-মোঃ ইসমাঈল হাসান তানজির
এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, আখিরাত চিরস্থায়ী। এই ঐতিহাসিক সত্য কে উপেক্ষা করে চলার ক্ষমতা পৃথিবীর কারো নেই। ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য আমাদের কত আয়োজন! কত চিন্তা! কত পেরেশানি! কত শত ব্যস্ততা!
ক্ষণস্থায়ী জীবনের স্বাদ, আহ্লাদ, ভোগ-বিলাসিতা, চাকচিক্যময় পথচলা ও জমকালো রঙ্গিন অধ্যায় গুলো একদিন মৃত্যু নামক শব্দের ভেতর দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটবে। জীবন মৃত্যুর এই ঘূর্ণিপাকে আমরা সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য এর প্রতি কখনোই কোন রকমের ভ্রুক্ষেপ না করেই নিজেদের মতো করে জীবনকে পরিচালনা করি।
অথচ দুনিয়ার অল্প ক’টা দিন কোনো না কোনো ভাবে কেটেই যাবে। এটা নিয়ে এত ভাবার কিংবা পেরেশানি হওয়ার কিছু নেই। আমাদের আরেকটা জীবন আছে। যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। সেই জীবনের কথা ভুলে যাওয়া বা সেই জীবনের জন্য প্রস্তুতি না নেয়া অবশ্যই কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
রাসূল সা. এর একটি হাদিস আছে, যেটি একটি মাত্র বাক্যে সমাপ্ত; কিন্তু আমাদের হুঁশ ফেরার জন্য এটিই যথেষ্ট। তিনি বলেন, “তোমরা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিনাশকারী মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।”
জীবন থেকে হতাশা নামক বিষয়টিকে একেবারে বিদায় করে দেয়ার জন্য এই একটি হাদিসই যথেষ্ট। আমরা বেহুশ, একটু থমকে দাঁড়াবারও চেষ্টা করি না। একবারও ভাবি না, আমি কে? কে আমাকে দুনিয়াতে পাঠালো? কেন পাঠালো? কোথায় যাচ্ছি? আমার কী করা উচিত?
একদিন প্রচার হয় অমুক মারা গিয়েছে। কখনো কি ভেবেছেন? আপনার মৃত্যুর পরের পরিবেশটা কেমন হবে? না ভাবেন নি।
অতঃপর শুরু হবে চিরস্থায়ী জীবনের। যে জীবনের শুরু রয়েছে কিন্তু কোন শেষ নেই। সেই চিরস্থায়ী জীবন নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা, ভাবনা বা পেরেশানি কোনোটাই নেই।
অনেকেই বাস্তব জীবনে ধর্মকে মানতে নারাজ। ধর্ম চর্চাকে এগিয়ে যাওয়ার অন্তরায় মনে করেন। ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য ও চেতনার উপর আঘাত করে বহু মনগড়া বক্তব্য ও কথা প্রচার করে থাকেন। তারা কি এই মৃত্যুর পরিধির বাহিরে নিজেদের আবিষ্কার করেছেন? যদি এই মৃত্যুর পরিধির বা আওতার বাহিরে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে না পারেন তবে কেন নফসের ও শয়তানের ধোঁকায় খেয়াল খুশিমতো আখিরাতের জীবনের বা পরকালের জীবনের ঐতিহাসিক সত্যগুলো কে অস্বীকার করেন?
দুনিয়ার জীবনে মানুষের মূল্যায়ন হয় টাকা-পয়সা, শিক্ষা-দীক্ষা, বংশ পরিচয়, ক্ষমতা, পদবী ইত্যাদির মাধ্যমে। কিন্তু চিরস্থায়ী আখিরাতের জীবনের মূল্যায়ন হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্যাটাগরির মার্জিনে। সেখানে টাকা-পয়সা, শিক্ষা-দীক্ষা, বংশ পরিচয়, ক্ষমতা, পদবী এসবের কোন দাম থাকবে না।
সেখানে শুধুমাত্র দুটি মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করেই বিবেচনা করা হবে। যথা-
এক. দুনিয়ার জীবনে যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার হুকুম, আহকাম, আদেশ, নিষেধ মেনে চলে নিজের জীবন কে পরিচালনা করেছে এবং ভালো কাজ করেছে, সেই সকল ব্যক্তিগণ পরম সুখে শান্তিতে থাকবে। তাঁদের জন্য রয়েছে বহু সুসংবাদ, পুরষ্কারের ঘোষণা এবং নাজাতের ফয়সালা।
দুই. দুনিয়ার জীবনে যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার হুকুম, আহকাম, আদেশ, নিষেধ মেনে চলেনি, নিজের জীবন কে খেয়াল খুশিমতো শয়তানি কাজে পরিচালনা করেছে এবং মন্দ ও খারাপ কাজ করেছে, সেই সকল ব্যক্তিগণ বহু দুঃখকষ্ট দুর্দশার মধ্যে নিমজ্জিত থাকবে। তাঁদের জন্য রয়েছে বহু কঠিন আজাব ও শাস্তির ব্যবস্থা।
এই দুই মানদণ্ডের ঐতিহাসিক সারমর্ম হলো ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবনে আমরা যেন মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার হুকুম, আহকাম, আদেশ, নিষেধ মেনে চলি এবং পুণ্য কাজ অর্থাৎ ভালো কাজ গুলি করি। ইহাতে আমাদের সকলের জন্যই রয়েছে মুক্তি ও নাজাতের ফয়সালা।
মাশাআল্লাহ.. অতি সুন্দর উপস্থাপন। চালিয়ে যাও তোমার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল।
জাযাকাল্লাহ খাইর