(পর্ব-৭) সকল ধর্মের সাদৃশ্যগুলো মেনে চলার গর্হিত থিউরি

মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী


‘সকল ধর্মের সাদৃশ্য মেনে চলা’ সম্পর্কে ডাক্তার জাকির নায়েকের মতবাদ হলো–

ডাক্তার পার্থক্য নিয়ে পরে একসময় আলোচনা করবো, তবে যে কথাগুলো একই, আসুন, আমরা সবাই সেগুলো মেনে চলি। ”

(দ্রষ্টব্য : ডা. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র, ভলিয়াম নং ২, পৃষ্ঠা নং ২৩৩ ॥ প্রকাশনায় : পিস পাবলিকেশন–ঢাকা)

.

ডাক্তার জাকির নায়েকের উক্ত লেকচারের ভিডিও ইন্টারনেটের ইউটিউবে “Is Terrorism a Muslim Monopoly? – Dr. Zakir Naik” নামক স্ক্রিপ্টে রয়েছে। উক্ত ভিডিও থেকে তার সেই বক্তব্য সরাসরি শুনতে নিম্নোক্ত ইউটিউব-লিঙ্কে লগইন করুন (উল্লেখ্য, এ ভিডিওটির ১ ঘন্টা ৩৩ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড থেকে তার সেই বক্তব্যটি পাবেন) —

এ ছাড়াও ডাক্তার নায়েকের উক্ত লেকচার বাংলা ভার্সনে শুনতে চাইলে নিম্নোক্ত ইউটিউব-লিঙ্কে লগইন করুন (উল্লেখ্য, এ ভিডিওটির ২ ঘন্টা ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ড থেকে তার সেই বক্তব্য রয়েছে) —

♦পর্যালোচনা♦

এটা বাদশাহ আকবরের দ্বীনে এলাহীর মতো সকল ধর্মের সমম্বয়ে ডাক্তার জাকির নায়েকের মনগড়া ধর্মমত প্রবর্তনের ভ্রান্ত থিউরি–যা সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী। আর এক্ষেত্রে তিনি قُلْ تَعَالَوْا اِلي كًلِمَةٍ سَوَاءٍ (সূরাহ আলে ইমরানের ৬৪ নং আয়াত) উল্লেখ করে তার উক্ত মনগড়া থিউরি প্রমাণ করতে চান। অথচ এ আয়াতে কিছুতেই সকল ধর্মের সাদৃশ্যের দিকে বিধর্মীদেরকে আহ্বান করতে বলা হয়নি। বরং এ আয়াতে আহলে কিতাবকে তাদের ধর্মের সাদৃশ্যপূর্ণ দ্বীন তথা নিরঙ্কুশ তাওহীদ ও রিসালাতের ধারক ইসলামে দাখিল হওয়ার দাওয়াত দেয়ার কথা বলা হয়েছে। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা.) থেকে এ আয়াতের এ তাফসীর ও আমলই বর্ণিত হয়েছে।

(প্রমাণের জন্য দেখুন : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৫৮/ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৩/ তাফসীরে ইবনে কাসীর, ১ম খণ্ড, ৫৪ পৃষ্ঠা)

বলা বাহুল্য, ইসলাম কখনো সকল ধর্মাবলম্বীদেরকে শুধু সাদৃশ্য বিষয় মেনে চলতে বলে না। কারণ, তা পরকালীন সাফল্য ও মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। বরং পরকালীন সাফল্য ও মুক্তির একমাত্র পথ হলো–সকলকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন–
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হও।” (সূরাহ বাক্বারা, আয়াত নং ২০৮)

বলতে কি, ডাক্তার জাকির নায়েকের কথিত এ দাওয়াত কবূল করে যদি হিন্দুরা বেদ ও কুরআনের সাদৃশ্য বিষয় পালন করে, তখনও তারা মুসলিম বলে বিবেচিত হবেন না। যদিও অনেকে নবআবিষ্কার রূপে তাদের নাম দিয়েছেন বৈদিক মুসলিম (বেদের উপর আমলকারী মুসলিম)। এমনিভাবে খৃস্টানরা সাদৃশ্য বিষয় পালন করলেও মুসলিম বলে বিবেচিত হবেন না। যদিও তাদেরকে অনেকে নবআবিষ্কাররূপে নাম দিয়েছেন বাইবেলীয় মুসলিম (বাইবেলের উপর আমলকারী মুসলিম)। কিন্তু এতে সেসব নবআবিষ্কৃত জাকিরী ধর্মাবলম্বীরা কিছুতেই পরকালীন সাফল্য ও মুক্তির আশা করতে পারে না। কেননা, একমাত্র প্রকৃত ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া ছাড়া পরকালীন সাফল্য ও মুক্তির কোন পথ নেই। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন–
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্যকোন ধর্ম অবলম্বন করবে, তার থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে অকৃতকার্যদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ৮৫)

সুতরাং ডাক্তার জাকির নায়েকের উক্ত আহবান ইসলামের প্রতি দাওয়াত নয়, বরং দাওয়াতের নামে ধোঁকা ও প্রতারণার শামিল। কারণ, তার সেই আহবানে সাড়া দিলেও কেউ পরকালীন নাজাত ও সাফল্যের অধিকারী হতে পারবেন না। তাই উক্ত জাকিরী থিউরির আলোকে শত-সহস্র বিধর্মী লোক ইসলাম গ্রহণ করলেও এতে ইসলামের কোন কাজ হবে না। কেননা, তারা প্রকৃত ইসলাম গ্রহণকারী গণ্য হবেন না। বরং তারা জাকিরী ধর্মমত গ্রহণকারী সাব্যস্ত হবেন–যা তাদেরকে প্রকৃত ইসলামে দাখিল করবে না।

অপরদিকে কোন মুসলমান যদি উক্ত জাকিরী ধর্মমত অনুযায়ী অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সাথে সাদৃশ্য বিষয়ে এক হওয়ার জন্য অন্যান্য বিষয়ে ছাড় দেন, তাহলে তিনি মুসলমানই থাকবেন না। কেননা, তখন তার সকল ধর্মের সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয়ে এক হওয়ার জন্য ইসলামের অনেক ঈমানী বিষয় ও ফরজ বিধানকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে (নাউযুবিল্লাহ)। এভাবে উক্ত জাকিরী ধর্মমত মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে বের করতে কত ভয়ানক সুক্ষ্ম চাল হতে পারে–তা ভাবাই যায় না।

তা ছাড়া ডাক্তার জাকির নায়েক উক্ত ‘সাদৃশ্য তত্ত্ব’ দ্বারা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করার পরিবর্তে তাদের নিজেদের ধর্মের দিকেই অগ্রসর করেছেন। ডাক্তার জাকির নায়েকের “ইসলাম ও হিন্দুধর্মের সাদৃশ্য”, “ইসলাম ও খৃস্টধর্মের সাদৃশ্য” ইত্যকার লেকচার শুনে তাদের অনেকে বলেছে, যখন ইসলামের সাথে আমাদের ধর্ম সাদৃশ্যপূর্ণ, সুতরাং ইসলাম গ্রহণ করার কী দরকার? আমরাতো ইসলামের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সঠিক ধর্মেই আছি।”

আবার ডাক্তার জাকির নায়েকের কনফারেন্সে হিন্দুধর্মের ব্যাপক প্রচারণা শুনে অনেক হিন্দু বলছে, ‘হিন্দুধর্ম সম্পর্কে গত ৪০ বছরে যা জানতে পারিনি, সেগুলো এখানে চার ঘন্টায় জানতে পারলাম।’

(দ্রষ্টব্য : ডা. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র, ভলিয়াম নং ২, পৃষ্ঠা নং ২৩২/ ভলিয়াম নং ৪, পৃষ্ঠা নং ৪২১)

সুতরাং এটা ডাক্তার জাকির নায়েকের কত বড় ভ্রান্ত পথের সুক্ষ্ম চাল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে বাদশাহ আকবরের ‘দ্বীনে এলাহী’র আাদলে সকল ধর্মের সমন্বয়ে ভিন্ন একক ধর্মমত সৃষ্টি করে হক ও বাতিলকে একাকার করে ফেলার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *