ঈদুল ফিতরের পালনীয় সুন্নাতসমূহ ও বর্জনীয় বিষয়

মুফতী-আবুল-হাসান-শামসাবাদী
মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী

ঈদুল ফিতরে সুন্নাতসমূহ পালন ও বর্জনীয় কাজসমূহ থেকে দূরে থাকা কর্তব্য


ঈদ উৎসব মুসলিম উম্মাহর জন্য মহান আল্লাহর সওগাত স্বরূপ। ঈদুল ফিতর দেয়া হয়েছে দীর্ঘ এক মাস রোযা পালন করার পর সেই খুশীতে আনন্দ উৎসব হিসেবে এবং ঈদুল আজহা দেয়া হয়েছে মহান আল্লাহর বিশেষ ওয়াজিব কুরবানীর বিধান পালনের আনন্দ ‍উদযাপনে। তাই ঈদের আনন্দ দ্বীনী পবিত্রতায় সমৃদ্ধ।

সুতরাং ঈদ উদযাপনে আমাদের বিশেষ কর্তব্য রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই পালন করতে হবে। নিম্নে ঈদুল ফিতরের সুন্নাত আমল ও বজর্নীয় বিষয়সমূহ থেকে দূরে থাকার কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে।

 

ঈদুল ফিতরে নিম্নোক্ত সুন্নাতসমূহ পালন করা কর্তব্য :

১। অন্য দিনের তুলনায়  আগে আগে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। (দ্রষ্টব্য : সুনানে বাইহাকী কুবরা, হাদীস নং ৬১২৬)

২। ভালভাবে গোসল করা। (দ্রষ্টব্য : সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৩১৫)

৩। শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা গ্রহণ করা। (দ্রষ্টব্য : বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৯৪৮)

৪। সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৪৮)

৫। সুগন্ধি ব্যবহার করা। (দ্রষ্টব্য : মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ৭৫৬০)

৬। ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কোন মিষ্টিদ্রব্য (যেমন, খেজুর বা সেমাই) গ্রহণ করা। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫৩)

(তবে ঈদুল আজহাতে কিছু না খেয়ে নিজের কুরবানীর গোশত দ্বারা আহার গ্রহণ করা মুস্তাহাব।)

৭। সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (দ্রষ্টব্য : সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস নং ১১৫৭)

৮। ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। (দ্রষ্টব্য : সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং ১৬৯৪)

৯। ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপারগতায় মসজিদে আদায় না করা। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৫৬)

১০। এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসা। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৮৬)

১১। পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। (দ্রষ্টব্য : সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস নং ১১৪৩)

১২। ঈদগাহে যাওয়ার সময় নিম্নস্বরে নিম্নোক্ত তাকবীর পাঠ করা :

اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَاإِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الحَمْدُ

(আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।)

(ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর পড়া এবং ঈদুল আজহায় ঈদগাহে যাবার সময় পথে

এ তাকবীর আওয়াজ করে পড়া সুন্নাত। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ১১০৫)

 

ঈদের দিনে বর্জনীয় বিষয়সমূহ থেকে দূরে থাকা আবশ্যক

ঈদ মুসলিমজাতির গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। মুসলিম জাতির রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি। ঈদের মত পবিত্র একটি দিবসে মুসলিম সংস্কৃতির চর্চা করাই বিবেকের দাবি।

কিন্তু ঈদ উৎসব এলে অনেক স্থানে আমরা লক্ষ্য করি ভিন্ন চিত্র। অপসংস্কৃতির অবাধ প্রবাহে পবিত্র এ উৎসবের মান চরমভাবে ক্ষুন্ন করা হয়।

নিম্নে ঈদ উৎসবকেন্দ্রিক কিছু বর্জনীয় বিষয়ে মুসলমানদের কর্তব্য তুলে ধরা হলো–

১। বিজাতীয় আচার-আচরণ ও সভ্যতা সংস্কৃতির প্রদর্শন না করা।

২। নারী-পুরুষ পারস্পারিক একে অপরের বেশ-ভূষা ধারণ না করা।

৩। নারীদের বেপর্দাভাবে যত্রতত্র খোলামেলা বা উন্মুক্তভাবে বিচরণ না করা।

৪। গান-বাজনা গাওয়া, বাজানো, শ্রবণ ও অশ্লীল সিনেমা-নাটক থেকে দূরে থাকা।

৫। অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অনর্থক সময় নষ্ট না করা।

৬। সময়মতো (পুরুষের জামা‘আতের সাথে)  নামায আদায়ে অলসতা না করা।

৭। অপব্যয় ও অপচয় না করা।

৮। হারাম খাদ্যদ্রব্য তথা ধুমপান, মাদক ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা।

৯। জুয়া খেলা ও আতশবাজি ফুটানো থেকে দূরে থাকা।

১০। নিজের আনন্দের মোহে মানুষকে কোনভাবে কষ্ট না দেয়া।

১১। শরীয়তবিরোধী আনন্দ-ফুর্তিতে মত্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা।

১২। বিনোদন স্পটগুলোতে নারী-পুরুষের অবাধে একত্রিত না হওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *