সুওয়াল :
তালাক দেয়ার অধিকার একমাত্র স্বামীর। স্ত্রী কখনোস্বামীকে তালাক দিতে পারেন না।তবে স্বামী তাফবীজ বা স্ত্রীকেতালাক গ্রহণের ক্ষমতা প্রদানকরলে, সেই অনুযায়ী স্ত্রী নিজের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারেন। প্রশ্ন হলো, তা না হলে, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকারে কি বৈষম্য হয়ে যায় না?
জাওয়াব :
ইসলামী শরীয়তের বিধানে শুধুমাত্র স্বামীকেই তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, স্ত্রীকে নয়। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন–
ﻓَﻄَﻠِّﻘُﻮﻫُﻦَّ ﻟِﻌِﺪَّﺗِﻬِﻦَّ ﻭَﺃَﺣْﺼُﻮﺍ ﺍﻟْﻌِﺪَّﺓَ
ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺭَﺑَّﻜُﻢْ
“তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো।….”
স্বামীর জন্য স্ত্রীকে তালাক দিতে পারা এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীকে সরাসরি তালাক দিতে না পারার কারণ হলো, বিবাহের মাধ্যমে স্বামী হন গ্রহণকারী এবং স্ত্রী হন গ্রহণকৃতা। আর যিনি গ্রহণকারী হন তার কর্তব্য হয়ে যায় গ্রহণকৃতাকে সম্মানী প্রদান পূর্বক গ্রহণ করা এবং গ্রহণের পর তার যাবতীয় জীবনোপকরণের ভার বহন করা।
এ জন্যই স্বামী বিবাহে মহর সম্মানী প্রদান করে স্ত্রীকে গ্রহণ করেন, অতঃপর আজীবন স্ত্রীর সকল জীবনোপকরণের বন্দোবস্ত করেন। অপরদিকে স্ত্রী যেহেতু গ্রহণকারীণী নন, বরং গ্রহণকৃতা, তাই তিনি নিজের বা স্বামীর কারো জীবনোপকরণের ভার বহন করেন না। বরং স্বামীর কাছ থেকে তিনি যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের সুবিধা ভোগ করেন।
অপরদিকে তালাক অর্থ পরিত্যাগ করা। এক্ষেত্রে যিনি গ্রহণকারী তিনিই পরিত্যাগকারী হতে পারেন, আর যিনি গ্রহণকৃতা তিনি পরিত্যাগকৃতা হতে পারেন, পরিত্যাগকারীণী হতে পারেন না। সুতরাং স্বামী যেহেতু বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীকে গ্রহণকারী, তাই বিবাহ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে তাকে পরিত্যাগ করার ক্ষমতা তারই হওয়া যুক্তিযুক্ত। কিন্তু স্ত্রী যেহেতু গ্রহণকারীনী নন, তাই তার পরিত্যাগকারীণী হওয়া অযৌক্তিক। এক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীকে পরস্পর সমান চোখে দেখার কথা উঠতে পারে না। কেননা, এমতাবস্থায় স্বামী ও স্ত্রীকে সমান চোখে দেখতে হলে, স্বামী যেমন স্ত্রীকে মহর দেন, তেমনি বিষয়টি সমান করার জন্য স্ত্রীরও স্বামীকে মহর দিতে হয় এবং স্বামী যেমন স্ত্রী ও তার সন্তানদের খোরপোষ দেন, তেমনি স্ত্রীরও স্বামী ও সন্তানদের খোরপোষ সমানভাবে বহন করতে হয়। অথচ সেটা করা হয় না, বরং একতরফা ভাবে স্বামীর কাঁধেই স্ত্রীকে মহর দেয়া এবং স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি যাবতীয় খরচের যিম্মা ন্যস্ত করা হয়।
আসলে এটা হয় এ জন্য যে, বিবাহের মাধ্যমে স্বামী হন স্ত্রীকে গ্রহণকারী এবং স্ত্রী হন গ্রহণকৃতা। এ জন্যইতো বিবাহের প্রসঙ্গে স্বামীর ক্ষেত্রে বলা হয়– ﺯَﻭَّﺝَ (তিনি বিবাহ করেছেন) এবং স্ত্রীর ক্ষেত্রে বলা হয়– ﺗَﺰَﻭَّﺟَﺖ (তিনি বিবাহ বসেছেন বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন)। আর পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ তা‘আলা পুরুষেদের বেলায় বিবাহ করা এবং নারীদের বেলায় অভিভাবকগণের তাদেরকে বিবাহ দেয়ার কথা বলেছেন। (দ্রষ্টব্য : সূরাহ বাক্বারা, আয়াত নং ২২১)
এভাবে স্বামী যেহেতু বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীকে গ্রহণকারী হন, তাই তিনি গ্রহণকৃতা স্ত্রীর যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করে থাকেন। সুতরাং স্বামী যেহেতু বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীকে গ্রহণকারী হন, এ জন্য তালাকের মাধ্যমে পরিত্যাগকারী বা তালাক প্রদানের ক্ষমতা স্বামীরই হওয়া যু্ক্তিযুক্ত।