মাহফিলে মহিলা বক্তার ওয়াজের ব্যাপারে এখনই সচেতনতা ও প্রতিরোধ জরুরি

ওলিউর রহমান
——————-

শীত মওসুমে বর্তমানে বাংলাদেশের শহরে-গ্রামে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসব ওয়াজ-মাহফিলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বক্তারা শ্রোতাদের ধর্মীয় নানা বিষয়ের নসিহত করেন। সাধারণ পর্যায়ের মানুষ এসব ওয়াজ মাহফিল থেকে অনেক উপকৃত হয়ে থাকেন। সামান্য কিছু অসঙ্গতির কথা বাদ দিলে শীত মওসুমের ওয়াজ-মাহফিল বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠছে।

গুটিকয়েক ওয়ায়েজ বা কোথাও কোথাও মাহফিলের আয়োজন নিয়ে মানুষের কিছু আপত্তির পাশাপাশি সম্প্রতি ওয়াজ-মাহফিল কেন্দ্রিক একটি ফিতনার প্রকাশ হতে শুরু করেছে। দেখা যাচ্ছে, গ্রাম-গঞ্জের কোথাও কোথাও সমবেত মহিলা শ্রোতাদের উদ্দেশে মাইকে উঁচু আওয়াজে বয়ান করছেন মহিলা বক্তা। মহিলা বক্তাদের এসব বক্তব্য আবার অডিও বা ভিডিও করে প্রচারও করা হচ্ছে। কথিত এসব মহিলা ওয়ায়েজদের মানুষকে নসিহত করার বিষয়টি নিয়ে দ্বীনদার সচেতন মহল উদ্বিগ্ন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে একত্র করে পর্দার আড়াল থেকে নসিহত করতেন। উম্মাহাতুল মু’মিনীন বা মহিলা সাহাবিদের কাছে অপরাপর মুসলিম নারীরা এসে দ্বীনের তালিম নেওয়ার বিষয়ও ‘আছারের’ আলোকে প্রমাণিত। তবে এসবই হত শরিয়তের পর্দা ও সতরের বিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখে। যেমন এখনও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাজের কোনো বিদ্বান মহিলার কাছে এলাকার অন্যান্য নারীরা দ্বীনের খুঁটিনাটি জানতে যাওয়ার প্রচলন আছে। তাবলীগ জামাতের মাস্তুরাতে যেমন হয়ে থাকে।

তবে শামিয়ানা টানিয়ে পুরুষদের মাহফিলের মতো যাবতীয় আয়োজন করে উচ্চকণ্ঠে সমবেত মহিলাদের ‘ওয়াজ-নসিহত’ করার ধারাটি বাংলাদেশে নতুন। ইসলাম এটাকে সমর্থন তো করেইনি বরং গোনাহের কাজ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

মাহফিলে মহিলা বক্তাদের ওয়াজ নসিহত প্রসঙ্গে কথা বলা হয় রাজধানীর জামিয়া হুসাইনিয়া আরজাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল, বেফাকুল মাদারিসের সহ-সভাপতি মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, মহিলাদের গোটা দেহের মতো তাদের কণ্ঠও সতর। পর-পুরুষের সামনে যেমন দেহের কোনো অংশ অনাবৃত করা যায় না তেমনি বিশেষ সমস্যা না হলে পরপুরুষের সামনে মহিলার কণ্ঠ প্রকাশ করাও নিষিদ্ধ। তাই মাহফিলের মঞ্চে মাইকে উচ্চ কণ্ঠে মহিলাদের ওয়াজ করার বিষয়টি শরিয়ত কখনোই সমর্থন করে না। ওয়াজ-মাহফিলে পুরুষের পাশাপাশি বয়ান শোনার জন্য মহিলাদের জন্য যে ব্যবস্থা করা হয় নানা অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক আলেম তো সেটা নিয়েও আপত্তি করেন সেখানে মহিলার বক্তা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না।

মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া বলেন, পরিবার বা স্বামীর অনুমতিক্রমে শরিয়তে পর্দার যে বিধান তার প্রতি পূর্ণ লক্ষ্য রেখে ঘরোয়াভাবে নারীদের তালিম বিষয়ক যে বৈঠক হয় সেটা সম্পূর্ণই বৈধ। ইসলামের শুরু যামানা থেকেই এর প্রচলন রয়েছে। তবে এটার সুযোগে মহিলাদের মঞ্চের বক্তা হয়ে ওঠার যে ধারা সম্প্রতি বাংলাদেশে শুরু হয়েছে তা খুবই মন্দ কাজ। দেখা যায়, মহিলারা সুর দিয়ে ওয়াজ করে। সেগুলো আবার প্রচারও করা হয়। এটা মারাত্মক অন্যায় এবং গোনাহের কাজ।

ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন করা হয় মানুষকে নসিহত করার জন্য। কিন্তু মহিলাদের কথিত ওয়াজের মাধ্যমে তো দ্বীনের নামে উলটো বদদ্বীন সয়লাবের আশংকা করেন এই বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন।

মাহফিলে ‘মহিলা বক্তা’র উপস্থিতি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে মন্তব্য করে মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া আরও বলেন, ওয়াজ-মাহফিলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে দ্বীনের একটা আবহ তৈরি হয়েছে সেটাকে ধরে রাখা উচিত। ছোট-খাটো অসঙ্গতিগুলো শোধরানো উচিত। আর মাহফিলে মহিলা বক্তার ওয়াজের ব্যাপারে এখনই সচেতন হওয়া জরুরী।

2 thoughts on “মাহফিলে মহিলা বক্তার ওয়াজের ব্যাপারে এখনই সচেতনতা ও প্রতিরোধ জরুরি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.