তুরস্কে আবারও ক্ষমতায় ‘এরদোগান’, ইসলামের পক্ষের জয়


খেলাফতের শেষ সূর্য স্তিমিত হয়েছিল যে দেশে, সেই দেশের মাঠ-ময়দান আবারো মুখরিত হচ্ছে ইসলামের পক্ষের জয়ধ্বনিতে।

গতকাল ২৪ জুন ছিল খেলাফতে ওসমানীর দেশ তুরস্কে প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় নির্বাচন। সাধারণভাবে একে একটি ভোট যুদ্ধ মনে হলেও, পারতপক্ষে এই নির্বাচনটা ছিল ইসলামী ভাবধারা ও খেলাফত ধ্বংসকারী ইসলামবিদ্বেষী কামাল আতাতুর্কের কথিত সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে লড়াই।

এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তুর্কী জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছিল, তারা কি ইসলামী ভাবধারার রাষ্ট্রের পক্ষে থাকবে নাকি কামাল আতাতুর্কের সেকুলারিজমের নামে ইসলামবিদ্বেষী আদর্শকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে মেনে নিবে।

চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেলো, তুরস্কের জনগণ তাদের আদর্শ হিসেবে ইসলামী ভাবধারাকেই নির্বাচন করেছে।

এবারের নির্বাচনে ভোট যুদ্ধ হয়েছে মূলত ২০০৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ইসলামী ভাবধারার রাজনৈতিক দল একে পার্টির রজব তাইয়্যেব এরদোগান ও কামাল আতাতুর্কের উত্তরাধিকারী বামপন্থী মোহাররেম ইনজের মধ্যে।

তারা দু’জন ছাড়াও আরো কয়েকজন প্রার্থী ছিলেন নির্বাচনে, তবে চূড়ান্ত লড়াইটা হয় এই দুই আদর্শিক নেতার মধ্যেই।

সর্বশেষ খবরে দেখা যায়, প্রায় ১০০ শতাংশ কেন্দ্রের ফলাফলের মধ্যে ৫৩ শতাংশের কিছু কম ভোট পেয়েছেন এরদোগান। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাররেম ইনজে পেয়েছেন ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। অন্য চার প্রার্থীর সবার প্রাপ্ত ভোট ৮ শতাংশের নিচে।

তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের কেউ ন্যূনতম পঞ্চাশ শতাংশ ভোট না পেলে, নির্বাচন গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। প্রথম দফায় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দ্বিতীয় দফায়। প্রথম দফা নির্বাচনের পনের দিন পর অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় দফা নির্বাচন। তবে ইতোমধ্যেই পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে গেছেন ইসলামপন্থীদের নেতৃত্ব দেয়া জনপ্রিয় নেতা রজব তাইয়্যেব এরদোগান। তাই দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকছে না।

এদিকে একই সাথে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনেও বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে এরদোগানের দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির নেতৃত্বে থাকা জোট। পার্লামেন্ট নির্বাচনে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে একে পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস এলায়েন্স অর্ধেকের বেশি আসনে জয়লাভ করেছে।

এর মধ্যে এরদোগানের দল একে পার্টি এককভাবেই পেয়েছে ২৯৩টি আসন। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি পেয়েছে ১৪৬টি আসন। আর জোটগতভাবে একে পার্টির নেতৃত্বে থাকা জোট পেয়েছে ৩৪৩টি আসন।

এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন একটি যুগে প্রবেশ করল তুরস্ক। গত বছর এক গণভোটে তুরস্কের জনগণ প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা অর্জনের পক্ষে রায় দেয়। এর ফলে দেশটির শাসন ক্ষমতা আরো জোরদার হবে বলে দাবি করছেন এরদোগান ও তার দল একে পার্টি। এই ক্ষমতা অর্জনের ফলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে।

এ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বেশকিছু ক্ষমতা পেয়েছেন এরদোগান। এখন থেকে তিনি মন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্টসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি নিয়োগ দিতে পারবেন। দেশের আইনি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতাও পেয়েছেন তিনি। এছাড়া জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা ও প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করার ক্ষমতা পেলেন এরদোগান।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *