বান্দাকে খারাপ কাজ করা থেকে আল্লাহ তাআলা বাঁধা প্রদান করেন না কেন?


• সুওয়াল :


আমার দু’টি প্রশ্নঃ

আল্লাহ তাআলার ইলম, কুদরত, এরাদা এই তিনটি বান্দার আমলের সাথে তাআলাল্লুক রাখে।

কিন্তু ইলম ও কুদরত নিয়ে আমার প্রশ্ন নেই। আমার প্রশ্ন হল এরাদা নিয়ে। বান্দা যে আমলের ইরাদা করে, সেটাই কি আল্লাহর এরাদা হয় নাকি হয় না?

উভয় দিকে খারাবী লাযেম আসে। আরো সহজভাবে বলতে গেলে আমি একটি খারাপ কাজের এরাদা বা ইচ্ছা করলাম। এবং ইচ্ছাটা বাস্তাবায়িত হলো।

এখন এই ইচ্ছাটা কি আল্লাহর ইচ্ছায় করলাম নাকি অনিচ্ছায় করলাম?

আমরা যদি কোন জিনিসের ব্যাপারে জানি যে, এটি তৈরী করলে এর অপব্যবহার বেশি হবে, তাহলে জিনিসটি তৈরী থেকে বিরত থাকি যদিও এর সুস্থ্য ব্যবহার করা যায়। আর আমরা জানি মানুষের মধ্যে অধিকাংশ জাহান্নামী যারা নিজের ইচ্ছার অপব্যবহার করেছে। আমার প্রশ্ন হল, আল্লাহ এমন স্বাধীনতা দিলেন কেন? অথচ রহমাতের তাকাযা হল, এমন স্বাধীনতা না দেয়া।

 

 


✍ জাওয়াব;


আল্লাহ তাআলা আপনার ঈমানকে নিরাপদ রাখুন।

আপনার উপরোক্ত দু’টি প্রশ্ন মূলত উদয় হয়েছে মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানোর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে না জানার কারণে।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন মূলত পরীক্ষা করার জন্য।

আল্লাহ তাআলা যেমন দয়ালু, তেমনি তিনি “মুনসিফ” তথা ইনসাফকারী।

কোন বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়, তার যাবতীয় অবস্থাকে সামনে রেখে। আপনি আল্লাহ তাআলার ইরাদার বিষয়টিকে বিচার করবেন আল্লাহর যাবতীয় সিফাতকে সামনে রেখে। তাহলে বিষয়টি বুঝা খুবই সহজ হবে।

সূরা মুলুকের দুই নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছেঃ

الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۚ [٦٧:٢]

যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন,যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? [সূরা মূলক-২]

পরীক্ষার হলের কথা চিন্তা করুন। পরীক্ষার্থী ছাত্র যদি ভুল উত্তর লিখতে থাকে, পরীক্ষক তা দেখে যদি ছাত্রকে উক্ত ভুলটি লিখতে বাঁধা দেন, সঠিকটি লিখতে বাধ্য করেন, তাহলে সেটি কি আর পরীক্ষা থাকবে?

অবশ্যই না। সেটি তখন আর পরীক্ষা হিসেবে বাকি থাকবে না।

বরং পরীক্ষার হলে প্রতিটি ছাত্রকে স্বাধীনতা দিতে হবে। অবাধ স্বাধীনতা। সে যাচ্ছেতাই লিখতে পারে। সঠিকটা লিখলেও পরীক্ষক কিছু বলবেন না। আবার ভুল লিখলেও তাকে বাঁধা প্রদান করবেন না। বরং তাকে নিজের স্বাধীনমত লিখার সুযোগ করে দিবেন।

একজন সত্যিকার দয়ালু উস্তাদের সামনে ছাত্র ভুল লিখতে থাকলে উস্তাদ মনে মনে কষ্ট পেলেও ছাত্রকে সঠিকটা লিখতে বলেন না। কারণ, তখন আর এটি পরীক্ষা থাকবে না।

তাই পরীক্ষক শিক্ষক ভুল লিখতে দেখে সন্তুষ্ট না থাকলেও পরীক্ষার্থী ছাত্রকে লিখতে বাঁধা প্রদান করেন না। যদিও ছাত্রটি উক্ত ভুল লিখুক তিনি তা কামনা করছেন না। কিন্তু পরীক্ষা হবার কারণে তার সে কাজটি করতে বাঁধাও প্রদান করেন না।

ভুলটি লেখার দরূন ছাত্রকে বাঁধা না দেবার কারণে কিন্তু আমরা পরীক্ষককে দোষারোপ করতে পারি না। একথা বলতে পারি না যে, পরীক্ষক হলের মাঝে ছাত্র ভুল লেখার পরও কেন বাঁধা দেননি? কেন তাকে সঠিকটি লিখতে বাধ্য করেননি?

আমরা এ প্রশ্ন করি না। করতে পারি না। করাটা বোকামী হবে।

তেমনি বাঁধা না দিয়ে পরীক্ষক উক্ত ছাত্রের ভুলকে মেনে নিয়েছেন, বা তাকে ভুল করতে প্রলুব্ধ করেছেন, বা তার ভুলকে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন এমন কোন অভিযোগও আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে আরোপ করতে পারি না।

করা যাবে না। করলে এটি হাস্যকর অভিযোগ হবে।

পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীকে স্বাধীনতা দেয়া, ইচ্ছেমত লিখতে দেয়াই তার যথাযথ ইনসাফ। যথার্থ অধিকার। ন্যায্য পাওয়া।

সে তার প্রতিভা ও প্রস্তুতি অনুপাতে নিজেকে যাচাই করে নিতে পারে।

অবশেষে যখন ফলাফল প্রকাশিত হবে, তখন সে আর কাউকে দোষারোপ করতে পারবে না। পরীক্ষক বা তার শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে না। যদি তাকে নিজের ইচ্ছেমত লিখতে না দেয়া হয়, তাহলেই কেবল পরীক্ষার্থী অভিযোগ করতে পারে। স্বাধীনতা দেয়ার কারণে অভিযোগ করতে পারবে না।

তেমনি দুনিয়াতো পরীক্ষার কেন্দ্র। জীবন মৃত্যুর মাঝখানের পূর্ণ সময়টাই মানুষের জন্য পরীক্ষা। তামাম দুনিয়া হল সেই পরীক্ষার হলরূম। এখানে মানুষকে যাচ্ছেতাই করার অবাধ স্বাধীনতা রব্বে কারীম নামক পরীক্ষক দিয়ে রেখেছেন।  যে কেউ কোন কিছু করতে ইচ্ছে করলে আল্লাহ তাকে তা করতে সরাসরি বাঁধা প্রদান করেন না। করলে পরীক্ষা ব্যাহত হতো।

এতে বান্দা পরীক্ষক রবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারতো।

তাই তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে করে হাশরের ময়দানে তার ফলাফল দেখে রব্বে কারীমকে দোষারোপ করতে না পারে। বরং নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজেই যিম্মাদার সাব্যস্ত হতে পারে।

আল্লাহ তাআলার “ইনসাফ” সিফাতের তাকাযা হল, বান্দাকে দুনিয়াতে যা ইচ্ছে তাই করতে স্বাধীনতা দিয়ে রাখা। আল্লাহ তাআলা তা’ই করেছেন।

সুতরাং এ বিষয়ে প্রশ্ন করাটা অযৌক্তিক।

বাকি রহমাত সিফাতের আশায় রব্বে কারীমের কাছে ক্ষমার আশা রাখতে পারি।

আল্লাহ তাআলা আপনাকে এসব উদ্ভট প্রশ্নের বেড়াজাল থেকে মুক্ত রেখে খাঁটি ঈমানের উপর অটল রাখুন।

প্রতি নামাযের পর অবশ্যই দুআ করুন “রাব্বানা লা তুযিগ কুলূবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা, ওয়াহাবলানা মিনলাদুনকা রাহমাহ, ইন্নাকা আন্তাল ওয়াহহাব”।

 

 


ফতওয়া প্রদান;
মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *