মুফতি সাঈদ আল হাসান
——————————————
ইসলামী বা অন্যান্য বড় বড় পেজগুলো হ্যাক করার এক মহোৎসব শুরু হয়েছে। দুঃখজনকভাবে হ্যাকের এই তালিকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেইজের সাথে আওয়ার ইসলামের ফেসবুক পেজটিও পড়ে গেছে।
আপনার পেজটিও হ্যাক হতে পারে যেকোনো সময়। সময় থাকতে এখনই সতর্ক হওয়া অত্যাবশ্যক।
হ্যাকটা হয় কিভাবে? চলুন, কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি-
কিছুদিন আগে মাসিক আদর্শ নারীর সম্পাদক, আমার বাবা মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদীর ওয়াটস্অ্যাপ নাম্বারে একটি বিজনেস একাউন্ট (+1 (989) 533-4893) থেকে মেসেজ আসে, যেখানে বলা হয় যে, তারা আমাদের পেইজে বড় বড় কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচার করতে চাচ্ছে। প্রতিটি বিজ্ঞাপনের বিনিময়ে ৬০০ ডলার (প্রায় ৫৫০০০ টাকা!) প্রদান করা হবে।
আব্বু প্রথমদিকে বিষয়টি বুঝতে পারেন নি। তিনি ওই লোকের কথামত যা যা করতে বলা হচ্ছিল, করে যাচ্ছিলেন। আমার কাছেও করণীয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিলেন। শোনা মাত্রই বুঝতে পারলাম, ঘাপলা আছে।
জাস্ট এড পাবলিশ করবার বিনিময়ে কেউ গুণে গুণে ৫৫০০০ টাকা দিয়ে দেবে! টাকা কি এতই সস্তা?! ব্যাপারটা একই সাথে অবিশ্বাস্য ও অসম্ভবও বটে।
একটা পর্যায়ে আব্বু ওই লোকটাকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
আমি লোকটাকে বেশ কয়েকবারই জিজ্ঞেস করলাম, তারা যে এতগুলো টাকা পেমেন্ট করবে, এর গ্যারান্টি কী?
সে আমাকে কোন গ্যারান্টি বা প্রমাণ পেশ করতে পারে নি।
বললাম ওয়েবসাইটের লিংক দিন, যেখানে আপনাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। সে আমাকে boredpanda সাইটের লিংক দিল, যা আস্ত একটা ব্লগ সাইট। ব্লগ ছাড়া কিছুই নেই। সেখানে এড নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত কোন তথ্যও পেলাম না।
তারপর ভাবলাম, আচ্ছা একটু বাজিয়ে দেখা যাক। আমি তার প্রস্তাবে রাজি হলাম।
সে আমাকে তার বানানো একটি বিজনেস এড ম্যানেজারে এমপ্লয়ি হিসেবে রিকোয়েস্ট পাঠাল। কৌশলে এড ম্যানেজারের এডমিন হিসেবে Facebook Team নামক একটি আইডি রেখেছিল। ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল যে, ফেসবুক টীম আপনাকে তাদের এড একাউন্টের দায়িত্ব দিতে চাইছে!
রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার পর যে পেজটিতে বিজ্ঞাপন দেয়া হবে, সেটি তার বিজনেস ম্যানেজারে যুক্ত করতে বলল। আমি যাতে পেজ যুক্ত করতে পারি, সে জন্যে আমাকে এড একাউন্টের এডমিন বানানো হল। আমার সন্দেহ তখন থেকেই গাঢ় হয়।
তার বানানো বিজনেস ম্যানেজারে আমি যদি আমার পেজ এড করে দেই, তাহলে বিজনেস ম্যানেজারের সুবাদে সে পেজের সম্পূর্ণ এক্সেস পেয়ে যাচ্ছে। পেজ এড করার পর সে যদি আমাদেরকে এড একাউন্ট থেকে রিমুভ করে দেয়, আমরা পেইজের সম্পূর্ণ এক্সেস হারাবো!
তবুও আমি ১০০০ লাইকের একটা পেজ পরীক্ষামূলক এড করি। সে তাতে রাজি না। তার দরকার আমাদের প্রায় দেড় লাখ লাইক ওয়ালা মাসিক আদর্শ নারী পেজ!
ততক্ষণে আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে।
আমি তখনই আওয়ার ইসলামের ডেপুটি এডিটর জনাব আব্দুল্লাহ তামিমকে কল দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হলাম। আওয়ার ইসলামের পেজটা এভাবেই হ্যাক হয়েছে। তাদের এডমিন প্যানেল রিস্টোর করা গেলেও বিজনেস একাউন্ট থেকে পেজটা মোছা সম্ভব হয়নি, যেটা স্বাভাবিক। পেইজের এক্সেস এখনও বিজনেস ম্যানেরজারের হাতে রয়েছে। আর বিজনেস ম্যানেজারে হ্যাকার বাপু সুন্দর মতোই রাজ করছে।
কাজেই, সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে, এক্সপার্ট কারো সাথে পরামর্শ ছাড়া হুটহাট লোভে পড়ে কোন ডিসিশন নেবেন না। প্রয়োজনে এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করুন। প্রযুক্তি যেমন আগাচ্ছে, নিত্য নতুন চুরির সিস্টেমও বের হচ্ছে। কখন কোথায় কোন্ ফাঁদে পড়ে গিয়ে সর্বস্ব হারাবেন, টেরও পাবেন না।
পরিশেষে আল্লাহ সবাইকে হিফাজত করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।
সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রচুর শেয়ার করুন।
মূল পোস্টের লিংক https://www.facebook.com/said.al.hasan/posts/4651498994943581