামায এক হয় কি করে?

৮- ঘুমের বিশ্রাম

হযরত আয়শা রা: এর হাদীস দ্বারা বিতর ও তাহাজ্জুদের মাঝে রাসূল সা: এর ঘুমানো প্রমাণিত। কিন্তু রাসূল সা: থেকে তারাবীহ ও বিতরের মাঝে ঘুমানো প্রমাণিত নয়। [সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৩৪২, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, হাদীস নং-৩৬২৪]

৯- “মান ক্বামা রমজানা” হাদীস সংক্রান্ত

“মান ক্বামা রমজানা” তথা যে হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন “যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াব পাবার আশায় নামায পড়বে তার পূর্বের গোনাহ মাফ হয়ে যাবে” মর্মের হাদীসটি কোন মুহাদ্দিস তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে আনেননি। সবাই এনেছেন তারাবীহ অধ্যায়ে। যদি তারাবী তাহাজ্জুদ এক নামায হতো তাহলে এ হাদীস তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে কেন মুহাদ্দিসরা আনেননি?

১০- জামাতের উৎসাহ দান

তারাবীহ নামায রাসূল সা: নিজেও জামাতে পড়েছেন, এবং অন্যকে পড়তে দেখে খুশি হয়েছেন। দেখুন-কিয়ামে রমজান লিলমারওয়াজী-১৫৫, ১৫৩}

কিন্তু তাহাজ্জুদ নামায জামাতে পড়েছেন বা সাহাবায়ে কেরাম জামাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়েছেন তার কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।
তাহলে দুই নামায এক হল কিভাবে?

১১- কুরআন খতম

তারাবীহ নামাযে পুরো কুরআন খতম করার বিষয়টি খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে প্রমাণিত। কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাযে এভাবে প্রমাণিত নয়।

১২- রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট

তাহাজ্জুদের রাকাত নির্দিষ্ট নয়। যে যতটুকু ইচ্ছে পড়তে পারে। দুই, চার, ছয়, আট, দশ। কিন্তু তারবীহের রাকাত সংখ্যা উভয় দলের কাছেই নির্দিষ্ট আমাদের কাছে বিশ রাকাত, আর লামাযহাবীদের কাছে আট রাকাত।

১৩- বিতরের জামাত

তারাবীহের পর বিতরের জামাত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত। কিন্তু তাহাজ্জুদের পর বিতরের জামাতের কোন প্রমাণ নেই।

১৪- ইসলামের প্রতীক

তারাবীহ নামায শায়ায়েরে ইসলাম। দেখুন শায়েখ আসাদুল্লাহ গালিবের লেখা ছালাতুর রাসূল-১৭৩, নাইলুল আওতার-২/২৯৫, শরহে আবু দাউদ লিলআইনী-২৭৫, শরহে নববী আলা মুসলিম-৩/১০১, ১২৮, ১৩২, মিরকাত-৪/৩১৪, ৩১৬, ইহয়ায়ে উলুমিদ্দীন-১/৩৯০ ইত্যাদি।

কিন্তু তাহাজ্জুদ নামায শায়ায়েরে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত এরকম কোন বক্তব্য কোন মুহাক্কিক, মুহাদ্দিস ফক্বীহ প্রদান করেননি।

১৫- আদায়ের সময় আলাদা

তাহাজ্জুদ আদায়ের উত্তম সময় হল শেষ রাত। আর তারাবীহ আদায় করা হয় ইশার নামাযের পর পর। যা পরিষ্কার প্রমাণ করে এ দু নামায এক হতে পারে না। এক নামায আরেক নামায থেকে পৃথক করা হয় সময়ের দূরত্বের মাধ্যমে। যেমন জোহরের চার রাকাত আর আসরের নামায আলাদা নামায বুঝা যায় সময়ের দূরত্বের কারণে। সময়ের ভিন্নতার কারণে। তাহলে সময়ের ভিন্নতা আলাদা নামায হাবার প্রমাণ। তেমনি তারাবী তাহাজ্জুদ আলাদা নামায হবার পরিষ্কার প্রমাণ হল তার আদায়ের সময় ভিন্ন হওয়া।

১৬- নাম আলাদা

ফরজ নামায, ইশরাক, আওয়াবিন তাহাজ্জুদ ইত্যাদি আলাদা নামই প্রমাণ করে এসবই আলাদা আলাদা নামায। তেমনি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা নামও প্রমাণ করে এ দু’টি নামায এক নামায নয়।

১৭- বর্ণনার অধ্যায় আলাদা

মুহাদ্দিসীনে কেরাম তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের জন্য আলাদা দু’টি অধ্যায় কায়েম করেছেন হাদীসের কিতাবে। যা পরিষ্কার প্রমাণ করে এ দু’টি ভিন্ন নামায। এক নামায হলে দুই বাব তথা অধ্যায় কায়েম করার মানে কি?

১৮- রমজানের শর্ত

রাসূল সা: এর জমানায় একবার চাঁদ দেখেনি অনেকে। তখন فارادوا ان لا يصوموا ولا يقوموا তথা তখন সবাই রোযা না রাখা ও তারাবীহ না পড়ার ইচ্ছে করে নেন সবাই। হঠাৎ করে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে চাঁদ দেখার সংবাদ দেয়। তখন উক্ত ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাসের সত্যতা যাচাইয়ের পর রাসূল সা: হযরত বিলাল রা: কে ঘোষণা দেবার জন্য হুকুম দেন- ان يصوموا وان يقوموا তথা রোযা রাখ এবং তারাবীহ পড়। {দারা কুতনী-২/১৫৯}

উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ করে তারাবীহের জন্য রমজান আবশ্যক। কিন্তু তাহাজ্জুদের জন্য তা আবশ্যক নয়। তাহাজ্জুদ সারা বছরই পড়া হয়।

১৯- তাহাজ্জুদ ঘুমের পর

তাহাজ্জুদ নামায ঘুমের পর ঘুম থেকে উঠে পড়া হয়। {তাফসীরে ইবনে আব্বাস রা:-১৮১}
অথচ তারাবীহ পড়া হয় ইশার পর ঘুমের আগেই।

২০- গুণবাচক নামও ভিন্ন

একেতো তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামই ভিন্ন। সেই সাথে তাহাজ্জুদের আরেক নাম হল কিয়ামুল লাইল অথচ তারাবীহের আরেক নাম হল কিয়ামে রমজান।
নামায ভিন্ন না হলে নাম ভিন্ন কেন?

২১-রমজানে ইবাদত বাড়াতেন না কমাতেন?

এ হাদীসগুলো প্রমাণ করছে রাসূল সা: রমজান মাসে নামায বাড়িয়ে দিতেন। আম্মাজান আয়শা রা: বলেছেন আমাদের নবী রমজানের রাতে বিছানায় আসতেন না। সারারাতই ইবাদত করতেন। আর শেষ দশকে প্রচুর পরিমাণ ইবাদত করতেন এমনকি পরিবারের কাউকে ঘুমাতে দিতেন না, জাগিয়ে দিতেন। {সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৩৪২, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, হাদীস নং-৩৬২৪, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৮০৬২}

আর আমাদের লামাযহাবী ভাইয়েরা বলেন রাসূল সা: কখনোই রাতে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। তাই তারাবী নামায আট রাকাত।

যদি তাই হয়, তাহলে বলতে হবে রাসূল সা: আসলে রমজানে ইবাদত কমই করতেন। আগেও আট রাকাত রমজানেও আট রাকাত। তাহলে রমজানে ইবাদত বাড়লো কোথায়?

তাছাড়া বুখারীতে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা: থেকে অন্য বর্ণনায় তের রাকাতের কথা এসেছে।{বুখারী-১/১৫৩}

তাহলে রাসূল সা: যদি রমজানে তিন রাকাত বিতর ছাড়া আট রাকাত তারাবীহ পড়েন, আর রমজান ছাড়া পড়েন বিতর ছাড়া দশ রাকাত। তাহলে রমজানে ইবাদত বাড়ালেন কোথায়? রমজানে তো ইবাদত আরো কমিয়ে দিলেন!

রমজান ছাড়া পড়তেন দশ আর রমজানে এসে আট। ইবাদত বাড়লো না কমলো?

সুতরাং পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে আম্মাজান আয়শা রা: থেকে বর্ণিত বুখারীর হাদীসটি তারাবীহ সংক্রান্ত নয় বরং এটি তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত। তাহাজ্জুদ নবীজী সা: রমজান ও রমজান ছাড়া এগার বা তের রাকাতের বেশি পড়তেন না। তারাবীহের কথা উক্ত হাদীসে আলোচিতই হয়নি।

২২-তারাবীর পর তাহাজ্জুদের প্রমাণ

আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি রাসূল সা: রমজানে সারারাত ইবাদত করতেন। বিছানায় যেতেন না। আর আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিজী, ইবনে মাজায় আবু জর গিফারী রা: থেকে হাদীসে এসেছে রাসূল সা: তিনদিন সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মসজিদে জামাতের সাথে তারাবী পড়িয়েছেন। প্রথম রাতে রাত্রের তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন রাতের অর্ধেক পর্যন্ত, তৃতীয় দিন শেষ রাত্র পর্যন্ত।

এখন প্রশ্ন হল রাসূল সা: প্রথম রাতে তিন ভাগের এক ভাগ ও দ্বিতীয় দিন অর্ধেক রাতে মসজিদে তারাবী শেষ করে বাসায় গিয়ে কি ঘুমিয়েছিলেন? তাতো অসম্ভব যা ইতোপূর্বের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কারণ নবীজী সা: রমজানে ঘুমাতেন না। তাহলে তিনি ঘরে গিয়ে কি নামায পড়েছেন? সেটি নিশ্চয় তাহাজ্জুদ হবে। কারণ তারাবীতো সাহাবীদের সাথে মসজিদে পড়েই চলে এলেন।
তাহলে রাসূল সা: থেকেও তারাবীর পর তাহাজ্জুদ পড়ার পরিষ্কার ইংগিত পাওয়া যায়।

২৩-তারাবীর পর তাহাজ্জুদ পড়তে হযরত উমর রা: এর উৎসাহ প্রদান

হযরত উমর রা: যখন হযরত উবাই বিন কাব রা: কে তারাবীহ নামাযের ইমাম নিযুক্ত করলেন, তখন তিনি রাতের শুরু ভাগে ইশার পর তারাবী পড়াতেন। তখন হযরত উমর রা: তারাবী ছাড়া তাহাজ্জুদ পড়ার উৎসাহ প্রদান করে বলেন,-

وَالَّتِي تَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي تَقُومُونَ. يَعْنِي آخِرَ اللَّيْلِ. وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ.

যে নামায থেকে তোমরা ঘুমিয়ে যাও [তাহাজ্জুদ] যা তোমরা আদায় করতে শেষ রাতে, সেটি এ নামায থেকে উত্তম যা তোমরা আদায় করছো।তথা তারাবীহ। আর লোকজন প্রথম রাতে তারাবীহ পড়তো। {মুয়াত্তা মালিক-৩৭৮, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১০০}

২৪-হযরত ইমাম বুখারীও তারাবী ও তাহাজ্জুদ আলাদা পড়তেন

كَانَ مُحَمَّد بن إِسْمَاعِيل البُخَارِيّ إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ يجْتَمع إِلَيْهِ أَصْحَابه فيصلى بهم وَيقْرَأ فِي كل رَكْعَة عشْرين آيَة وَكَذَلِكَ إِلَى أَن يخْتم الْقُرْآن وَكَانَ يقْرَأ فِي السحر مَا بَين النّصْف إِلَى الثُّلُث من الْقُرْآن فيختم عِنْد السحر فِي كل ثَلَاث لَيَال

মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহঃ যখন রমজানের প্রথম রাত আসতো তখন তার সাথীরা তার কাছে একত্র হয়ে যেতো। তারপর তিনি তাদের নিয়ে [তারাবী]নামায পড়তেন। আর প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আর এভাবে তিনি খতম করতেন। আর যখন সাহরীর সময় হতো, তখন তিনি অর্ধেক থেকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতেন। এভাবে সাহরীতে তিন দিনে খতম করতেন। {হাদয়ুস সারী মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী-৬৬}

ইমাম বুখারী রহঃ। যিনি নিজে হযরত আয়শা রা: এর এগার রাকাত ওয়ালা হাদীস তার কিতাবে এনেছেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমাদের দেশের লা-মাযহাবীদের মত উক্ত হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী নিজেই তারাবী তাহাজ্জুদ এক নামায বুঝতে পারেননি। তাই তিনি শুরু রাতে তারাবী আবার শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন।

আরো মজার ব্যাপার হল, তিনি আট রাকাত তারাবীহ পড়তেন না এটি নিশ্চিত। বরং আট রাকাতের বেশি পড়তেন। কারণ যদি রমজানে আট রাকাত করে প্রতিদিন বিশ আয়াত পড়া হয়, তাহলে পুরো ত্রিশ দিনে খতম হবে না। অথচ ইমাম বুখারী রহঃ তারাবীতে খতম করতেন।

তাহলে ইমাম বুখারী তার বর্ণিত উক্ত হাদীস দ্বারা নিজে আট রাকাত তারাবীহ যেমন বোঝেননি, তেমনি আট রাকাতের উপর আমলও করেননি।
কিন্তু আমাদের দেশের অতি পণ্ডিতরা ইমাম বুখারী থেকে বড় পণ্ডিত হয়ে গেছেন। ইমাম বুখারী যা বোঝেননি, আমাদের অতি পণ্ডিত শায়েখগুলো এর চেয়ে বেশি বুঝে গেছেন।

তারাবী নামায আট রাকাত হতেই পারে না!

তারাবী কাকে বলে? এটা কী শব্দ? এটা কি এক বচন নাকি বহু বচন? এ বিষয়ে আমরা লা-মাযহাবী আলেম শায়েখ শহীদুল্লাহ খান মাদানী থেকেই জেনে নেই:

‘কিয়াম রমাযান, কিয়ামুল লাইল, সালাতুল লাইল ও তাহাজ্জুদ একই সালাতের বিভিন্ন নাম। রামাযানের রাত্রে এ সালাতের ক্বিরাআত দীর্ঘ হওয়ার কারণে চার রাক্ব’আত পর পর একটু আরাম গ্রহণ করা হয়, এ আরামকে আরবী ভাষায় ترويحة তারবীহাতুন, বহুবচনে تراويح তারাবীহ বলা হয়। তাই রমাযানের রাত্রির সালাতকে আলেম সমাজ তারাবীহ নামে আখ্যায়িত করেছেন।’ [মাসনূন সালাত ও দুআ শিক্ষা-১২৬]

লা-মাযহাবী আলেম শহীদুল্লাহ খান মাদানীর উপরোক্ত বক্তব্যের আলোক আমাদের কাছে পরিষ্কার যে, তারাবীহ শব্দটি আরবী। সেই সাথে এটি বহুবচন। এ শব্দটির এক বচন হল ‘তারবীহাতুন’। যার অর্থ হল, চার রাকআত পর পর একবার আরামের জন্য বসা।

চার রাকআত পর একবার বসার নাম হল ‘তারবীহাতুন’। যার বহুবচনের নাম হল ‘তারাবীহ’। তাহলে তারাবীহ এর অর্থ হল, কমপক্ষে তিনবার আরামের জন্য বসলে এর নাম তারাবীহ হবে। আর তিনবার আরামের জন্য বসলে রাকাআত সংখ্যা কমপক্ষে বার রাকাআত হতে হবে।

কারণ, বহুবচনের সর্বনিম্ন সংখ্যা হল, তিন। সর্বোচ্চের কোন সীমা নেই।

আরবীতে একবচন ও বহুবচনের মাঝামাঝি দ্বিবচনও রয়েছে। সেই হিসেবে ‘তারবীহাতুন’ শব্দের দ্বিবচন হল ‘তারবীহাতান’। যার অর্থ হল, দুইবার আরামের জন্য বসা। এর মানে চার রাকাআত পর একবার বসলে একবচন হিসেবে এর আরবী নাম হয় ‘তারবীহাতুন’। আর চার ও চার তথা আট রাকআত পর আবার বসলে দ্বিবচন হিসেবে এর নাম হবে ‘তারাবীহাতান’। আর বার, ষোল, বিশ রাকআত পর বসলে বহুবচন হিসেবে নাম হবে ‘তারাবীহ’।

ভাল করে খেয়াল করুন। বার, ষোল, বিশ রাকাআতের নাম তারাবীহ হবে। কিন্তু আট রাকাতের নাম তারাবীহ হতেই পারে না। বরং এর নাম হবে ‘তারবীহাতান’।

তাহলে যারা আরবী ভাষা সম্পর্কে জানেন। সেই সাথে এ নামাযকে তারাবী হবার স্বীকৃতি প্রদান করেন, তারা কি করে তারাবীহ নামাযকে আট রাকাত হবার দাবী করতে পারেন?

তারাবীহ শব্দটিতো বহুবচন। যা তারা নিজেরাই তাদের বইয়ে স্বীকার করছেন। যার এক বচন ‘তারবীহাতুন’ তথা চার রাকাআত পর একবার বসার নাম। সেই হিসেবে তারাবীহ নামায আট রাকাত কি করে হতেই পারে? পরিষ্কার বুঝা গেল, তারাবীহ নামায আট রাকাআত হতেই পারে না। যারা আট রাকাআত তারাবীহ হবার দাবী করেন, তারা আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞ ও জাহিল।

সুতরাং আশা করি পরিষ্কার যে, তারাবীহ নামায আট রাকাত দাবী করা মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ, তারাবীহ নামায আট রাকাআত হতেই পারে না।

লা-মাযহাবীদের প্রকাশিত বইয়ের আলোকেই তারাবী নামায বিশ রাকাত

লা-মাযহাবী বন্ধুদের প্রতি আমাদের আহবান! আপনারা নিজেদের প্রকাশিত বইগুলো ভাল করে অধ্যয়ন করুন। সকল প্রকার সংকীর্ণতা বর্জন করে পড়লে আপনাদের কাছে বিশ রাকাত তারাবীহ সুন্নত হবার বিষয়টি পরিষ্কার হবার কথা।

লা-মাযহাবী বন্ধুদের বাংলাদেশী প্রকাশনীর মাঝে একটি প্রসিদ্ধ প্রকাশনী হল ‘পিস পাবলিকেশন্স’। সেখান থেকে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটার নাম ‘কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্র্যাকটিক্যাল নামায’।

বইটায় তারাবীহ সম্পর্কে কী লেখা হয়েছে? একটু পড়ে নেই:

১- ‘তারাবীহ’ আরবি শব্দ (ترويحة ) এর বহুবচন: শব্দটির অর্থ ক্ষণিকের জন্য বিশ্রাম নেয়া। হাদীসে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। হাদীসে এ সালাতকে ‘কিয়াম ফি রমযান’ রমযান মাসের রজনীতে দাঁড়ানো নামে অভিহিত করা হয়েছে। আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের রাতে প্রতি ৪ রাকায়াত সালাতের পর ক্ষণিক বিশ্রাম নিতে বিধায় পরবর্তী সময়ের ফকীহগণ এ সালাতের নামকরণ করেন তারাবীহ সালাত।

২- তারাবীহ সালাত আদায়ের সময়: তারাবীহ সালাত শুধুমাত্র রমযান মাসে পড়তে হয়। ইশার সালাতের পর থেকে ফজর সালাতের পূর্ব পর্যন্ত এ সালাত পড়া যায়। ইশার সালাতের পর বিতরের আগে পড়া উত্তম।

৩- তারাবীহ সালাত আদায়ের শরয়ী বিধান: রমযান মাসের রাতে তারাবী সালাত পড়া সুন্নাতে মুআক্কাদাহ একথা বলেছেন ইমাম আবূ হানীফা (র), ইমাম শাফিঈ (র), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র) প্রমুখ। তারা ওমর (রা) জামায়াতসহ তারাবীহ আদায়ের স্বীকৃতি দলিলরূপে উপস্থাপন করে থাকেন। [‘কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্র্যাকটিক্যাল নামায, পৃষ্ঠা-২১৯]

একটু পর উক্ত বইয়ে এসেছে:

ওমর (রা) এর সময়ের তারাবীহ: ওমর (রা) তাঁর খিলাফতের ২য় বছর অর্থাৎ ১৪ হিজরী সনে ২/৪ জনের পৃথক পৃথক জামায়াতকে একত্রে এক ইমামের ইকতিদায় আদায় করার ব্যবস্থা করে দেন। [বুখারী ১ম খ-, পৃষ্ঠা: ২৬৯, তারিখে ইবনে সামীর খ: ১ পৃ. ১৮৯]

এ সময় তারাবী সালাতের সংখ্যা সম্পর্কে জানা যায়-

১- ইবনে আব্দিল বার বলেন, ওমর (রা) এর সময় তারাবীহ ২৩ রাকায়াত পড়া হতো। ২০ রাকায়াত তারাবীহ এবং ৩ রাকায়াত বিতর।

২- সায়িব (রা) এর শিষ্যগণ তারাবীহ সালাত ২০ রাকায়াত হওয়ার মত ব্যক্ত করেছেন। (আসারুস সুনান, তোহফাতুল আহওয়াজী, নসবুর রায়াহ] ইবনে হাজার আসকালানী ফাতহুল বারীতে এবং আল্লামা শাওকানী নাইলুল আওতারে ২০ রাকায়াতের কথা উল্লেখ করেছেন।

৩- ইয়াযিদ বিন খুসাইফা সাঈদ বিন ইয়াযীদ (রা) থেকে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, ইমাম মালিক তা মুয়াত্তায় বর্ণনা করেছেন। সেখানেও ২০ রাকাতের কথা উল্লেখ আছে। সুনানে কুবরায় একথাও লিখা আছে যে, ওমর (রা) এর সময়ে লোকেরা ২০ রাকায়াত তারাবীহ পড়তেন। দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর বিধায় ওসমান (রা) এর সময়ে লোকেরা লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।

হাফেজ ইবনু হাজার আসকালানী তার ফাতহুল বারীতে লিখেছেন-
‘ইমাম মালিক ইয়াযীদ বিন খুসাইফা থেকে এবং তিনি সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রা) থেকে ২০ রাকায়াত সালাতের আলোচনাই বর্ণনা করেছেন। [ফাতহুল বারী, খ. ৪ পৃ. ২৫৩]

ইমাম শাওকানী লিখেছেন-
‘ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার উপরোক্ত বর্ণনা ইমাম মালিক (র) তার মুয়াত্তা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং ২০ রাকায়াতের কথা বলেছেন। [নাইলুল আওতার খ. ৩ পৃ. ৫৩] তাঁর শাসনামলে ১১ রাকায়াত (মুয়াত্তালে মালেক পৃ. ৯৮), ১৩ রাকাত (ফাতহুল বারী খ. ৪ পৃ. ২৫৪) এবং ২১ রাকায়াত (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক খ. ৪ পৃ. ২৬০) তারাবীহ সালাত আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। সায়িব (রা) এর ৩য় ছাত্র মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ উপরোক্ত কথাগুলোর বর্ণনাকারী।

৪- হাদীসের মৌল সূত্র অনুসারে একই রাবীর একই বিষয়ে পৃথক পৃথক মত প্রকাশ করা বিশুদ্ধ হওয়ার অন্তরায়। সুতরাং ২০ রাকায়াতের অভিন্ন মত গ্রহণ করাই যুক্তিসঙ্গত। [কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্র্যাকটিক্যাল নামায, পৃষ্ঠা-২২২]

সাহাবা ও তাবেঈদের যুগের তারাবীহ: ২য় খলীফা ওমর (রা) এর যুগে তারাবীহ সালাত ২০ রাকায়াত আদায়ের যে প্রচলন আরম্ভ হয়, পরবর্তী সময়ে সাহাবী ও তাবেঈগণ তা বলবৎ রাখেন। অনেক সাহাবা এবং তাবেঈন ২০ রাকায়াতের বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তারা ৮ রাকায়াতের বর্ণনা করেননি।

ইবনে মাসঈদ (রা) ২০ রাকায়াত তারাবীহ আদায় করেছেন। ইবনে তাইমিয়া ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত হওয়ার কথা প্রমাণ করেছেন। (মিনহাজুস সুন্নাহ খ. ৪ পৃ. ২২৪) ইমাম যাহাবীও ইবনে তাইমিয়ার মত সমর্থন করেছেন।
আমর ইবনে কায়িস, আল্লামা ইবনুর তুরফুসানী, সাতির ইবনে শিকাল, সুওয়াইদ ইবনে গাফালাহ প্রমুখ তাবিঈগণ ২০ রাকায়াত তারাবীহ আদায় করতেন। হারিস আব্দুর রহমান ইবনে আবী বাকরা, আবুল বাখতারী, আতা, আলী ইবনে বুশায়অহ প্রমুখ ২০ রাকায়াত আদায় করতেন।

চার ইমামের মতামত:

ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ (র) প্রমুখদের মতে তারাবীহ সালাতের রাকাত সংখ্যা ২০।

ইমাম মালেকের (র) এর এক বর্ণনায় ২০ রাকায়াত এবং অপর বর্ণনায় তিনি ৩৬ রাকায়াতের কথা বলেছেন। [[‘কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্র্যাকটিক্যাল নামায, পৃষ্ঠা-২২২-২২৩]

এই হল, লা-মাযহাবী বন্ধুদের প্রকাশিত বইয়ের বক্তব্য। যা পরিষ্কারভাবে নববী যুগ থেকে সাহাবা ও তাবেঈগণ এবং আয়িম্মায়ে মুজতাহিদগণের আমল ও ফাতওয়ার আলোকে তারাবীহ নামায বিশ রাকাআত হবার কথা প্রমাণ করছে।

সুতরাং আমরা লা-মাযহাবী বন্ধুদের অনুরোধ করে বলি: আমলের মাস মাহে রমযানে ফিতনা সৃষ্টি না করে, আপনাদের প্রকাশিত বইয়ের বক্তব্য অন্তত মানুন। তারাবীহ নামায বিশ রাকাআত পড়ুন। অন্যকে পড়তে উৎসাহ দিন। আমল থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র থেকে দূরে থাকুন।

তারাবী নামায নিয়ে লা-মাযহাবীদের অবিশ্বাস্য জালিয়াতি

তারাবীহ নামাযের মত একটি মুসলমানদের প্রতীক ইবাদত নিয়ে লা-মাযহাবীরা কী পরিমাণ প্রতারণা ও ধোঁকার আশ্রয় নিয়েছে, তা ভাবতেই আমাদের অবাক লাগে। একটি দল সহীহ হাদীস মানার দাবী করে কিভাবে নবীজীর হাদীস নিয়ে এমন ভয়ানক মিথ্যাচার ও জালিয়াতি করতে পারে তা আমাদের কিছুতেই বোধগম্য নয়।

লা-মাযহাবীর যত মিথ্যাচার এ তারাবীহ নিয়ে করেছে এ বিষয়ে লিখতে গেলে আলাদা একটি বই হয়ে যাবে। শুধু ধারণা দেবার জন্য কয়েকটি নজীর আপনাদের সামনে তুলে ধরছি:

লা-মাযহাবী বন্ধুরা তাদের প্রকাশনী ‘তাওহীদ পাবলিকেশন্স’ যে বুখারী অনুবাদ বের করেছেন, তার ২য় খণ্ডে তারাবীহ নামাযের রাকাআত সংখ্যার আলোচনা করতে গিয়ে বিশ রাকাআত সংক্রান্ত একটি হাদীস আনেন:

‘ইয়াহইয়া বিন সাঈদ হতে বর্ণিত। নিশ্চয় উমার (রা:) এক ব্যক্তিকে তাদের সাথে বিশ রাক‘আত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

হাদীসটি আনার পর এটিকে বাতিল প্রমাণের জন্য একটু পর লিখেন:

‘ইয়াহইয়া বিন সাঈদকে কেউ কেউ মিথ্যাবাদীও বলেছেন। যেমন, ইমাম আবূ হাতিম (রহঃ) বলেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ কর্তৃক বর্ণিত কোন কথাই সত্য নয় বরং প্রত্যাখ্যাত। কারণ, সে হলো মিথ্যাবাদী। (জরহে আত্তাদীল ৯ম খণ্ড, তাহযীবুত তাহযীব ৬ষ্ঠ খণ্ড)’ [তাওহীদ পাবলিকেশন্সের বুখারী-২/৩৪৩]

খেয়াল করুন, বিশ রাকাআত এর বর্ণিত হাদীসটিকে জাল ও বানোয়াট প্রমাণের জন্য লিখে দিল যে, উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া বিন সাঈদ মিথ্যাবাদী। ইমাম আবূ হাতিম রহঃ নাকি ইয়াহইয়া বিন সাঈদের ক্ষেত্রে মন্তব্য করেছেন যে, তার কোন কথাই সত্য নয় বরং প্রত্যাখ্যাত কারণ সে একজন মিথ্যাবাদী। সাথে সাথে উক্ত কথার রেফারেন্সে জারাহ তা’দীলের দু’টি কিতাবের রেফারেন্স দিয়েছে।
তারা বুঝাতে চাইলেন যে, যেহেতু ইয়াহইয়া বিন সাঈদের এ অবস্থা। সুতরাং তার বর্ণিত বিশ রাকাআতের হাদীসটি জাল ও বানোয়াট হওয়াতে কোন সন্দেহ নেই।

যেহেতু তাওহীদ পাবলিকেশন্সের বুখারীটি ১৭ জন শায়েখের সম্পাদিত তাই স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ পাঠক উক্ত বক্তব্যটিকে সঠিক মনে করবেন। বাংলাভাষী এমন কয়জন আছেন যিনি মূল কিতাব ঘেঁটে সত্যতা যাচাই করবেন?

কিন্তু আসল অবস্থা কী? ইমাম আবূ হাতিম আসলে উক্ত রাবীর ব্যাপারে কী বলেছেন? আমরা একটু তাদের রেফারেন্স দেয়া দু’টি কিতাব থেকে দেখে নেই:

ক)

نا عبد الرحمن قال سألت أبى عن يحيى بن سعيد الأنصارى فقال: ثقة

আব্দুর রহমান তথা আবূ হাতিমের ছেলে বলেন, আমি আমার পিতা আবূ হাতিমকে ইয়াহইয়া বিন সাঈদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তিনি কেমন? উত্তরে আবূ হাতিম বলেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। [আলজরহু ওয়াত তাদীল-৯/১৪৯]

খ)

وقال ابن أبى حاتم، عن أبيه: يحيى بن سعيد يوازى الزهرى

আবূ হাতিমের ছেলে তার পিতা আবূ হাতিম থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ হাতিম বলেছেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ ইমাম যুহরীর সমমানের ব্যক্তিত্ব। [তাহযীবুত তাহযীব-৭/৫৫৩, দারুল হাদীস কাহেরা থেকে প্রকাশিত]

তাওহীদ পাবলিকেশন্সের বুখারী অনুবাদের টিকায় ১৭ শায়েখ মিলে লিখল আবূ হাতিম ইয়াহইয়া বিন সাঈদ সম্পর্কে কী মন্তব্য করেছেন। আর মূল কিতাবে আসলে কী লিখা আছে?

কি বুঝলেন? যারা এমন মিথ্যাচার ও প্রতারণা করতে পারে, তাদের দ্বারা কোন জঘন্য কাজটা অসম্ভব?
আরো মজার বিষয় হল, যে ইয়াহইয়া বিন সাঈদকে লা-মাযহাবী শায়েখেরা বিশ রাকাআতের বর্ণনাকারী বলে মিথ্যুক বলে দিলেন, সেই ইয়াহইয়া বিন সাঈদের বর্ণিত হাদীস দ্বারাই ইমাম বুখারী তার কিতাবের সূচনা করেছেন।

দেখে নিন বুখারী শরীফের প্রথম হাদীসটির সনদঃ

حَدَّثَنَا الحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ: سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى المِنْبَرِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا، أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ»

তাহলে লা-মাযহাবী শায়েখদের কথা যদি আপনি এক মুহূর্তের জন্য মেনেও নেন, তাহলে এই দাঁড়াবে যে, ইমাম বুখারী তার কিতাব সূচনা করেছেন জাল ও বানোয়াট হাদীস দিয়ে। কারণ, মিথ্যুক ব্যক্তির বর্ণিত হাদীসতো জালই হবে।

তাওহীদ বুখারীতে বিশ রাকাআতের আরেকটি হাদীস উল্লেখ করে লা-মাযহাবী শায়েখরা কী মন্তব্য করেছেন একটু দেখে নিন:

أخبرنا أبو طاهر الفقيه حدثنا أبو عثمان البصري حدثنا أبو أحمد محمد بن عبد الوهاب حدثنا خالد بن مخلد حدثنا محمد بن جعفر حدثني يزيد بن خصيفة عن السائب بن يزيد قال : كنا نقوم في زمن عمر بن الخطاب بعشرين ركعة والوتر

সায়িব বিন ইয়াযীদ বলেন, আমরা উমার ইবনুল খাত্তাব (রা:)-এর সময় ২০ রাক‘আত তারাবীহ ও বিতর পড়তাম। (নাস্বুর রায়া- লিআহাদীসে হিদায়া ২য় খণ্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা)

হাদীসটির সনদ যঈফ। হাদীসের সনদে- (১) আবূ উসমান বাসরী রয়েছে। সে হাদীসের ক্ষেত্রে অস্বীকৃত। (২) খালিদ বিন মুখাল্লাদ রয়েছে। সে যঈফ। তার বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত, তার কোন বর্ণনা দলীল হিসেবে গণ্য নয়। তদুপরি সে ছিল শিয়া ও মিথ্যাবাদী। ( তাহজিব ২য় খণ্ড) (৩) ইয়াযীদ বিন খুসাইফা রয়েছে। তার সকল বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত। (মিযানুল ই’তিদাল, তাহযীবুত্ তাহযীব ২য় খণ্ড) [তাওহীদ পাবলিকেশন্সের বুখারী-২/৩৪৩-৩৪৪]

খেয়াল করুন, বিশ রাকাতের হাদীসটাকে জাল প্রমাণের জন্য লা-মাযহাবী শায়েখরা উক্ত হাদীসের তিনজন রাবীর ব্যাপারে জরাহ করেছেন।
আবূ উসমান বাসরীর ক্ষেত্রে বলেছেন তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে অস্বীকৃত।

খালিদ বিন মাখলাদের নাম মূর্খতার কারণে লিখেছে মুখাল্লাদ। অথচ তারাই উপরে আরবী এনেছে, যেখানে স্পষ্টই নাম মাখলাদ লেখা আছে।

তারপর মন্তব্য করেছে যে, খালিদ বিন মাখলাদের সকল বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত, কোন বর্ণনা দলীল হিসেবে গণ্য নয়, তাছাড়া তিনি শিয়া এবং মিথ্যাবাদী।

অবশেষে ইয়াযিদ বিন খুসাইফার ক্ষেত্রে মন্তব্য করেছেন, তার সকল বর্ণনাই প্রত্যাখ্যাত।

কোন হাদীসে এমন একজন রাবী থাকলে হাদীসটি যে, জাল হবে এতে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। কিন্তু এখানে তারা তিনজন রাবীকেই এমন দোষে দুষ্ট লিখে দিলেন। সুতরাং সাধারণ পাঠকগণ বিশ রাকাআতের উক্ত হাদীসটিকে জাল হিসেবেই মনে করে থাকবেন।

কিন্তু প্রশ্ন হল, তারা যেভাবে তিন রাবীর ক্ষেত্রে মন্তব্যগুলো করলেন আসলেই কি বাস্তবতা তাই?

ক)

আবূ উসমান বাসরীকে কোন মুহাদ্দিসই জঈফ বলেননি। অথচ তার বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়াই হাদীস বর্ণনায় অস্বীকৃত হবার জঘন্য অভিযোগ করতে একটুও কাঁপেনি লা-মাযহাবী শায়েখদের।

খ)

খালিদ বিন মাখলাদের ক্ষেত্রে লা-মাযহাবী শায়েখদের মন্তব্য যে, তার সকল বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত এবং তার কোন বর্ণনা দলীল হিসেবে গণ্য নয় কারণ তিনি মিথ্যুক একথা মানলে বলতে হবে বুখারীতে জাল হাদীসে ভরপুর।

কারণ, ইমাম বুখারী তার কৃত বুখারী শরীফে কমপক্ষে ৩৪টি হাদীস এই খালিদ বিন মাখলাদের সূত্রে এনেছেন। যেমন তাওহীদ বুখারীর ১/৪৩, ১/১১৩, ১/১১৮, ১/১২১।

যদি খালিদ বিন মাখলাদ মিথ্যুক এবং প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তি হন। তাহলে তার বর্ণিত হাদীসতো জাল ও বানোয়াট হওয়ারই দাবী রাখে।

এখন প্রশ্ন হল, বুখারী শরীফের টিকা লিখতে গিয়ে বিশ রাকাআতের সহীহ হাদীসকে জাল প্রমাণ করার জন্য যে রাবীকে লা-মাযহাবী শায়েখরা দোষারোপ করলেন, সেই কারণে বুখারীর ৩৪টি হাদীসই জাল হয়ে গেল। ইন্নালিল্লাহ।

এরা কি বুখারীর হাদীস মানে? নাকি বুখারীর সবচে’ বড় দুশমন? বিচারের ভার পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিলাম।

গ)

ইয়াযিদ বিন খুসাইফার ক্ষেত্রে তারা লিখেছেন যে, তার সকল বর্ণনাই প্রত্যাখ্যাত। যার বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত তার বর্ণিত হাদীসতো জালই হবে।

অথচ ইয়াযিদ বিন খুসাইফা থেকে ইমাম বুখারী তার বুখারী শরীফে কমপক্ষে ৬টি হাদীস এনেছেন। যেমন তাওহীদ বুখারীর ১/২৩৭, ১/৫২৫।

লা-মাযহাবী শায়েখদের বক্তব্য অনুপাতে ইয়াযিদ বিন খুসাইফার সকল বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত হলে বুখারীর উক্ত ৬ হাদীসের হুকুম কী হবে? নিশ্চয় জাল হবে।

তাহলে বুখারী শরীফ কি আর সহীহ হাদীসের কিতাব থাকে না জাল হাদীসের ভাণ্ডার হয়?

৩. তারাবীহ নামায আট রাকাত বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণের জন্য লা-মাযহাবী শায়েখরা কী লিখেছে একটু দেখুন:

‘উমার রা: উবাই বিন কা’আব ও তামীম আদদারীকে রমাযান মাসে লোকদেরকে ১১ (এগার) রাকআত সালাত পড়াতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতঃপর ইমাম একশত আয়াতের অধিক আয়াত বিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তে থাকেন যাতে আমরা দীর্ঘ সময়ে দাঁড়ানোর কারণে লাঠিতে ভর দিতে বাধ্য হতাম। তখন ফজরের কাছাকাছি সময় ব্যতীত উক্ত নফল সালাত হতে অবসর গ্রহণ করতে পারতাম না। (সহীহ বুখারী-১/১৫৪, ২৬৯ পৃঃ, সহীহ মুসলিম-২৫৪ পৃঃ, আবু দাউদ-১/১৮৯ পৃঃ, নাসাঈ-১৪৮ পৃঃ, তিরমিজী-৯৯ পৃঃ, ইবনু মাজাহ-৯৭, ৯৮ পৃঃ)’ {শায়েখ মুরাদ বিন আমজাদ সংকলিত প্রচলিত ভুল বনাম রাসূলুল্লাহ সা: এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি-৪০}

ঠিক একইভাবে উক্ত হাদীসটি এনে কুতুবে সিত্তাহ তথা প্রসিদ্ধ ছয়টি হাদীসের কিতাবের খণ্ড ও পৃষ্ঠা নাম্বার দিয়ে উল্লেখ করেছেন লা-মাযহাবী আলেম শায়েখ খলীলুর রহমান বিন ফজলুর রহমান। দেখুন তার লিখিত বই ‘আপনি জানেন কি প্রচলিত নামায এবং রাসূল সা: এর নামাযে পার্থক্য কতটুকু?’ পৃষ্ঠা-২৫]

আট রাকআত তারাবীর একটি হাদীস এনে প্রসিদ্ধ ছয়টি হাদীসের কিতাবের খ- ও পৃষ্ঠা লিখে দেয়া হল। একজন সাধারণ পাঠক কী মনে করবেন? নিশ্চয় এ ছয় কিতাবে এ হাদীস আছে।

কিন্তু কী আশ্চর্য! উক্ত ছয় কিতাবের কোথাও উক্ত হাদীসের কোন অস্তিত্বই নেই। অথচ খণ্ড ও পৃষ্ঠা নাম্বারসহ হাদীসটি লিখে ছাপিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।

কী শব্দে বললে এর প্রতিবাদ হবে? সেই ভাষা আমাদের জানা নেই।

শুধু এতটুকু বলি যে, যারা নবীর হাদীস নিয়ে এমন প্রতারণা করতে পারেন, তাদের দ্বারা দুনিয়ার সকল ঘৃণ্য কাজ করাই সম্ভব। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব লা-মাযহাবীদের প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি থেকে উম্মতে মুসলিমাকে হিফাযত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *