মুহাম্মমদ ফয়জুল্লাহ
আলেম ও লেখক
হঠাৎ ভোরে শিরশিরে বাতাসে দেহ-মন শিউরে উঠছে। খুব সকালে মৃদু কুয়াশায় ঢেকে গেছে সারা মাঠ। সোনালী রোদে ঘাসের ডগায় শিশিরের ঝিকিমিকি। তার মানে এসে গেছে শীত, মুমিনের বসন্তকাল।
শীত অধিকাংশ মানুষেরই প্রিয় ঋতু। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কাছে এ মৌসুম আরও প্রিয়। কেননা অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে ইবাদত বেশি করা যায় এবং সহজভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। তাই সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, (الشتاء ربيع المؤمن) ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১১৬৫৬)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামায আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোযা রাখতে পারে।’ (শুআবুল ঈমান লিল বায়হাকি : ৩৯৪০)
হযরত ওমর (রা.) বলেন,
قال عمر رضي الله عنه : الشتاء غنيمة العابدين .
শীতকাল ইবাদতকারীদের জন্য (ইবাদত করার) চমৎকার মৌসুম। (বিশুদ্ধ সনদে আবু নুআইম)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন,
قال ابن مسعود رضي الله عنه : مرحباً بالشتاء تتنزل فيه البركة، ويطول فيه الليل للقيام، ويقصر فيه النهار للصيام .
শীতকালকে স্বাগতম । এ সময় (আল্লাহর পক্ষ থেকে) বরকত নাযিল হয়। রাত হয় লম্বা। তাই তাহাজ্জুদ পড়া সহজ। দিন হয় ছোট। তাই রোযা রাখা সহজ। (লাতা-ইফুল মাআরিফ, আল্লামা ইবনে রজব)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) লোকদের বলতেন,
ألا أدلكم على الغنيمة الباردة ، قالوا : بلى، فيقول : الصيام في الشتاء
“আমি কি তোমাদেরকে শীতকালীন গনীমতের সন্ধান দিব না? তারা বলতো, অবশ্যই! অতঃপর আবু হুরায়রা (রা.) বলতেন, শীতের মৌসুমে রোযা। (সুনানে তিরমিযি, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।)
তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন,
قال الحسن البصري رحمه الله : نعم زمان المؤمن الشتاء، ليله طويل يقومه، ونهاره قصير يصومه ، ولذا بكى المجتهدون على التفريط – إن فرطوا – في ليالي الشتاء بعدم القيام، وفي نهاره بعدم الصيام .
“একজন মুমিনের জন্য শীতকাল ইবাদত করার চমৎকার মৌসুম। শীতকালে রাত লম্বা হয়। এতে সে (সহজেই) তাহাজ্জুদ পড়তে পারে। দিন ছোট হয়। ফলে (সহজেই) রোজা রাখতে পারে। এজন্যই (পূর্ববর্তীদের মধ্যে) যাঁরা ইবাদত-বন্দেগিতে কঠোর পরিশ্রম করতেন তাঁরা যদি (কোনো কারণে) এ সময়ের রাতগুলোতে তাহাজ্জুদ না পড়তে পারতেন এবং দিনের বেলা রোযা না রাখতে পারতেন তাহলে এর জন্য তাঁরা কাঁদতেন।”
রাব্বুল আলামীন এই ঋতুতে বেশি বেশি ইবাদত করে চিরস্থায়ী জীবনের জন্য সম্বল করে রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।